১ . ব্লগে আমি একেবারেই নতুন , মাত্র মাসখানেক হল , পোস্টের সংখ্যাও খুব একটা বেশি না , বেশিরভাগ সময় ব্লগে সাধারণত বিভিন্ন ব্লগারদের লেখা পড়া হয় , এই ব্লগে বেশ কিছু সম্ভাবনাময় তরুণ ব্লগার ( আমিও বয়সে তরুণ ) আছে যাদের সহজ সরল লেখাগুলো মন ছুঁয়ে যায় । একেকজনের লেখার পারদর্শিতা একেক বিষয়ে , আসলে ব্লগ আমাদের সমাজের সবস্তরের মানুষের মধ্যে তাদের মনোভাব প্রকাশের একটা সুন্দর প্লাটফর্ম করে দিয়েছে , নানান মানুষের নানান ধরণের মত থাকবে , সবার কথাতেই যুক্তি আছে , ভিন্নমত থাকলেও আমাদের প্রত্যেকের উচিত সবার মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা । মন্তব্য প্রদানের ক্ষেত্রে আক্রমণাত্মক মনোভাব পরিহার করা উচিত।
২. দেখতে দেখতে পিএইচডি রিসার্চ প্রায় শেষ হয়ে আসলো , আর মাসখানেকের মধ্যেই হয়তো ডিগ্রি হাতে পাবো । কিভাবে এই বিদেশ বিভুঁইয়ে চার বছর কেটে গেলো বুঝতে পারলাম না ।আমি আমার সম্পূর্ণ শিক্ষাজীবনে কখনোই বাড়ির বাহিরে যাইনি , স্কুল , কলেজ , ইউনিভার্সিটি সবকিছুই বাসা থেকে করেছি , বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে হলে খুব কম সময়ের জন্য থাকা হয়েছে , বাসা থেকে বের হলাম একেবারেই দেশের বাহিরেই চলে আসলাম । চার বছরের কাজের ব্যাস্ততায় একাকীত্ববোধ খুব বেশি অনুভূত হয়নি , কিন্তু ইদানিং খুব একঘেয়ে লাগছে , মনে হয় অনন্তকাল ধরে কেবল কাজ করেই যাচ্ছি ।
৩. গতকাল আমার ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে এক ছাত্রের সাথে পরিচিত হলাম , সে সম্প্রতি এখানে আন্ডারগ্র্যাড লেভেলে পড়াশুনার জন্য এসেছে , কথায় কথায় জানলাম সে আমাদের নিকট প্রতিবেশী দেশের নাগরিক ( ভারত কিংবা পাকিস্তান নয় ) ।তাকে যখন জানালাম আমি বাংলাদেশের নাগরিক এবং আমরা প্রতিবেশীদেশ সে শুনে তাজ্জব বনে গেলো ! সেই ছাত্রের আঠারো বছরের জীবনে সে নাকি বাংলাদেশের নাম শুনেনি !!!! যদিও তাকে আমি বাংলাদেশ বিষয়ক বহু তথ্য তাকে বিতরণ করলাম এবং জানালাম তাদের দেশ থেকে প্রচুর শিক্ষার্থী আমাদের দেশের মেডিকেল কলেজ গুলোতে পড়তে আসে । সে আসলেই জানেনা নাকি ভাব ধরার জন্য বললো বুঝলাম না । যাই হোক বিদেশে পড়াশুনাকালীন সময়ে প্রচ্ছন্ন বর্ণবৈষম্যের একটা ব্যাপার আমার চোখে পড়েছে , এই সময়গুলোতে কমপক্ষে বিভিন্ন দেশের প্রচুর শিক্ষার্থীর সাথে মেলামেশার সুযোগ হয়েছে , বাস্তবে সত্যি হচ্ছে যে তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলোকে অনেক খাটো চোখে দেখা হয় , বহুজাতিক শিক্ষার্থীদের আড্ডায় সুদূর আফ্রিকার কোনো এক দারিদ্র পীড়িত দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীকে কৌশলে পাশ কাটিয়ে রাখা হয় । বিশেষত ইউরোপীয়ানদের মধ্যে এই প্রবণতা প্রচুর , অথচ আফ্রিকার দুর্ভিক্ষ আর যুদ্ধপীড়িত দেশের একজন শিক্ষার্থীকে এক পাহাড়সমান চ্যালেঞ্জে জয়ী হয়ে জীবনে এতদূর আসতে হয়েছে যা কিনা গল্পগাথার কোনো কাহিনীকেও হার মানাবে ।
৩ . জাপানে স্কুল লেভেল কিংবা আন্ডারগ্র্যাড লেভেলের কোনো শিক্ষার্থীকে যদি বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করা হয় এদের বেশিরভাগের উত্তর থাকে জনসংখ্যার ঘনত্ব খুব বেশি , আর আমাদের দেশে ট্রেনগুলোতে মানুষ বাদুড়ঝোলা হয়ে চলাচল করে ( এদের কাছে বাংলাদেশের ট্রেডমার্ক হচ্ছে ইজতেমা শেষ হবার দিন প্রচুর যাত্রী বোঝাই যে ট্রেন যায় সেটা ) । কিন্তু গর্ব করার মতো আরো অনেক জিনিস আমাদের দেশের আছে আর আমরা একটু একটু করে উন্নত হচ্ছি , আমার মনে হয় বিদেশে বাংলাদেশের পজিটিভ ব্র্যান্ডিং করাটা বেশি জরুরি।
৪. আমার কাছে বাংলাদেশের মানুষকে মনে হয় বেশ খানিকটা নৈরাশ্যবাদী , কিছুটা কল্পনাপ্রিয় , চ্যালেঞ্জগ্রহনে অনিচ্ছুক আর খুব বেশি সমালোচনাপ্রবন , প্রশংসা কিংবা ধন্যবাদ দিতে জানিনা । এই যেমন কারো সাথে কথা বললেই সে দেশের বর্তমান পরিবেশ , যোগাযোগ ব্যবস্থা কিংবা সামাজিক অস্থিরতা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো আশা দেখে না ।কিন্তু বাস্তব হচ্ছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল যদি কিছু বিষয় ঠিক থাকে , আমরা এখন একটা ট্রানজিশনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি , যার অর্থ হচ্ছে অনুন্নত অবস্থা থেকে উন্নতির দিকে যাচ্ছি ,এক স্তর থেকে আরেক স্তরে উন্নতি ।এই ধাপ পরিবর্তনের সময় স্বাভাবিক ভাবেই সমাজ , রাজনীতি দেশ সবখানেই কিছু অসামঞ্জস্যতা দেখা যায় , সমাজে অস্থিরতা বাড়ে , আবার সময়ের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যায় , পৃথিবীর সব উন্নত দেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এই ব্যাপারটা চোখে পরবে , এই ব্যাপার নিয়ে এতো হতাশ হবার কিছু নেই ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:০০