কোয়ার্টার ফাইনাল হইতে ব্রাজিলের বিদায়ের মধ্য দিয়া বাংলাদেশী সমর্থকগণের ফুটবল উন্মাদনার অবসান হইল। গতকাল রাতে বাসার নিচে বিশাল প্রজেক্টরের মাধ্যমে খেলা দেখার ব্যবস্থা করা হইয়াছিল। মুহুর্মুহু শ্লোগান আর করতালির মধ্য দিয়া কয়েক শত মানুষ সেখানে জড়ো হইয়া খেলা দেখিতেছিল। ব্রাজিল আক্রমণে গেলে চিৎকার আর করতালিতে ফাটিয়া পড়িতেছিল আবfর যখন বেলজিয়াম আক্রমণে যাইতেছে তখন্ও বেশ শোরগোল শোনা যাইতেছে। ভাবিলাম যাক বাংলাদেশে বেলজিয়ামেরও কম সমর্থক নাই, সত্যি, ভাল খেলিলে বাংলাদেশের মানুষ যে কোন দলকেই সমর্থন দেয়। এই ভাবিয়া যখন পুলকিত হইতেছি তখনই আমার মাথার ভিতর বাস্তবতা বোধ জাগ্রত হইল। আসলে বেলজিয়ামকে যাহারা সমর্থন করিতেছে তাহারা বেলজিয়ামের সমর্থক নয়, তাহারা হইল এন্টি ব্রাজিল বা স্থুলভাবে বলিলে ইহারা আর্জেন্টিনার সমর্থক।
প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের ফুটবল সমর্থক বা উন্মাদক গোষ্টি মুলত দুটি ভাগে বিভক্ত ১) আর্জেন্টিনা ২) ব্রাজিল এবং এদের সমর্থন আবার দুই প্রকার যথা ১) আর্জেন্টিনা - এন্টি ব্রাজিল ২) ব্রাজিল - এন্টি আর্জেন্টিনা। যতটা না এরা ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার সমর্থক তাহার চাইতে অধিক এন্টি ব্রাজিল এবং এন্টি আর্জেন্টিনা। এই ধরনের নেতিবাচক সমর্থক গোষ্টী মনে হয় পৃথিবীর খুব কম দেশে আছে। এই এন্টি সমর্থন বা উন্মাদনা নিয়া প্রতিনিয়ত চলে মান-অভিমান, বাদ-অনুবাদ, ধা্ওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হাতা-হাতি এমনকি ফাটা-ফাটি। অথচ সুদুর ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার মানুষরা হয়তো জানেইনা যে বাংলাদেশ নামক কোন দেশ আছে এবং সে দেশের মানুষ তাহাদের পক্ষে বিপক্ষে কোন্দল করিবার জন্যে গৃহ ছাড়িয়া মাঠে-ময়দানে বা ক্লাবে অবস্থান করিতেছে।
দ্বিতীয় পর্ব হইতে যেইদিন আর্জেন্টিনা ফ্রান্সের নিকট পরাজিত হইয়া বিদায় নিল, সেইদিন ফ্রান্সের পক্ষে কোন বিজয় উল্লাস ছিল না, ছিল ব্রাজিল সমর্থকদের আজেন্টিনাকে দুয়ো দিয়া শ্লোগান “ আর্জেন্টিনা ভুয়া”। অপরদিকে ব্রাজিল টিকিয়া রহিল। ব্রাজিলের সমর্থক গোষ্টি হেক্মার স্বপ্ন নিয়া উন্মাদনা বজায় রাখিল। আর্জেন্টিনার সমর্থক গোষ্টি কি আর্জেন্টিনার সহিত গৃহে ফিরিল? মোটেও না, বরং তাহারা অধিক উন্মাদনা লইয়া ব্রাজিলের বিদায় ঘন্টা শুনিবার আশায় অধীর হইয়া রহিল এবং অদ্য ব্রাজিলের বিদায়ের মধ্য দিয়া আজেন্টিনা এবং ব্রাজিল উভয় সমর্থক গোষ্টি তাহাদের উন্মাদনার অবসান ঘটাইয়া জঙ্গের ময়দান হইতে নিজ নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করিল।