২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর পরবর্তী বাংলাদেশে দারুণ খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছিলো। একেবারে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলাম আমরা। চালের ভয়াবহরকম সঙ্কট দেখা দিয়েছিলো। রাতারাতি অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিলো দাম। অন্যান্য খাবারও পর্যাপ্ত ছিলো না। শাকসবজি বা অন্যান্য খাদ্য দ্রব্যের অপ্রতুলতার থেকেও, চালের সঙ্কট মারাত্মক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিলো আমাদের। ভাত না খেলে বাঁচবো কী করে! ইতোমধ্যেই চালের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছিলো। পঞ্চাশ টাকা কেজিতে সাধারণ মুদি দোকানে চাল বিক্রি হতে দেখেছিলাম সে সময়। ২০০৭-০৮ সালের কথা বলছি। কেবল ধনী লোকেরাই ক্রয় করতে পারতো। পরিষ্কার মনে পড়ছে, কী যে শ্বাস রূদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিলো দেশজুড়ে! তখন বাংলাদেশে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন পিনাক রঞ্জণ চক্রবর্তী। তার কাছে সহায়তা চাওয়া হয়। অনুরোধ করা হয়, বাংলাদেশে চাল রপ্তানির। এ সময় ভারত নামক বিশাল প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি আরেকবার আমাদের ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। দুর্যোগ কবলিত বাংলাদেশে বিরাট পরিমাণের চাল অত্যন্ত স্বল্প মূল্যে রপ্তানি করে, এ দেশের অগণিত দরিদ্র মানুষের মুখে ভাত তুলে দিয়ে, তাদের জীবন বাঁচিয়েছিলো ভারত। হ্যা, এই তো, পরিষ্কার মনে করতে পারছি, ভ্রাম্যমান চালের ট্রাকে, চালের বস্তায় গোটা গোটা হরফে লেখা, কৃষ্ণনগর, নদীয়া, পশ্চিম বাংলা, ভারত। আমি একাত্তর দেখিনি, ২০০৭ দেখেছি। নিশ্চিত দুর্ভিক্ষের হাত থেকে এই দেশটিকে বাঁচিয়েছিলো আমাদের প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রটি। আমি ভুলে যাইনি। আমি ভুলতে পারি না। কারণ আমার রক্ত বেইমানের রক্ত নয়, প্রতারকের রক্ত নয়, কৃতঘ্নের তো নয়ই। ভারতের কাছে আমার, আমাদের ঋণ, রক্তের ঋণ। প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে হলেও এই ঋণের প্রতিদান দিতে পারি। ভারতের যদি দরকার হয়, তাহলে আমি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে তাদের পক্ষে শত্রু দেশের সঙ্গে যুদ্ধ করতেও প্রস্তুত। সেটা চিন, পাকিস্তান যেই হোক।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:৫৪