somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভয়

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অর্নব এবং হিমা একই অফিসে চাকরি করে । বিয়ের আগে থেকেই একই অফিসে আছে । অনেক সময় তাদের শহরের বাইরে যেতে হয় এবং অনেকটা শেষ সময়েই তাদের বলা হয়। তাই প্রস্তুতি নেয়ার সময় থাকে না। তাদের এক সাথে কমই শহরে বাইরে যেতে হয়। তাই ছেলেকে নিয়ে তেমন চিন্তা হয় না। তাদের একটা মাত্র ছেলে , অদ্বিত । বাসায় অবশ্য ডাক নাম লাটুস । অদ্বিত ক্লাস সিক্স এ পড়ে। মা বাবার আদরে বড় হয়েছে ঠিকই তবে ননির পুতুল হয় নি। সাতার জানে , সাইকেল চালাতে জানে, একা একা স্কুলে যেতে পারে , টুকটাক রান্নাও পারে। কিন্তু একটা ভয় অর্নব কিছুতেই কাটাতে পারে না । ভূতের ভয়। অদ্বিতের খুব ভূতের ভয় । রাত হলেই অস্থির হয়ে যায়। আবার চোখ চেপে ধরে আঙুলের ফাকা দিয়ে ভূতের ছবি কিন্তু ঠিকই দেখে। আজ যখন আফিস থেকে বলা হলো দুজনকেই একসাথে রাঙামাটি যেতে হবে তখন তারা দুজনেই চিন্তায় পড়ে গেলো। বিজনেস ট্রিপ না হলে নিয়ে যাওয়া যেতো । শান্ত ছেলে তেমন সমস্যা হতো না। কিন্তু অদ্বিতের পরীক্ষা । আর তেমন কোনো আত্মীয় নেই ওদের এই শহরে। সন্ধ্যায় ফ্লাইট । আর্নব এবং হিমেকে ১২ টার দিকে বাসায় গিয়ে গোছাতে বলা হলো। অদ্বিত বাসায় একাই ছিল । বেল বাজতেই অদ্বিত দরজা খুলে দিলো। হিমা মুখ গোমরা করে বলল, “তোমাকে না বলেছি আগে দেখে নিবে কে নক করল। এখনতো আমাদের আসার সময়ও না যে তুমি না দেখেই দরজা খুলে দিবে।”
অদ্বিত কিছু বলল না। হিমা অদ্বিতের সাথে সোফায় বসলো। হিমা ভাবছে কিভাবে বলা যায় ? একটা রাতের বেপার ।
হিমা অদ্বিতকে কোলের কাছে টেনে নিল।তার আদরের লাটুস।অনেক সময় একটু কঠোর হয়ে যায় সে ,কিন্তু তার একমাত্র ছেলেটাকে সে অনেক বেশিই ভালোবাসে।
তোমরা বাইরে যাচ্ছো?
হিমা চমকে উঠল। অদ্বিত আবার বলল , “বাবাও যাবে?”
হিমা কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল, “হ্যা বাবা। তুমি একটা রাত একটু একা থাকতে পারবে না?”
অদ্বিত বলল, “তা পারবো। কিন্তু ওই ভূতগুলো আবার না আসলেই হয়।” হিমার বুকটা কেপে উঠল। কিন্তু একটু হেসে বলল , “কিযে বলে না আমার লাটুসটা ভয় কিসের?” অর্নব বলল , “তোমরা তাহলে থাকো আমি কাজগুলো গুছিয়ে নেই।” হিমা সারাটা দিন অদ্বিতের সাথে থাকলো। বিকেলেই রওনা দিলো তারা । ঢাকার জ্যাম বলে কথা। আসার সময় অদ্বিতের মুখের দিকে বারবার তাকাচ্ছিল হিমা। নাহ মন খারাপের চিহ্ন নেই। সব ব্যাবস্থা করে রেখেছে অর্নব ফ্রিজে খাবার আছে । দারোয়ানকে বলা আছে , পাশের ফ্লাটের কাউকে বলতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু তারা নতুন বলে পরিচয় নেই। আবার কাল বিকেলের ফ্লাইটে চলে আসবে । অদ্বিত এখন একা। সন্ধ্যার পর থেকেই বই পড়তে বসলো। অনেক দিনের অভ্যাস । কেমন যেন একটা ভয় ভয় করতে থাকলো । একটু পরে অদ্বিতের ফোন বেজে উঠলো । মায়ের কল দেখে অদ্বিতের খুব ভালো লাগলো । রিসিভ করতেই হিমা বলল, “আমার লাটুসটা কি করে?”
কিছুনা মা ,বসে আছি। তোমরা কি করো?
এইতো বাবা কিছুক্ষন আগে হোটেলে আসলাম।
আচ্ছা মা তুমি চাকরিটা ছাড়তে পারো না?
হিমা কেদে ফেলল । আগে কখনো অদ্বিত এমন কথা বলেনি। আজ হয়ত খুবই মন খারাপ। জীবনের তাগিদে এসব করতে হয় । না হলে তার অমন ভালো ছেলেকে ছেড়ে কখনো সে আসতো না। অর্নব ব্যাগগুলো গোছাচ্ছিল । আড় চোখে দেখে নিল হিমাকে। খারাপ তারও লাগে কিন্তু কিছুই করার নেই। ছেলেটাকে একা একা রাখা ঠিক হয়নি। এবার বাসায় গিয়ে আদ্বিতের ভূতের ভয় তাড়ানোর ব্যাবস্থা নিতে হবে ।
অদ্বিত বলল, “মা তুমি কথা বলছো না যে?”
এইতো বাবা আছি আমি । তুমি খেয়েছো?
না মা পরে খাবো। এখন রাখি পরে কথা বলল।
ফোন রেখে বেশ কিছুক্ষন কাদলো অদ্বিত। এখন আর ভূতের ভয় লাগছে না । কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুম ভেঙে অদ্বিত দেখলো রাত ২ টা বাজে এতো রাতে আগে কখনোই ঘুম ভাগেনি তার । খাটের উপর বসে অদ্বিত দেখলো পাশের বাসার দেয়ায় বেয়ে কিছু লোক উপরে ওঠার চেষ্টা করছে । অদ্বিতের হাসি পেয়ে গেলো। লোক গুলো কি বোকা ? সিড়ি দিয়ে উঠলেই হয়। লোকগুলো উপরে উঠে গেলো। একজন উপরে ওঠার পরে আরো দুইজন উঠল দড়ি বেয়ে । অদ্বিতের মনে হলো লোকগুলো খারাপ নয়তো। ওরা অমন কালো জামা পরে আছে কেনো । অদ্বিত খাঠ থেকে উঠে জানালার পর্দার আড়ালে লুকালো। ঘরের লাইট অফ করে দিল । লাইট অফ করতেই তিনজনের একজন তাকালো অদ্বিতের বাসার দিকে । অদ্বিতকে অবশ্য দেখলো না। পর্দার আড়াল থেকে অদ্বিত দেখলো লোক গুলো বারান্দার দরজা দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করছে।
অদ্বিত একটা দোতলা বাড়িতে থাকে তাদের পাশের বাড়িটাও দোতলা । লোকগুলো বারান্দার দরজা খোলার চেষ্টা করছে। ভয়ে কাপছে অদ্বিত । কেমন যেন অস্থির লাগছে তার । কি করা যায় ? কাউকে ডাক দিবে । দারোয়ান কাকাকে ডাক দেয়া যায় । কিন্তু এতোরাতে হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। লোকগুলো ঘরে ঢুকে গেলো । একটা চিৎকার শুলতে পেলো অদ্বিত । এখন একদম সবাই চুপ। ওবাসার কাউকেই অদ্বিত চেনে না। তবে দু এক দিন দেখেছে । এক আংকেল আর এক আন্টি থাকেন । তাদের কোনো বাবু নেই থাকলে অদ্বিত দেখতো । ওদের একজন বেধে ফেলল আংকেল আন্টিকে। অদ্বিতের এখন ভূতের ভয় একদমই লাগছে না । এখন অন্য এক অজানা ভয় ঘিরে ধরেছে তাকে। আগে কখনো এরকম ভয় পায়নি সে । লোকগুলো কি করবে আংকেল আন্টিকে? একজন ঘরের জিনিস পত্রের মধ্যে কি যেন খুজছে? বাকি দুইজনকে দেখা যাচ্ছে না। হয়তো পাশের ঘরে গেছে। এই ঘরের লোকটা আংকেলের চুল ধরে কি যেন বলছে । আংকেল মুখ বাধা। আন্টি পড়ে আছে ফ্লোরে । লোকটা আবার খোজা শুরু করলো । বাকি দুইজনও এই ঘরে আসলো। তিন জন নিজেদের মধ্যে কি যেন বলছে। অদ্বিত জানালার গ্রিল ধরে বসে পড়লো । লোকগুলো কি করছে ? কেনো করছে ? এরপর কি তার ঘরে আসবে ? কি করবে এখন সে ? সারা গা ঘামতে থাকলো অদ্বিতের । প্রচন্ড পানির পিপাশা পেয়েছে । এই ঘরে যে লোকটা ছিল সে এবার কেনো জানি রেগে গেল আংকেলকে মারতে শুরু করলো। আরেক জন আন্টির গলায় ছুরি ধরলো। আংকেল এইবার মাথা ঝাকাতে থাকলো । লোকটা মনে হয় হাসছে । এইভাবে কাউকে হাসতে দেখেনি অদ্বিত । কেমন যেন অপরিচিত হাসি। লোকগুলো আবার খোজা শুরু করলো ।পেয়েও গেলো কিছু একটা । একটা কাগজ হাতে নিতে লোকটা হাসছে । অল্প শদ্ব আসছে । লোকটা আন্টির মুখের বাধন খুলে দিতেই অদ্বিত শুনতে পেলো , “আমাদের ছেড়ে দিন । আপনারা যা চেয়েছেন নিয়ে যান আমাদের ছেড়ে দিন । ”
লোকটা আরো জোরে হাসতে থাকলো । তিনজনই হাসছে । হাঠাত করেই একজন আংকেলের গলায় ছুরি দিয়ে কেটে দিলো। অদ্বিত চোখের পলক ফেলতে পারছে না । আন্টি অনেক জোরে একটা চিৎকার করে ফ্লোরে পড়ে গেলো । তারা আন্টির পেটেও ছুরি মারলো। শরিরটা কয়েকবার কেপে উঠল। তারপর আর কিছুই মনে নেই তার । অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল অদ্বিত। পরের দিন সকালে অর্নব হিমা বারবার চেষ্টা করেও অদ্বিতকে ফোনে পায় নি । হিমা অস্থির হয়ে কান্নাকাটি শুরু করলো। সকালেই তারা ঢাকায় চলে আসলো। ঘরের দরজা ভেঙে ঢুকলো তারা । পাশের বাসায় পুলিশ মিডিয়ার লোকজনে ভরের গেছে।জানালার পাশে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল অদ্বিত হাসপাতালে নিলে ডাক্তার জানায় ভয়ের কিছু নেই। অর্নব হিমার হাত ধরে বসে আছে হাসপাতালের বারান্দায় । অবিরত কাদছে হিমা।

তারপরে অনেক বছর কেটে গেছে অদ্বিত বড়ো হয়েছে। এখন আর ভূতের ভয় পায়না অদ্বিত । রাতের বেলার ভূতের ভয় সাকালে অদৃশ্য হয়ে যায় । কিন্তু মানুষের ভয় সবসময়ই থেকে যায় । ভূতকে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই , অদ্বিত এখন মানুষকে ভয় পায় ।

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২৩
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×