somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুতির খালের হাওয়াঃ ২৮

২৫ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৯:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১।
উমবার্ত ইকোর অন লিটারেচার নামের বইটি নেড়েচেড়ে দেখছিলাম। বিশ্বসাহিত্যের অনেকানেক বিষয় নিয়ে ভদ্রলোকের লেখা প্রবন্ধের সংকলন বইটি। তারমধ্যে কিছু প্রবন্ধ আছে, চেষ্টা করলে সহজেই দাঁত ফোটানো সম্ভব। লেখার স্টাইল, সিম্বলিজম, তিনি কেন লেখেন ইত্যাদি বিষয়, যেমন। আবার কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো রচনার স্টাইল, জেমস জয়েসের পোট্রেট অফ অ্যান আর্টিস্ট - এগুলো পড়লেও বুঝবো, কিন্তু এ মুহূর্তে কোন কাজে লাগবে বুঝতে পারছিলাম না। বর্তমানে যা লিখছি, বা যে বিষয়ে গবেষণার কাজ করছি - কোনটার সঙ্গেই ইকোর লেখা আপাতত মেলে না। দান্তে, অস্কার ওয়াইল্ড, বোরহেসের উপরেও মূল্যায়নধর্মী তিনটি আর্টিকেল আছে, কিন্তু তাদের কোন লেখা আমার পড়া নাই বলে পড়ে মনে হয় না কিছু বুঝবো।
.
একটু পর উঠে গিয়ে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম স্যারের লেখাঝোকার কারখানাতে বইটা হাতে তুলে নিই। বেঙ্গলের বের করা বইটি, ৮০র দশকে তার সংবাদ পত্রিকার সাহিত্য পাতায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত 'অলস দিনের হাওয়া' - নামের সাহিত্য কলামের মধ্য থেকে বাছাইকৃত ২৬টি প্রবন্ধের সংকলন। যদিও বইটার নাম লেখাঝোকার কারখানাতে, যেমন কিনা সৈয়দ শামসুল হকের মার্জিনে মন্তব্য, কিন্তু বইটা আসলে ঠিক সাহিত্য কীভাবে রচনা করতে হয় , তা নিয়ে নয়। বরং সাহিত্যিকদের জীবন ও সাহিত্যকর্ম নিয়ে। স্যারও বিশ্বসাহিত্যের অনেকানেক রথী মহারথীদের নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখে গেছেন। ইকোর নাম স্যারের কাছ থেকেই প্রথম জানা। ক্লাসরুমে স্যার বলতেন, বাংলাদেশে আমভাবে ল্যাতিন সাহিত্য নিয়ে কথাবার্তা তিনিই প্রথম শুরু করেন। এরকম অনেক বিদেশি সাহিত্য - সাহিত্যিকের সঙ্গেই সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম স্যার আমাদের, বাংলাদেশী বাঙ্গালীদের পরিচিত করিয়ে দিয়েছিলেন।
.
২।
বিষয় হল, ইকো যেভাবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আলোচিত, মনজুর স্যার তার কিয়দাংশও নন। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বাদ দিই, বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে যারা সাহিত্য চর্চা করেন - তারা ক'জন কথাসাহিত্যিক মনজুরুল ইসলাম স্যারের লেখা পড়েছেন? (আমি পড়েছি। স্যার আমার শিক্ষক ছিলেন বলেই তার লেখার হদিস জানতাম ও রাখতাম। তার দুটো গল্পের বই আর একটি উপন্যাস আমার পড়া। যে ছবিটা দেখছেন, তা স্যারের 'সুখদুঃখের গল্প' বইয়ের উৎসর্গ পাতা)। ইকো দার্শনিকও বটে। মনজুর স্যার দেশ বরেণ্য গবেষক। কিন্তু একজন সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক হয়ে না ওঠার পেছনে আমার মনে হয় স্যারের সাহিত্যিক হিসেবে মেধার চেয়েও বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়ায় ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের চিন্তা ও সাহিত্যের গুরুত্বহীনতা, এবং অনুবাদ সাহিত্যে দুর্বলতার কারণে (বাংলা থেকে ইংরেজি) বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশী সাহিত্যিকদের জায়গা করে নিতে না পারা।
.
৩।
ইকো আজীবন ইতালিয়ান ভাষাতেই লিখেছেন, যা তার মাতৃভাষা। তরুণ কথাসাহিত্যিক হিসেবে আমার নিজের প্রায়ই এই ডিলেমার মধ্য দিয়ে যেতে হয় যে - বয়স তো এখনও কম, বছরখানেক চেষ্টা করে দেখবো ইংরেজিতে উপন্যাস লিখতে পারি কি না? পাশের দেশ ভারতেই তো কতজন আছেন যারা ইংরেজিতে উপন্যাস লিখে আজ বিশ্ব সাহিত্যের মানচিত্রে সমাদৃত। একজন ইউরোপিয় ভাষাভাষী সাহিত্যিকের এই ডিলেমার মধ্য দিয়ে যেতে হয় কী, সাধারণত? অথচ বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদের একটা শক্ত পাইপলাইন তৈরি হয়ে গেলে আমরা মাতৃভাষাতেই, অন্তত চেষ্টাটা করতে পারি বিশ্বসাহিত্যের দরোজায় কড়া নাড়ার। ভাষার রাজনীতিতো আছেই, তবুও অরিজিন্যাল, থট প্রভোকিং চিন্তার মূল্যই কি সবচে বেশী নয়, সৃজনশীল সাহিত্যকর্মে?
.
৪।
বিশ্বসাহিত্য, অনুবাদের পাইপলাইন - এসমস্ত কথা বাদ দিই। দেশের ভিতর সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সাহেবের মতো লেখকরা সমাদৃত হন না কেন? সাহিত্যপদবাচ্য নয় বলে, তাদের সাহিত্য কর্ম? মনে হয় না। এই ধরণের সাহিত্যের বাজার নেই, মোটাদাগে বলতে গেলে, বাংলাদেশে। জনগণের রুচি কি পুরোপুরি উপেক্ষা করা সম্ভব, একজন লেখক হিসেবে? ইলিয়াস না হয় ধার ধারেন নি পাঠকের রুচির। কিন্তু তার স্ত্রী যখন তাকে এই প্রশ্ন করতেন - 'কি লেখো তুমি এতো? কাগজ আর কলম কিনতেই তো তোমার লেখার মাধ্যমে আয় করা পয়সা শেষ হয়ে যায়...' ইলিয়াসের কেমন লাগতো? সে উত্তর আমাদের আর খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। ইলিয়াসের হাড় কবরে শুকিয়ে সাদা হয়ে গেছে। এ নিয়ে তিনি কিছু লিখেও যান নি। কিন্তু ইলিয়াসের উপর নির্মিত ডকুমেন্টারিতে তার স্ত্রীর এ প্রশ্ন এখনও ধাক্কা দিয়ে যায় আমাদের মনে।
.
৫।
বাংলাদেশের মতো একটি দেশে যখন আপনি সাহিত্যচর্চায় নিজের জীবন উৎসর্গ করতে চাবেন, নানা রকম অস্বস্তিকর, এবং সাহিত্যের সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন আপনার মননকে ক্রমাগত ঘাই মেরেই যাবে। জীবন তো একটাই, ফেলনা তো নয়। জীবনের অর্থবহতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নগুলোও তাই ফেলে দেয়া যায় না। মুখোমুখি হতেই হয়। এবং সে মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়।

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৯:৪৩
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×