আজকের বিচিত্র পেশার মানুষটার নাম নবী হোসেন, বাড়ি ভৈরবে। বছর কয়েক আগে ঢাকা এসেছিলেন একটা ভিন্ন পরিস্থিতিতে। বিদেশ যাবার জন্য তিনি টাকা দিয়েছিলেন এক রিক্রুটিং অফিসে এবং তখন তিনি পেশায় ছিলেন একজন দর্জি। ভৈরবে তিনি কাপড় সেলাইয়ের কাজ করতেন। ঢাকা এসে তিনি বুঝতে পারলেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন, সেই টাকা গুলোর কিছুটা মার গেল, কিছু পেয়েছেন, ভিসা না পাওয়াতে তিনি আর বিদেশ গেলেন না, সেই থেকেই ঢাকায় পড়ে রইলেন।
হ্যাঁ, ইনি হচ্ছেন নবী হোসেন। বছরে এখন প্রায় ৬ পদের ব্যবসা করেন। দুই মাস পরে পরে একটা ব্যবসা পাল্টান এবং এটা করেন সিজন ও যা বিক্রি করেন তার উপর বা পাওয়ার ভিত্তি করেই। বর্তমান বা এই দুই মাস তিনি ভুট্টা পুড়িয়ে বিক্রি করেন। তবে আমি নবী ভাইকে বেশি ভুট্টা বিক্রি করতেই দেখেছি বলে জানালে তিনি আমাকে রাস্তার অপর পাড় দেখিয়ে জানান ওই পাড়ে বসি যখন তখন হয়ত আমাকে দেখেন না। হ্যাঁ, আমি রাস্তার ওই পাড়ে কম যাই। অফিস থেকে বের হয়ে এই পাড় দিয়েই চলে আসি।
ভুট্টা বিক্রিটা একটু শীত পড়লে বেশি হয় বলে জানালেন, তা ছাড়া কিছু বাঁধা ধরা কাষ্টমার আছেন যারা ভুট্টা পোড়া খেতে পছন্দ করেন, তারা তার নিয়মিত কাষ্টমার। এছাড়া কিছু কাষ্টমার আছেন যারা কাঁচা ভুট্টা কিনে নিয়ে বাসায় সিদ্ধ করে বা নানান রান্নায় ব্যবহার করেন, এই কাষ্টমারাও বেশ ভাল।
কাওরান বাজার থেকে কাঁচা ভুট্টা ও কয়লা যোগাড় করে থাকেন। সাধারণত সকাল বেলা তেমন কাজ থাকে না, এই সময়েই কয়েক ঘন্টার জন্য বাজারে যান। বিকেল ৪/৫টা থেকেই দোকান সাজাতে শুরু করেন। বিক্রিটা সাধারণত ৬/৭টার দিকে ভাল হয়। কিছু পুড়িয়ে রাখেন এবং কিছু কাষ্টমার দেখিয়ে দিলেই পোড়ান। পুড়িয়ে রাখা গুলো দৌড়ের উপর কাষ্টমারদের জন্য, এরা অপেক্ষা করতে চান না বা পারেন না! তবে বেশির ভাগ কাষ্টমার পছন্দ করে ভুট্টা পুড়াতে দেন। দাম মোটামুটি ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা পার পিস।
এছাড়া আর এক ধরনের ভুট্টা আছে খুব কচি, নরম। এটাও ভাল চলে। এটা সাইজ ভেদে ২০/২৫ টাকাত বিক্রি করেন। ভূট্টা পোড়াতে সামান্য লবন পানি ব্যবহার করতে হয় এবং আগুনের তাপে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পোড়াতে হয়। খাবার সময় কেহ চাইলে সামান্য বিট লবন ভূট্টার উপর ছিটিয়ে দেয়া হয়।
এই মালিবাগ, মৌছাক, শান্তিনগর, বেইলী রোড়, কাকরাইল এলাকায় আর কেহ এমন ভুট্টা বিক্রি করে না বলে তিনিই একমাত্র এবং এইজন্য বিক্রিবাট্টা ভাল। দিনে খরচা বাদ দিয়ে শ'চারেক লাভ থাকে। সুযোগ পেলে বাড়িতে টাকা পাঠান এবং চলে যান। স্ত্রী ও ছেলে মেয়ে আছে তাদের খরচ যোগাড় করতে হয়। তবে বিক্রি ভাল না হলে বা আবহাওয়া খারাপ হলে সেদিন মাটি হয়ে যায়। আগের দিনের লাভ দিয়েই চলতে হয়।
বাজার করা, ব্যবসা সাজানো, এবং সারাক্ষন কাজের মধ্যে লেগে থাকার একটা আনন্দ আছে বলে জানালেন। বেকাররা সময় কি করে কাটায় তা তিনি ভাবতে পারেন না!
হাসতে হাসতে বললাম, টেইলারিং ব্যবসায় ফিরে যাবেন না, নবী ভাই জানালেন এখন আর ফিরে যাবার উপায় নেই, চোখে এখন আর সুই সুতা দেখি না!
ছবি তোলা এবং ব্যবসার ঘটনা অনলাইনে প্রকাশ করার কথা জানালে, হেসে ফেললেন! এই দুনিয়াতে আমি নাকি তার প্রথম ছবি তুলতে চেয়েছি! আমিও না হেসে পারি নাই।
নবী ভাই এগিয়ে চলুন। আপনাদের সততা এই জাতি একদিন মুল্যায়ন করবেই।
বিচিত্র এই দেশ, বিচিত্র এই দেশের মানুষ, কত কি বিচিত্র পেশা! তবে সবই জীবিকার টানে!
বিচিত্র পেশাঃ ৮
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:১৩