একবার ভেবে দেখুন, মুক্তিযুদ্ধটা যদি ’৭১ এ না হয়ে এখন না হতো তবে আমরা বাঙ্গালীরা তো ভীষণ লজ্জায় পড়ে জেতাম। পাকিস্তানিরা তো ওভার কনফিউশনেই ভীমরি খাইত যে কে বুদ্ধিজীবী আর কে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি!!
এক্ষেত্রে পাকিরা কিন্তু চরম বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে...
একটি গাছকে হত্যা করার ‘বিফলে মূল্য ফেরত’ উপায় হল তার শিকড় কেটে দেয়া। পুরো বছর রক্ত দিয়ে হোলি খেলার পর শেষ মুহূর্তে এসে বুঝতে পারলো যে এই জাতীর শেকড় যতোটা শক্ত, ততটাই আগাছায় পরিপূর্ণ। তাই পালানোর আগ মুহূর্তে তারা মূল শিকড় উপড়ে দিলেও আগাছাগুলকে বাঁচিয়ে রাখল। আর তার ফল তো এখন শিরায় শিরায় টের পাচ্ছেন।
শহিদুল্লাহ কায়সার, জহির রায়হান কিংবা মুনির চৌধুরী বেঁচে থাকলে হয়তো আজ লজ্জায়ই আত্মহত্যা করতো। এই তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, এই তাদের রেখে যাওয়া বুদ্ধিজীবী!!!
...পাঁচ ডজন অভিযোগে শেখ হাসিনাকে সমালোচনা করে শেষ লাইনে বলবেন খালেদার দায়ও কম নয়। ব্যস, ধোলাই হওয়া মগজ এবং নিরপেক্ষতার ড্রাইওয়াশের মধ্য দিয়ে বুকের ছাতি ফুলিয়ে বলতে পারবেন আপনি দলনিরপেক্ষ!
আরেকটু কষ্ট করে ক’টা মুখরোচক শব্দ আওড়াতে হবে- “মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, মুর্দাবাদ, হেফাজত, জামাত গোল্লায় যাক। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্নে বিভোর থেকে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই”। এরপর আর প্রগতিশীলতার তকমা ঠেকায় কে! এবার মাঝরাতে তাদের নিয়ে সরকার গঠন করুণ কিংবা ট্যাঙ্কের উপর নাচেন, পুরোটাই জাতি চেতনার ট্যাবলেটে অচেতন হয়ে ভুলে যাবে।
একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের রিমিক্স চেতনাও যদি ফেরি করতে পারেন তাহলে তো কথাই নেই। ড্যান মজিনাসহ ইউরোপ-আমেরিকার বিরুদ্ধে চোখটাটিয়ে গলাফুলিয়ে নিন্দাবাদ করুন আর ভারতীয় আধিপত্যবাদ, একচেটিয়া বাজার দখল, সীমান্ত হত্যা, সুজাতা সিং, পঙ্কজ শরণ, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও অসংখ্য নিষ্পত্তি না হওয়া ইস্যু ভুলে এবং তাদের সব বাড়াবাড়িকে বন্ধুত্বের সংজ্ঞায় ফেলে কিল খেয়ে কিল হজমের মতো চুপ থাকুন।
...এরপর আপনার দেশপ্রেম ঠেকায় কে?! Doesn’t matter আপনি ‘মুরগী সাপ্লায়ার’, ‘প্রমোদ বালক’ কিংবা ‘কোটি টাকার আবুল’; আপনি পাবেন দেশপ্রেমিকের সম্মান উইথ রেডিমেইড সার্টিফিকেট!!!
আর বুদ্ধিজিবিতার লেজেন্ডারি পর্যায়ে যেতে চাইলে রানা প্লাজা, ব্যাংক লুণ্ঠন, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, পদ্মা সেতু দুর্নীতি, শেয়ারবাজারে তস্করি, রেলের কালো বিড়াল, খুন-গুম-হত্যার মোকাবেলায়ও একাত্তরের প্রসঙ্গ তুলে শরীরকে ওয়ার্মআপ করাতে হবে। এরপর আপনার তরক্কি আর ঠেকায় কে??
এর পরও যদি আপনি ঠাঁই না পান, তাহলে মানবাধিকার কমিশনের মিজানের মতো কিছু স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করতে হবে। কোনোভাবে শেষ রক্ষার সুযোগ না হলে সংবিধান রক্ষার কোরাস গাইতে হবে। একই সাথে সংবিধান বিশেষজ্ঞের খ্যাতিটাও কিনতে চাইলে সংবিধানের গায়ের জোরে একটা উদ্ভট ব্যাখ্যা দিতে হবে। তারপর দেখবেন মিডিয়াগুলো আপনাকে লুফে নিচ্ছে।
দক্ষিণ জনপদে একটি লোকগল্প চালু আছে- এক লোক নাম জাগানোর জন্য শত অপকর্ম করেও নাম ‘চেতাতে’ পারল না। শেষ পর্যন্ত অনেক ভেবেচিন্তে মামীশাশুড়িকে নিকা করে ফেলল। এরপর আর তার নাম ঠেকিয়ে রাখে কে? আমাদের হয়েছে সেই অবস্থা। আপনি যত বিতর্কিত ততই প্রচারিত, ততই বিশেষায়িত!! রাত পোহালেই আপনার নাম সবার মুখে মুখে।
...কী! চেষ্টা করে দেখবেন নাকি!
লেবু বেশী কচলালে তিতা হয়। আর মুক্তিযুদ্ধের মতো মহান বিষয়টাকে তিতা করার জন্য বুদ্ধিজীবীর লেবাসে এই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিরাই দায়ী। সবকিছুতে এরা নিরপেক্ষতা খুঁজে। ক্যান রে ভাই? ‘আমি নিরপেক্ষ নই, সত্যের পক্ষে’- এইটুক বলতে কি এতটাই মুখে বাজে?!
যে জাতি হারায়ে স্রোত চলিতে না পারে, সহস্র শৈবালদাম বাধে আসি তারে। তাই জাতীর উন্নয়নে এইসব শৈবাল অপসারণ আজ সময়ের দাবী।
প্লিজ ভাই, আল্লাহ্র ওয়াস্তে জাতীর গৌরবময় ইতিহাসকে আর পণ্য করবেন না। নিজ স্বার্থ আদায়ে মহান মুক্তিযুদ্ধকে উছিলা বানাবেন না। বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ যেনো বৃথা না যায়।
আসলে আজ বুদ্ধিজীবী দিবসে দুঃখ প্রকাশ করবো নাকি লজ্জিত হবো তা ভেবে পাচ্ছি না।