somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল আছে যারা মূলত ব্যালেন্স করে রাজনীতি করতে চায়। এটা আসলে কোনোদিনই সম্ভব না। বাংলাদেশে যদি প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতি কেউ করে থাকে সেটা হলো আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। একজন রাজনীতি করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা (মিথ্যা কথা) নিয়ে আর জামায়াত রাজনীতি করছে ধর্মীয় চেতনা, মুসলিম জাতীয়তাবাদ এবং সর্বশেষ জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে।

বিএনপির জাতীয়বাদী রাজনীতির গোয়া-মাথা কিছুই বুঝি না। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ বললেও বিএনপি আসলে একটি হাইব্রিড রাজনৈতিক দল। তাদের আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশের মেজরিটি মানুষ জুলাই আন্দোলনের পর থেকে কনফিউজড। কেন কনফিউজড হবে না বলুন? একদিকে মিরজা ফখরুল বাউলদের উপর হামলার প্রতিবাদ জানান, অন্যদিকে নোয়াখালীতে বিয়েবাড়িতে গান-বাজনা করার শাস্তিস্বরূপ বিএনপির নেতারা একটি গরীব পরিবারকে বেত্রাঘাত করে। পরিবারটি থেকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে।

এবার আসি আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতে ইসলামীর আলোচনায়। এই দুইটি দলের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ বহু পুরাতন হলেও ১৯৭১ সালে সেটা তীব্র আকার ধারণ করে। জামায়াতে ইসলামীর লক্ষ্য ছিলো অখণ্ড পাকিস্তান রক্ষা আর আওয়ামী লীগের মিশন ছিলো বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি নতুন রাষ্ট্র গঠন করা। পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের ২৫শে মার্চ গণহত্যায় মোটামুটি ক্লিয়ার হয়ে গিয়েছিলো যে তারা মূলত আওয়ামী লীগ, বাম কিংবা কমিউনিস্ট, হিন্দু এবং বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে পূর্ব পাকিস্তানের যে লালিত স্বপ্ন একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র সেটা দুঃস্বপ্নে পরিণত করে দেওয়া। এই কাজে তারা জামায়াতে ইসলামীকে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছিলো।

জামায়াতে ইসলামীর কতিপয় সদস্য যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। জামায়াতে ইসলামীকে পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের পাপেট সরকার বানানোর মিশন ছিলো। অর্থাৎ জামায়াত ওতপ্রোতভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিল, বাঙালি নিধনে সহায়তা করেছিল মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করে। এগুলো সবকিছুই ফৌজদারি অপরাধের অন্তর্ভুক্ত। আর ফৌজদারি অপরাধ কখনো তামাদি হয় না।

জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার উপর হামলার বিচার চলছে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে। এখানে আসলে আওয়ামী লীগের বিচার করা হচ্ছে যা ফৌজদারি অপরাধের অন্তর্ভুক্ত। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রায় দেওয়া হচ্ছে। এমনকি সুদূর লন্ডনে থাকা টিউলিপ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। আবার পিলখানা হত্যাকাণ্ডের জন্য গঠিত তদন্ত কমিশনের রিপোর্টে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মী এবং সভানেত্রীর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এতে দল হিসাবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে।

দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালকে সহী ট্রাইবুনাল হিসেবে ধরা হলে জামায়াতের নেতাদের বিচারের রায় সঠিক ছিলো মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। আবার এখন যে আওয়ামী লীগের বিচারের সাজা চলছে উহাও সঠিকভাবে করা হচ্ছে এটা মেনে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে দল হিসেবে জুলাই আন্দোলনসহ বিগত ১৭ বছরের সকল ট্র্যাজেডি এবং গুম-খুনের বিচার হওয়ার পর দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জোরালো হবে।

একই ট্রাইবুনালে পূর্বে যখন জামায়াত নেতাদের বিচার ও সাজা হয়েছিল অবশ্যই তখন দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী প্রতিরোধ যুদ্ধে (মুক্তিযুদ্ধ বলা বারণ) হানাদার বাহিনী (পাকি সেনাবাহিনী) দের পক্ষ নিয়ে দেশব্যাপী ম্যাসাকার করার প্রমাণ অবশ্যই পাওয়া গিয়েছিল। সেক্ষেত্রে চাইলে ইন্টেরিম সরকার জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করে দিতে পারে। এটা নিয়ে কারো দ্বিমত করার সুযোগ নেই। এখন যদি জুলাই আন্দোলনের প্রধান ভ্যানগার্ড হিসাবে জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হয় তবে একই সুযোগ আওয়ামী লীগও পাবে। যদিও তারা সাম্প্রতিক সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে যুক্ত।

কেবল নির্বাহী আদেশে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে দিলাম আর দল শেষ হয়ে গেলো এমন না। আওয়ামী লীগের এত আকাম-কুকামের পরও তাদের কোটি সমর্থক আছে। আবার ১৯৭১ সালের পর জামায়াতের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার কথা থাকলেও উপযুক্ত পরিবেশে তাদের ছুপা সমর্থকরা ঠিকই জালের মতো করে তাদের আধিপত্য বিস্তার করে করে আজকেও টিকে আছে। আসলে মতাদর্শ কখনো ধ্বংস করা যায় না। এসব দল নিষিদ্ধ করে দেওয়ার মধ্যে বিশেষ কোনো বরকত নেই। বরং রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করলে গুপ্ত রাজনীতি বেড়ে যাবে যা প্রতিটি রাজনৈতিক দলের জন্য এবং সামগ্রিক রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।

বি:দ্র: কর্ণেল অলির ফটোকার্ড সিরিয়াসলি নেয়ার কিছুই নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:২৭
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×