= অণুগল্প =
* ঘানি *
প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়েই চলাচল করে রনি। সকাল সোয়া আটটার লোকাল বাসে চেপে, কখনো বসে, কখনো দাঁড়িয়ে থেকে গিয়ে যখন বাস থেকে নামে তখন ৮.৫৫ থেকে ৯.০০ টা। একরকম দৌড়েই অফিসের রাস্তার বাকী তিন’শ গজ পথটুকু সে প্রতিদিন কাভার করে। তাছাড়া বসের ঝাড়ি খেতে হয়। প্রতিদিনের চলাচলের পথের কোন কিছু সচেতনভাবে লক্ষ্য করা হয়না বলেই হয়তো দৃশ্যটি তার দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। আজ জানালার পাশে বসে ফাল্গুনের বাতাসে তার মনটা কেমন যেন উদাস হয়ে যায়। বাস থেকে নামবার সামান্য কিছু আগেই হাতের বামে একটি গরূ টানা ঘানি। জায়গাটা বেশ চকচকে এবং গরুটির গায়ের রংও দৃষ্টিনন্দন, চকচকে সাদা। রনি কিছুটা অসচেতনভাবেই লক্ষ্য করে গরুটির চোখ দু’টি এক টুকরা কাপড় দিয়ে বাঁধা এবং গরুটি নপুংশক।
বাস থেকে নামার পর আজ কেন যেন তার আর অফিসে যেতে ইচ্ছা হয় না। অভ্যস্ত পা তার সামনে বাড়তে চায় কিন্তু মন সায় দেয় না। চায়ের স্টলে বসে এক কাপ চা দিতে বলে সে। কলেজে পড়তে বন্ধুদের সাথে মাঝে মাঝে সখ করে সিগারেট খেত সে। বলতে গেলে বন্ধুরাই খাওয়াত। তার সামান্য উপার্জনে পরিবারের হাল যখন থেকে ধরতে হয়েছে তখন থেকে পণ করেই সে সিগারেট বাদ দিয়েছে। আজ তার খুব ইচ্ছা করে একটা সিগারেট ধরাতে। না থাক, দরকার নেই। বিলাসিতা তার সাজে না।
রনি আজ অফিসে যেতে নয়টার জায়গায় নয়টা পয়তাল্লিশ বাজিয়ে ফেলে। প্রথমে কেয়ারলেস থাকলেও পরে তার মনে একটা আশংকা তৈরি হয়। আজকেও না বসের সামনে পরতে হয়, আর ঝাড়ি খেতে হয়। প্রতিদিন রাতে শুয়ে শুয়ে সাত-পাঁচ ভাবে সে- সালার চাকরি কালকেই ছেড়ে দিব। কিন্তু দিন দিনের মত চলে, রাতগুলো বরং ভালো- সম্পূর্ণ নিজের। কিন্তু ভাগ্য আজ ভালো। বস অফিসে রিপোর্ট করার পরেই ভিজিটে বেড়িয়ে গেছে। দুপুর বারোটার দিকে রনির ছোট বোন ফোন করে। “ভাইয়া, কালকে কিন্তু কলেজের বেতনটা দিতেই হবে। কালই লাস্ট ডেট”। আচ্ছা, দেখি রে। দিব ইনশাল্লাহ্। আবার কাজ করতে থাকে সে। কলিগ জুনায়েদ ভাই এসে বলে, “রনি কালকে বিরাট কোহলির সেঞ্চুরিটা দেখছ?”। রনি জুনায়েদের মুখের মুখের দিকে কিছুক্ষণ ভাবলেশহীন মুখে তাকিয়ে থাকে, কোন উত্তর দেয় না। জুনায়েদ বিস্মিত হয়ে চলে যায় । কোহলির সেঞ্চুরির বদলে রনির মনে পড়ে কলির কথা। কলি মনে হয় ভালই আছে। শুনেছে তার হাজব্যান্ড ভাল বেতন পায়। ভালই করেছে মেয়েটা তার জীবনে না এসে। শুধু শুধু কষ্ট পেত। আজকে একটু আগে আগেই অফিস থেকে বের হতে ইচ্ছা করে। কাউকে কিছু না বলে সাড়ে পাঁচটার সময় অফিস থেকে বেড়িয়ে পড়ে সে। আজ তার বাড়ি যেতেও ইচ্ছা করে না। সকাল বেলা দেখা সাদা নপুংশক গরুটার জন্য তার অনেক খারাপ লাগে। এত খারাপ লাগে কেন? কি মনে করে সে উল্টা দিকে বন্ধু আশিকের বাসার দিকে হাটা শুরু করে। কিছু টাকা ধার করতে হবে। মা সকালবেলা আসার সময় বাবার ওষুধ নিয়ে যেতে বলেছিল।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৪