ইদুর মারেন, কৌশলে!
তেলেপোকা মারেন, কৌশলে!
চারপোকা মারেন, কৌশলে!
মাছি মারেন, কৌশলে!
প্রেম করেন, কৌশলে!!
এমনি করে আপনি রাস্তায় ঘাটে চলার সময়ে কানে আওয়াজ আসলে আপনি চমকে দাঁড়াতে পারেন! হয়ত যে সংলাপ গুলো দিয়ে যাচ্ছেন তাকে দেখার ইচ্ছা আপনার হতেই পারে। আপনার বাসায় নিশ্চয় ইদুর, তেলেপোকা, চারপোকা, মাছি আছেই! তবে প্রেম না থাকলেও থাকতে পারে!
হ্যাঁ, আমার আজকের বিচিত্র পেশার মানুষটা এভাবেই রাস্তায় হ্যান্ড মাইক নিয়ে বলে যান, যা যা প্রয়োজন হয় তা তার কাছ থেকে কিনে নিয়ে চলেন! আমি বেলাল খান (আসল নাম নয়) এর কথা আজ বলছি। বেলাল খানের সাথে আমার দেখা কয়েকদিন আগে, আমি বাজারে বের হয়েছিলাম। বেলালের কথায় আমি থেমে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার বাসায় কিছু ইদুর আসে যায়, তাদের আমার কৌশলে মারা দরকার!
বেলালের সাথে আমি রাস্তায় দাড়িয়েই কথা বলি। ফখরুদ্দিনের তত্তাবধায়ক সরকারের আমলে একদিন বড় ভাইকে র্যাব ধরে নিয়ে যায়, সেই থেকেই এই জীবনের পথ চলা। নওগাঁ থেকে একটা অভাবের সময় এই ঢাকা শহরে আসতে হয়েছিল। বড় ভাই গিয়েছিলো পাওনা টাকা আদায়ে আর পথে র্যাব ধরে নিয়েছিল, পুরো পরিবার পড়ে যায় অভাবে। একদিন এক বন্ধু কথা মত পরিবার বাঁচাতে ঢাকা শহরে এসে কি করবে, কোথায় যাবে ভাবতে ভাবতে এক বড় ভাইয়ের সাথে দেখা হয়ে যায়। তার কাছে কয়েক দিন থাকার পর তিনি একটা কাজ জুটিয়ে দেন। মাটি কাটার কাজ, বনশ্রী এলাকায়। কিন্তু প্রথম দিন মাটি কেটে, প্রায় অজ্ঞান হয়ে যাবার যোগাড়! মাটি কাটা অনেক কঠিন কাজ, ফলে কয়েকদিন অসুস্থ্য থাকার পর একটা হাল্কা কাজ খুজতে থাকেন। পোকা মাকড় দমনের কিছু শিক্ষা আগে জানা ছিল, মেসের এক বড় ভাই তাকে নিয়ে গেলেন শনির আখড়ায়, সেখান থেকে এক দোকান থেকে একটা ব্যাগে কিছু মালামাল কিনে নিলেন এবং সে গুলো ঢাকা শহরে হেটে হেটে বিক্রি করতে লাগলেন। প্রথম দিন ভাল লাভ হল, মনে অনেক খুশি আসলো। ব্যস, সেই থেকেই এই পেশা। আজ লেগে আছেন অনেক বছর!
প্রতিদিন লাভ হয় তিন/চার শত টাকা, ইচ্ছা মতন নানা এলাকায় ঘুরে বেড়ান! হাতের হ্যান্ড মাইকের কথা জিজ্ঞেস করতেই বললেন এক বড় ভাইকে বছর তিনেক আগে এটা সাড়ে সাত শত টাকায় সদরঘাট থেকে কিনে দিয়েছেন। এটা ব্যাটারী চালিত, কাঁধে ঝুলানো ব্যাগের মধ্য মালামালের সাথে এই ব্যাটারী থাকে।
এই ব্যবসা করে বিয়েও করেছেন, একটা মেয়ে আছে। মাস দুয়েক পর পর বাড়ি যান, কয়েক সপ্তাহ থেকে ফিরে আসেন। এই তো এভাবে জীবন চলছে। বেলালকে আমি এত কথা জিজ্ঞেস করছি এবং ফাকে ছবি তুলতে মোবাইল বের করতে মনে হল বেলাল ভয় পেয়েছে। আমি তাকে অভয় দেই এবং বলি আপনার মত খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য আমি একটা সিরিজ লিখি, এতে বেলাল কিছুটা অভয় পেল এবং আমাকে বলল, আপনি কি সাংবাদিক! আমি এক হাত হেসে নিতেই, বেলালের মুখটা হাল্কা হয়ে এল। আমি জানালাম, আপনারাই এই দেশের শক্তি, আপনারা চুরি ডাকাতি ঘুষ ছিনতাই করেন না, নিজের কষ্টের, পরিশ্রমের টাকায় ভাল খেয়ে থাকেন, আপনারাই আমাদের উৎসাহ।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি জানতে চাইলে, হেসে বলেন! এর চেয়ে আর সহজ কাজ কি! আমি যেহেতু শক্ত কাজ করতে পারি না, তাই এটা নিয়েই যত দিন পারি চালিয়ে যাব।
আমি বেলালের আরো আরো সাফল্য কামনা করি। বেলাল এগিয়ে চলুক।
বিচিত্র এই দেশ, বিচিত্র এই দেশের মানুষ, কত কি বিচিত্র পেশা! তবে সবই জীবিকার টানে!
আমি বেলালকে রেখে বাজারের দিকে পথ বাড়াই! আমার কানে বাজতে থাকে, বেলালের সেই ভেকাল!
ইদুর মারেন, কৌশলে!
তেলেপোকা মারেন, কৌশলে!
চারপোকা মারেন, কৌশলে!
মাছি মারেন, কৌশলে!
প্রেম করেন, কৌশলে!!
(আমি মনে মনে হাসি, প্রেম করতে আবার কি কৌশল, যত কৌশলতো পরকীয়া প্রেমে!)
বিচিত্র পেশাঃ ৯
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৪১