আল্লাহুর হুকুমে পৃথিবীতে সবই সম্ভব । আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে বলেন, " তারপর ঈমানদাররা আল্লাহর হুকুমে জালূতের বাহিনীকে পরাজিত করে দিল এবং দাউদ জালূতকে হত্যা করল। আর আল্লাহ দাউদকে দান করলেন রাজ্য ও অভিজ্ঞতা। আর তাকে যা চাইলেন শিখালেন। আল্লাহ যদি একজনকে অপরজনের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে গোটা দুনিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যেতো। কিন্তু বিশ্ববাসীর প্রতি আল্লাহ একান্তই দয়ালু, করুণাময়।৷" (সুরা বাকারা-২৫১)
"আমি পর্বতমালাকে তার অনুগামী করে দিয়েছিলাম, তারা সকাল-সন্ধ্যায় তার সাথে পবিত্রতা ঘোষণা করত। আর পক্ষীকুলকেও, যারা তার কাছে সমবেত হত। সবাই ছিল তাঁর প্রতি প্রত্যাবর্তনশীল।" (সুরা সোয়াদ-১৮,১৯)
"তারা যা বলে তাতে আপনি(মুহাম্মাদ সাঃ) সবর করুন এবং আমার শক্তিশালী বান্দা দাউদকে স্মরণ করুন। সে ছিল আমার প্রতি প্রত্যাবর্তনশীল"। (সুরা সোয়াদ ১৭)
"আমি দাউদের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম এই আদেশ মর্মে যে, হে পর্বতমালা, তোমরা দাউদের সাথে আমার পবিত্রতা ঘোষণা কর এবং হে পক্ষী সকল, তোমরাও। আমি তাঁর জন্য লৌহকে নরম করে ছিলাম। এবং তাকে আমি বলে ছিলাম: প্রশস্ত বর্ম তৈরী কর, কড়াসমূহ যথাযথভাবে সংযুক্ত কর এবং সৎকর্ম সম্পাদন কর। তোমরা যা কিছু কর, আমি তা দেখি।" (সুরা সাবা-১০-১১)
“ আল্লাহ দাউদকে বাদশাহী এবং নবুয়ত দান করলেন এবং তিনি যা চেয়েছেন তা শিক্ষা দিয়েছেন। (সূরা বাকারা) ”
“ হে দাউদ ! আমি আপনাকে পৃথিবীর বুকে খলীফা নির্ধারণ করেছি। (সূরা সোয়াদ) ”
“ আমি ( দাউদ ও সুলায়মান) প্রত্যেককে রাজত্ব ও জ্ঞান দান করেছি। (সূরা আম্বিয়া) ”
বোখারী শরীফে আছে যাবুর কিতাব জনাব দাউদ (আঃ) অতিদ্রুত তেলাওয়াত বা আবৃত্তি করতে পারতেন। এমনকি তিনি ঘোড়ার পিঠের গদী বাঁধতে যতটুকু সময় লাগতো, এসময়ের মধ্যেই যাবুর আবৃত্তি করে শেষ করতে পারতেন।
সূরা আম্বিয়া: ৭১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ এই বর্ণনা দিয়েছেন,
“ আল্লাহপাক পাহাড়-পর্বত ও পশু-পাখিকে জনাব দাউদের (আঃ) অনুগত করে দিয়েছিলেন। তারা তাঁর সাথে তসবিহ পাঠ করতো বা ঈশ্বরের স্মরণসূচক আবৃত্তি করতো। বৃক্ষ, পাথর ও শিলাখন্ড থেকেও তাসবিহ ধ্বনিত হতো। ”
"বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:মহান আল্লাহর নিকটে সর্বাধিক পছন্দনীয় হল দাঊদ (আঃ)-এর সালাত এবং সর্বাধিক পছন্দনীয় সিয়াম ছিল দাঊদ (আঃ)-এর সিয়াম। তিনি অর্ধরাত্রি পর্যন্ত ঘুমাতেন। অতঃপর এক তৃতীয়াংশ সালাতে কাটাতেন এবং শেষ ষষ্টাংশে নিদ্রা যেতেন। তিনি একদিন অন্তর একদিন সিয়াম রাখতেন। শত্রুর মোকাবিলায় তিনি কখনও পশ্চাদপসরণ করতেন না"।
সূরা সাবায় বর্ণনা করা হয়,
“ এবং আমি দাউদকে আমার তরফ থেকে মর্যাদা দিয়েছি। আর আমি আদেশ করেছি যে, হে পাহাড় ও পক্ষীকূল! তোমরা দাউদের সাথে মিলে তাসবিহ পাঠ ও পবিত্রতা বর্ণনা কর।
বনু ইস্রাঈলদের জন্য শনিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট ও পবিত্র দিন। এ দিন তাদের জন্য মৎস্য শিকার নিষিদ্ধ ছিল। তারা সমুদ্রোপকুলের বাসিন্দা ছিল এবং মৎস্য শিকার ছিল তাদের পেশা। ফলে দাঊদ (আঃ)-এর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই তারা ঐদিন মৎস্য শিকার করতে থাকে। এতে তাদের উপরে আল্লাহর পক্ষ হতে ‘মস্খ’বা আকৃতি পরিবর্তনের শাস্তি নেমে আসে এবং তিনদিনের মধ্যেই তারা সবাই মৃত্যু মুখে পতিত হয়। আল্লাহ বলেন " তোমরা তাদেরকে ভালরূপে জেনেছ, যারা শনিবারের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করেছিল। আমি বলেছিলাম: তোমরা লাঞ্ছিত বানর হয়ে যাও। অতঃপর আমি এ ঘটনাকে তাদের সমসাময়িক ও পরবর্তীদের জন্য দৃষ্টান্ত এবং আল্লাহভীরুদের জন্য উপদেশ গ্রহণের উপাদান করে দিয়েছি।" (সুরা বাকারাহ-৬৫-৬৬)। তাফসীরে কুরতুবীতে বলা হয়েছে যে, ইহুদীরা প্রথমে গোপনে ও বিভিন্ন কৌশলে এবং পরে ব্যাপকভাবে নিষিদ্ধ দিনে মৎস্য শিকার করতে থাকে। এতে তারা দুদলে বিভক্ত হয়ে যায়। সৎ ও বিজ্ঞ লোকেরা একাজে বাধা দেন। অপরদল বাধা অমান্য করে মাছ ধরতে থাকে। ফলে প্রথম দলের লোকেরা শেষোক্তদের থেকে পৃথক হয়ে যান। তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এমনকি তাদের বাসস্থানও পৃথক করে নেন। একদিন তারা অবাধ্যদের এলাকায় চরম নীরবতা লক্ষ্য করেন। অতঃপর তারা সেখানে পৌঁছে দেখলেন যে, সবাই বানর ও শূকরে পরিণত হয়ে গেছে। ক্বাতাদাহ বলেন যে, বৃদ্ধরা শূকরে এবং যুবকেরা বানরে পরিণত হয়েছিল। রূপান্তরিত বানরেরা নিজ নিজ আত্মীয়-স্বজনকে চিনতে পেরেছিল এবং তাদের কাছে গিয়ে অঝোর নয়নে অশ্রু বিসর্জন করেছিল।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২৯