পৃথিবীতে নারী ও পরুষ দুই প্রকার লিঙ্গ যুক্ত মানুষ থাকলেও মানুষের জটিল দেহ গঠনে মাতৃগর্ভে বাচ্চার লিঙ্গ জেনেটিক্যালি নির্ধারিত হবার সময় লক্ষ জন মানুষের ভেতর দু‘একটা ভুলচুক হয়ে যায় মাঝে মাঝে। স্বাভাবিক ভাবে শুক্রাণু ডিম্বাণু মিলিত হলেই নতুন প্রাণের উদ্ভব ঘটে। কিন্তু পোকা মাকড়দের অনেক এমন প্রজাতি আছে (যেমন পিঁপড়া, মৌমাছি ইত্যাদি) যাদের ডিম্বাণুতে এমন একটা স্পেশাল ক্ষমতা থাকে যেটার সাহায্যে তারা শুক্রাণু ছাড়াও নিজ থেকেই বাচ্চা জন্ম দিয়ে দিতে পারে।
ডিম্বাণুর এরকম নিজ থেকেই বাচ্চা উৎপাদনের পদ্ধতিকে পার্থেনোজেনেসিস বলে আর উৎপাদিত প্রাণীকে পার্থেনোকার্পিক প্রাণী বলে। এ ধরণের পোকা মাকড়ের উভয় রকম বাচ্চা হয়। যেসব বাচ্চারা শুক্রাণু ডিম্বাণু মিলিত হয়ে তৈরি হয় তারা হয় মেয়ে পোকা আর যারা খালি ডিম্বাণু থেকেই তৈরি হয়ে যায় তারা হয় ছেলে পোকা। আমরা যেসব মৌমাছিকে ফুলে ফুলে ঘুরতে দেখি বা দেয়ালে দেয়ালে আনাচে কানাচে যত পিঁপড়া দেখি সবাই ছেলে। ছেলেদের কারো বাবা থাকেনা, শুধু মা থাকে। এদের মেয়ে হয় খুব কম এবং এরা সাইজে অনেক বড় এবং এরা তাদের তৈরি বাসার বাইরে আসে না।বাসায় বসে খালি ডিম পাড়ে। এরা হল পার্থেনোজেনেসিসের।
গ্রীক পুরাণে দেবতা হার্মিস আর দেবী আফ্রোদিতির এক বাচ্চা এরকম ছেলে মেয়ে উভয়ের লিঙ্গ নিয়ে জন্মেছিল ধারণা করা হয় বলে এদের দুইজনের নাম মিশিয়ে এই ধরণের প্রাণীকে হার্মাফ্রোডাইট বলা হয়। হার্মাফ্রোডাইটরা দুই রকমের। সিকুয়েন্সিয়াল আর সাইমোল্টানিয়াস। সিকুয়েন্সিয়ালদের প্রজননতন্ত্র বছরে কিছু সময় ছেলেদের মত ও কিছু সময় মেয়েদের মত থাকে। অর্থাৎ বছরে এরা একবার মা হতে পারে এবং আরেকবার বাবা। বহু মাছ,পাখি আর উদ্ভিদ প্রজাতি এরকম পর্যায়ক্রমিক লিঙ্গ বদল করতে পারে এবং এটা স্বাভাবিক।
সাইমোল্টানিয়াস বা সমসাময়িকরা একই সাথে দেহের দুই স্থানে দুই বিপরীত লিঙ্গ ধারণ করে। এদের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল কেঁচো। এদের একই প্রাণির দেহে দুই বিপরীত লিঙ্গ থাকলেও এরা স্বপ্রজনন করে না। এরা একই সাথে বাবা এবং মা হতে পারে। এই দুই প্রকারের বাইরে আরেকটা অতিরিক্ত প্রকারভেদ আছে তাকে মিথ্যা হার্মাফ্রোডাইট বলে। এটার উদাহরণ হল হায়েনা। হায়েনাদের পুরুষাঙ্গ দেখতে স্ত্রীদের মত এবং স্ত্রী অঙ্গ দেখতে পুরুষাঙ্গের মত। দেখতে বিপরীত মনে হলেও আসলে এরা উভলিঙ্গ নয় তাই এদের সিউডো বলা হয়।
মানুষের দেহে লিঙ্গ বদল বা অসম্পুর্ণভাবে গঠিত লিঙ্গ দেখা গেলে এদের আগে “মনুষ্য হার্মাফ্রোডাইট” বলা হত। পশু পাখি এবং উদ্ভিদে এই লিঙ্গ বদল স্বাভাবিক হলেও মানুষে এটা অস্বাভাবিক।
আমরা যাদের হিজড়া বলে চিনি তারা মোটেও এই ইন্টারসেক্স না। ইন্টারসেক্স মানুষ সম্পুর্ন অন্যরকম জিনিস। যারা বিজ্ঞানের ছাত্র ছাত্রী তারা জানে যে ছেলেদের লিঙ্গ নির্ধারনের ক্রোমোজোম xy আর মেয়েদের xx । জন্মের আগে মায়ের পেটে আমাদের ক্রোমোজোম বিন্যাসের সময় হঠাৎ কিছু গোলযোগ হয়ে যায়। বিশেষ করে লিঙ্গ নির্ধারনকারী ক্রোমোজোমে এই গোলযোগ হলে xx বা xy না হয়ে xxy বা xxx বা x০ বা xyy এরকম হতে পারে। বিজ্ঞানীরা ৫ ধরণের ক্রোমোজোমাল অস্বাভাবিকতা চিহ্নিত করেছেন এরকম ইন্টারসেক্স হবার জন্য।আবার এধরনের অনেক রোগীর দেহের বিলিয়ন বিলিয়ন কোষের অর্ধেকে xx এবং বাকি অর্ধেকে xy ক্রোমোজোম থাকে। এদের জিন বিন্যাসকে মোজাইক জেনেটিক্স বলে। এ ধরণের রোগ নিয়ে জন্মালে কিছু অদ্ভুত জিনিস দেখা যায়।
হয়তো জন্মের পরে মানুষটির দেহ দেখতে হবে মেয়ের মত কিন্তু এর যোনাঙ্গ হবে ছেলেদের মত যা ১০/১২ বছর পরে অদ্ভুত ভাবে ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে হতে স্ত্রী অঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে মানুষটা পুরাই মেয়ে হয়ে যাবে অথবা জন্মের সময় ছেলের মত হয়ে গঠন হয়ে যোনাঙ্গ হবে মেয়ের মত যা পরে ছেলেদের মত হয়ে যাবে অথবা এদের কোনটাই না হয়ে অদ্ভুত এক প্রকারের জননাঙ্গ নিয়ে জন্ম হয় যা পুরুষাঙ্গও না স্ত্রীঅঙ্গও না।এই যোনাঙ্গ পরবর্তিতে হয়ত পুরোপুরি ছেলেদের মত বা পুরোপুরি মেয়েদের মত হয়ে যাবে। তবে ছেলে বা মেয়ে যাই হোক না কেন এদের প্রজনন ক্ষমতাহীন হবে। কিন্তু এ ধরণের ঘটনা পশু পাখিতে বা উদ্ভিদে হলে এরা সম্পূর্ণ প্রজননক্ষম হয়। এটা মানুষের সাথে তাদের পার্থক্য। (চলবে)
ছবিঃ সংগ্রহ করা ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:০২