জল পড়ে পাতা নড়ে
-অদ্বিতীয়া সিমু
বড্ড ডানপিটে ছিলুম। কাউকে ভয় পেতুম না। বাবার বড় অাদরের সন্তান, মেয়ে বললুম না। কারণ মেয়ে অামি বাবার ছিলুম বলে মনে পড়ে না । কারণ বড় হবার অাগ পর্যন্ত অামি বাবার সন্তান ছিলুম মেয়ে নই। অাজও মনে পড়ে, কেউ বাবাকে অামার নামে নালিশ করলে বলত," অমার কি করার অাছে! ভুলতো স্রষ্টার, তাকে গিয়ে বলো! তিনি ভেবেছিলেন ওকে ছেলে বানাবেন কিন্তু জন্মের সময় ভুলে মেয়ে করে পাঠিয়ে দিয়েছে, থোরি ওর না ভুল!" অার দেখতে নাকি অামি খুব ইনোসেন্ট ছিলুম। কারও অামার ওপর সন্দেহের কোন অবকাশ মাত্তর ছিলো না।
সাড়ে তিন বছরে অামার হাতেখড়ি হয়েছিলো। শাহাবুদ্দিন স্যারের কাছে, অামার বড় ভাইয়ের সাথে। হুম, অামার বড় ভাই অামার সবচে বড় বাঁচার সাহারা ছিলো। স্কুলে যত দুষ্টমী, সব মাথা পেতে নিত ভাইয়া। মনে পড়ে অামি প্লে অার ভাইয়ার দাখিলা হয়েছিলো ওয়ানে। অামার বাবা বুঝেনি কত্ত বড় ভুল হয়েছিলো সেদিন! অামার কান্না অার চিৎকার শোনে কে! শেষ পর্যন্ত মোয়াজ্জেম স্যার অামাকে কোলে করে বাবার চেম্বারে এনে ফেরত দিলেন বাবার হাতে। বাড়ি এসে প্রশ্ন, কি হয়েছে? ঠোঁট উল্টিয়ে জবাব দিলুম, " ভাইয়া অামার সাথে গেছে, অন্য রুমে কেন থাকবে?"
~ ও তো ওয়ানে পড়ে, তোমার বড়
~অামিও ওয়ানে পড়ব, বড় হব
~অাগে প্লে, তারপর নার্সারী পড়তে হবে, তারপর ওয়ানে পড়বে
~ভাইয়া ওসব পড়েছে?
~ও বাসায় পড়েছে
~অামিও বাসায় পড়ে নিব,,,অামিও ওয়ানে পগব,,,নয়ত কাল থেকে যাব না,,,
সারাদিন খাওয়া বন্ধ, কথা বন্ধ। পরদিন বাধ্য হয়ে অামার দাখিলা হল ওয়ানে।
নতুন ক্লাশ। নতুন রুম। পাশে ভাইয়া অাছে। ভাইয়া বারবার সাবধান করছে।
~বেশী কথা বলবে না, চুপ করে টিচারের কথা শুনবে,,,
অমি মাথা ঝাঁকাচ্ছি। ভাইয়াতো অামাকে চিনে! সে ভয়ে অাছে।প্রথমদিন কি অঘটন ঘটাই! কারণ সবাই জানে অামি অাছি যেখানে, সব অঘটন সেখানে।
ঘন্টা বাজলো। টিচার অাসলো। পান্জ্ঞাবী পাজামা পরা ছোটখাট মানুষ। ওমর ফারুক স্যার। পরবর্তীতে তিনি অামার হাউজ টিউটর ছিলেন। সে যাক। কি হয়েছে! অামি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে অাছি! ভাইয়ার দিকে ফিরলুম।
~এটা টিচাল
~হুমমম
অাবার প্রশ্ন।
~এটা টিচাল?
~হুমমম
বোমা ফাটলো যেন ক্লাশে।
~অা,,,অা,,অা,,,
চিৎকার! ভাইয়া অামার মুখ চেপে ধরল। ভাইয়ার হাতের ফঁাক গলে চিৎকার বেরিয়ে যাচ্ছে! স্যার এগিয়ে এলেন দেখতে। স্যার যত অাগান তত চিৎকার বাড়ে! বাধ্য হয়ে স্যার ক্লাশ ত্যাগ করলেন। বেচারা যতবার ক্লাশে ঢুকেন ততবার অামার চিৎকারও শুরু হয়! কি করা! সেদিনের ক্লাশই পন্ড।
বাবার কানে খবর পৌঁছে গেছে।
~রানী, এ কেমন কথা!
~অামাল কি দোষ বলো!
~তুমি চিৎকার কেন করছিলে?
~টিচালের মুখে অনেক গর্ত গর্ত দাগ,,,অামাল ভয় লাগছিলো,,,
বেচারা স্যার! কিছুদিন অাগে বসন্ত হয়েছিল। তার দাগ। একমাস এরপর অামাদের ক্লাশে ঢোকেননি। একমাস পর মুখ ভর্তি দাড়ি নিয়ে ক্লাশে ঢুকেছিলেন! অামার ভয়ে যে দাড়ি রেখেছিলেন অাজও অাছে। এরপর তিনি অামার প্রিয় শিক্ষকদের একজন। মনে পড়ে স্যারকে। স্যার বেশ কিছুদিন অামার হাউজ টিউটর ছিলেন। স্যার অামাকে প্রথম যেদিন নামাজ পড়া শিখিয়ে ছিলেন সে ঘটনাও মনে পড়ে! নামাজ পাটিতে অামি সিজদারত। নামাজে কখা বলতে নেই। কলিংবেল বাজছে! কি করব অামি! সিজদায়। সেখান থেকেই জবাব দিলুম।
~কে?কে?
এরপর।
এরপর নামাজ থেকে উঠে স্যার বললেন,"অাগেই বলিনি, নামাজে কথা বলতে নেই!"
~অামি কি করব? কেউ জবাব দিচ্ছে না! অাল্লাহওতো জবাব দিচ্ছে না!
স্যার অাজও সে কথার জবাব দেয়নি। অাজ সব গন্ডি পেরিয়ে ছ্টেবেলার কত্ত কথা মনে পড়ে!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:৪৮