somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অজানা দার্শনিক
আমি ছাত্র । পকেট খালি থাকে আর চেহারার কোয়ালিটি বাজে হওয়ায় আজও সিঙ্গেল যখন আমার বাকি সব বন্ধুরা ফ্যামিলি প্ল্যানিং শুরু করেছে । বই , গেম , অ্যানিমে এবং ইন্টারনেট সার্ফিং করার নেশা থাকায় কিছুটা গর্তজীবীও বটে ।

এমজি ৪২ , দুর্গরক্ষকের রণহুংকার || মারণাস্ত্র সিরিজ ||

৩১ শে মে, ২০১৭ দুপুর ২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বহুদিন পর অবশেষে সিরিজের ৮ম অস্ত্রটা নিয়ে গ্যাজানোর মতো সময় পেলাম । মাঝখানে ব্যস্ত ছিলাম বললে কিছুটা ভুল হবে , আসলে আমি যথেষ্টই অলস প্রকৃতির । আদৌ কেউ যদি এই পর্বের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন , দেরি হবার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ।
=======
MG-42
=======



হেভি মেশিনগানের জগতে এর প্রতাপ যারা প্রত্যক্ষ করেছে , তারা সেই স্মৃতি আজীবন বয়ে বেড়িয়েছে । কারো স্মৃতি এর ট্রিগারে হাত রাখার , কারোরটা এর শব্দ শোনার । কারন এর দ্বারা ঘায়েল হবার পর কারো বেচে থাকার কথা না । এর দাপটে ছাড়খার হয়ে যেত... না , সবকিছু না , শুধু যেটার তাক করা হতো সেটাই ছাড়খার হতো । আর বিশ্বাস করুন , আপনি যখন যুদ্ধক্ষেত্রে , আপনি কোনভাবেই চাইবেন না এর নলটা আপনার দিকে থাকুক । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যে কয়টা নাৎসিদের জিনিস সবাই ভয় পেত , তার লিস্টে এটা উপরের দিকেই থাকার কথা । আস্ত এক কোম্পানি সৈন্যের বুকে ত্রাস ছড়ায় দিতে এই জিনিস এক ডজন লাগে না , দুটাই যথেষ্ট । এর একটা ডাকনামও আমেরিকানরা দিয়েছিলো , 'Hitler's Buzz Saw' ।
=======
এর আসল নাম "মাশিননগাইওয়েভ'র ৪২" (Maschinengewehr 42) বা ইংরেজি অনুবাদে MachineGun 42 । এর ডিজাইনার ওয়ার্নার গ্রুনার সম্ভবত কল্পনাও করেন নি কখনো যে তিনি ইতিহাস রচনায় অংশ নিবেন । তিনি মূলত যে ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন তাদের মূল কাজ ছিলো হারিকেন তৈরি করার । অস্ত্র নিয়ে তাদের কোন পূর্বের অভিজ্ঞতা ছিলো না । তাকে পাঠানো হয় মিলিটারি ইউটিলিটি ট্রেনিং এ , যেন নিজেকে এসবের সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে নিতে পারেন ।
যেহেতু তিনি মাস প্রোডাকশনের উপর স্পেশালাইজড ছিলেন , তাই যখন এমজি ৩৯ এর ডিজাইন করেন , তার প্রোডাকশন টাইম পূর্বের এমজি ৩৪ এর চেয়ে ৫০ শতাংশ কম সময়ে মাত্র ৭৫ ঘন্টায় তৈরি সম্ভব হয় আর দাম কমে যায় ২৪ শতাংশ । কিন্তু একটা সমস্যা রয়ে গেলো , জার্মানদের তখন দরকার নতুন কিছু । তাই তারা এটাকে ঘষামাজা করে অবশেষে দাড়া করালো এমজি ৪২ এর ডিজাইন ।
এর ডিজাইন কতটা ইনোভেটিভ তা বলে শেষ করা যাবে না ।

আমরা জানি যে , র‍্যাপিড ফায়ারের কারনে অস্ত্রের ব্যারেল গরম হয়ে যায় তখন এটাকে যেভাবেই হোক ঠান্ডা করতে হয় । তৎকালীন সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো ব্রাউনিং , তারা ব্যবহার করতো ওয়াটার কুলিং সিস্টেম যা ব্যাপক ঝামেলা (জ্যাকি চ্যানের 1911 সিনেমাটায় দেখেছিলাম অস্ত্রের মধ্যে প্রস্রাব করতে, DISGUSTING !! ) । জার্মানরা ব্যবহার করেছিলো এয়ার কুলিং সিস্টেম । কিন্তু এতে তো অস্ত্র আরো তারাতারি গরম হবে না ?? সে জন্যই এতে ব্যবহার করেছিলো রিপ্লেসেবল ব্যারেল । গরম হয়ে গেলো , সাথে সাথে খুলে ৫ সেকেন্ডের মধ্যে আরেকটা ব্যারেল লাগায় দেন আর আগেরটা ঠান্ডা হতে সময় দেন ।
এরকম খুটিনাটি অনেক কিছুই আছে । সব বলে দিলে মহাকাব্য হয়ে যাবে ।
১৯৪২ সালে এর ডিজাইন কমপ্লিট হয় এবং সে বছরই এটাকে মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয় । মওজার ওয়ের্কে এজি এবং গ্রযফুয এজি এর ম্যানুফেকচারিং এর দায়িত্ব নেয় । শুরুতে ফিল্ড টেস্ট হিসেবে ১৫০০ তৈরি করা হয় , আর এর মজা বুঝার পর মাত্র ৪ বছরে ৪০০০০০ এর বেশি এই বস্তু তৈরি করা হয় ।
কার্যনীতি : রিকয়েল অপেরেটেড , রোলার লকড ।
=======
এতে ব্যবহার করা হতো 7.92x57mm মওজার কার্ট্রিজ । ফিডিং সিস্টেমে কোন ম্যাগাজিন বা কন্টেইনার ব্যবহার হতো না , যেহেতু এটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হেভি মেশিনগান । এতে বেল্ট ব্যবহার হতো , তা ৫০ রাউন্ডের ও ২৫০ রাউন্ডের পাওয়া যেত ।
=======



ঠিক কি কারনে এর কদর এত বেশি ??
একটা কারন তো বলেই দিয়েছি , এর ওভারহিটিং সমস্যা সমাধান করা হয়েছিলো । এবার বাকিগুলাও বলা যাক ।
এর অপরদিকে ছিলো আমেরিকার এম১৯১৯ ব্রাউনিং মেশিনগান যাকে ডাকা হতো 'থার্টি ক্যাল' । তার ইফেকটিভ রেঞ্জ ছিলো ১৫০০ মিটার , আর জার্মান এমজি ৪২ এর অ্যাডজাস্টেবল সাইট দিয়ে তা ২০০০ মিটার গড়াতো ।
থার্টি ক্যাল এর ফায়ার রেট ?? এমজি ৪২ এর তুলনায় হাস্যকর । মাত্র ৪০০-৬০০ রাউন্ড পার মিনিট আর অপরদিকে জার্মানরা চালাতো ১২০০-১৪০০ রাউন্ড পার মিনিট ।
এমনকি এই অস্ত্রকে অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট ওয়েপন হিসেবেও ব্যবহার করা যেত । ভাবতে পারেন !!
এখন হয়তো বলবেন , ব্রিটিশ থমসন ১৫০০ রাউন্ড ফায়ার রেট দেখাতো । আরে থমসনের ব্যারেল দিয়ে বের হতো .45 ACP পিস্টল রাউন্ড । তার সাথে মওজার কার্ট্রিজ এর তুলনা চলে না ।
এর আরেকটা সুবিধা ছিলো একে নিয়ে চলাচল করা সহজ । লম্বাটে শেপের হওয়ায় বহন করা সহজ , শত্রু দেখার সাথে সাথে সেট করে শত্রুকে মাংশের মোরব্বা বানায় ফেলাও সহজ ।
এটা রিকয়েল অপারেটেড হওয়ায় ব্যবহারকারীকে (যে সেই মূহুর্তে একজন সিরিয়াল কিলার) কোন রিকয়েল সহ্য করতে হতো না ।
এর আওয়াজ ছিলো অত্যান্ত ব্যাতিক্রমী , এর অবশ্যই .. ভয়াবহ । আপনি হয়তো ভাববেন যে , শত্রু তো শুনেই বুঝে যাবে এটা এমজি ৪২ আর সতর্কভাবে কাউন্টার স্ট্র্যাটেজি বের করে ফেলবে । না ! বাস্তবে মোটেও তা হতো না ! এটা শত্রুর মনে আতংক ছড়ায় দিতো । শত্রু সৈন্যদের মরালিটি চূরমাড় হয়ে যেত ।
আমেরিকানরা যুদ্ধের সময় তাদের ট্রেনিং এর সময় শুধুমাত্র এর শব্দের সাথে পরিচয় করায় দিতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছিলো । সত্যিই অন্য কোন মেশিনগানের শুধুমাত্র শব্দ দিয়ে শত্রুর কলজে নাড়িয়ে দেওয়ার যোগ্যতা ছিলো না ।
=======
এর সমস্যা... ?? আসলে এর সমস্যা খুজে বের করা বেশ কঠিন । একটা অসুবিধা আছে অবশ্য । আগেই তো বলেছি এর কুলিং সিস্টেমের জন্য এর ব্যারেল পাল্টাতে হতো । তাতে যে ৪-৬ সেকেন্ড সময় ব্যয় হতো , শত্রুরা সেটার জন্যই অপেক্ষা করতো । তাদেরকে সেরকম নির্দেশনাই দেওয়া হতো যেন তারা এই ছোট্ট সময়ের বিরতিটা ব্যবহার করে । আর টানা ব্রাশ ফায়ার করা হলে এটা প্রতি ১৭০-২০০ রাউন্ডের মধ্যেই করা লাগতো । এইই ।
=======
এর আসলে তেমন প্রকৃত ভ্যারিয়েন্ট নেই । যা আছে সব আসলে যুদ্ধের পরে অন্যান্য দেশের বানানো নকল । এর মাঝে উল্লেখযোগ্য আছে - সুইস এমজি ৫১ , যাসতাভা এম৫৩ (যুগোস্লাভিয়া) ইত্যাদি ।
তবে জার্মান বাহিনী আজও এর একটা ভ্যারিয়েন্ট ব্যবহার করে , রেইনমেটাল এমজি ৩ ।
=======
সেই আমলে অস্ত্রে তেমন গ্যাজেট ব্যবহার করা হতো না । তবুও মাঝে মাঝে এতে স্কোপ ব্যবহার করতো ।
=======



এই অস্ত্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্য যেকোন অস্ত্রের তুলনায় বেশি রাউন্ড গুলি ছুড়েছে । এর ব্যবহার কিন্তু থেমে যায় নি । এখনো সিরিয়ার এই সিভিল ওয়ারে এই অস্ত্র ব্যবহার হয় । মূহুর্তের মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্রের পরিবেশ পাল্টে দিতো এই অস্ত্র । একটা কুড়ে ঘরকেও এটা মূর্তিমান দুর্গে পরিণত করতে পারতো । যতদিন মানুষ শিশার বুলেটে তামার খোলস ব্যবহার করবে , ততদিন এই অস্ত্রের কথা মানুষের স্মরণে থাকবে ।
=======
এই হলো আজকের অস্ত্র পরিচিতি ।
এর পরে আসছে - কোন একটা স্নাইপার রাইফেল (এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি নাই কোনটা নিয়ে লিখবো)
পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ
=======
এই সিরিজের পূর্বের পর্বগুলো -
AK 47 - Click This Link
M1 Garand - Click This Link
IMI Desert Eagle - Click This Link
Remington 870 - Click This Link
Scorpion VZ 61 - Click This Link
Thompson SMG - Click This Link
Sten Gun - Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৭ দুপুর ২:১১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×