মানুষ ইতিমধ্যে যখন উত্তপ্ত সময় পার করছে তখন মানুষের মধ্যে ভালোবাসা কি একমাত্র সমাধান হতে পারত না? কিন্তু মানুষ কেন আদিম সেই হিংসা বা হানাহানি থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না? আজ মানব সভ্যতার প্রায় ৭০ লক্ষ বছর পার হয়ে গেছে তবু কোথায় যেন সেই পিছুটান রয়ে গেছে।
বলে রাখা ভালো আমি এখানে ভালোবাসা বা প্রেম বলতে মানুষের মধ্যের সব রকম সম্পর্কে ভালোবাসার বিষয়টি মেনশন করেছি।
নিজের দৃষ্টিকোন থেকে কিছু বিষয় লেখার প্রয়োজন অনুভব করছি।
মানুষ শুধু নয় অন্য সকল জীব জগতের প্রাণী এমনকি উদ্ভিদের মধ্যেও নিজেদের মধ্যে এক অসম প্রতিযোগিতা দেখা যায়। এসবের পেছনে অনেক কারন থাকতে পারে যার সবটা লিখে শেষ করা যাবে না।
প্রেম মানুষের জীবনের খুব সাধারন আর প্রয়োজনিয় বিষয় হওয়া শর্তেও মানুষ যুগে যুগে এটাকে অস্বিকার করাকে প্রোগ্রেস মনে করে এসেছে। প্রেম যেমন মানুষে হয় তেমনি মানুষ তার স্বভাবগত ভাবে সুপিরিওরিটি গেইনিংএ অধিক বিশ্বাস করে। এটার শুরু মানব সৃষ্টির শুরু থেকেই ধারনা করা হয়। এদিক থেকে খুঁজে দেখলে বেশ কিছু রেফারেন্স পাওয়া যাবে যেখানে মানুষ শুধু নয় সকল প্রাণীর মধ্যে এই বৈশিষ্ট বিদ্যমান। মানুষের বেলায় না পাওয়া থেকে যে অস্তিত্ব সংকট তৈরি হয় সেখান থেকেই তৈরী ক্ষোভ থেকে সহংসতার সৃষ্টি হয়। মানুষ সমাজে বসবাস করে স্তর বিন্যাস প্রথা মেনে। এখানে স্তর তৈরী করতে ব্যাবহার করা হয় সমাজের কাছে একটা মানুষের গ্রহনযোগ্যতা কতোখানি এটার উপর ভিত্তি করে। তেমনি সমাজগুলোও টিকে আছে বিভিন্ন স্তর বিন্যাসে বিভক্ত রিতী মেনে। উদাহারন দেওয়া যায় যেমন কেউ মানুক বা না মানুক সাদা চামড়ার মানুষ গুলো সকল ক্ষেত্রে বিশেষ প্রিভিলেজ পায় সাধারন ইন্ডিয়ান ব্রাউন কমিউনিটি থেকে। এটার চাইলে হাজার উদাহারন দেওয়া যাবে তবে সেদিকে না গিয়ে যেটা বলতে চাইছি সেটা বলাই বরং ভালো।
এই বিভেদ বোধকে যদি সকল হানাহানির পিতা বলা হয় তবে ভুল বলা হবে না। নিজেরা মানুষ যখনই একতা বদ্ধ হয় এর বাইরের মানুষকে তারা তাদের অন্তুর্ভুক্ত যখন আর ভাবতে পারে না তখন তাদের সম্পর্কে ক্ষুব্ধ ধারনা পোষন করে। বাইরের মানুষকে তাদের ব্যাবহার্য সকল সুবিধা থেকে বিচ্ছিন্ন করার ফলে তৈরী ক্ষোভের কথা যা আগেই বলেছি তা আস্তে আস্তে একটি পরিনত রূপের আরেক নামই হানাহানি বা কিছু ক্ষেত্রে তাকে আমরা বলতে পারি কিছুক্ষেত্রে আইনের ভাষায় অপরাধ।
সমাজবিজ্ঞানী রিচার্ড কুইনি বলেছেন অপরাধ হচ্ছে সামাজিকতার প্রতিফলন।
এর অর্থ এই যে আমাদের এই সমাজের ব্যর্থতার প্রতিফলন আজ এই এতোবছর পরও যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা থেকে মানুষ বের হয়ে আসতে পারেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমরা দেখেছি মানুষের মধ্যকার এই হানাহানিকে তখনকার নব্য নাৎসিবাদ কোথায় নিয়ে ফেলেছিলো। বর্তমানেও এই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে এসেও আমরা হিংসা, অপরাধ ও হানাহানি থেকে বের হয়ে ভালোবাসার পথের সন্ধান পাচ্ছি না।
আমার ব্যক্তিগত বিশ্লেষন বলে আমরা যখন একে অপরের যত নিকট আসছি ততো অন্যের সাথে নিজেদের অমিলকে মেনে নিতে পারছি না বা অসন্মান করেছি। নিজেদের যতো কঠিন করছি পরিস্থিতিও ততোই কঠিন করে তুলেছি।
এখানে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পথ পরিক্রমায় বর্তমানকে এখানে কিছু রেফারেন্স দিয়ে তুলে ধরতে চাই। আশা করি সময় নিয়ে পড়বেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও পূর্ববর্তি ঘটনার প্রভাবঃ
খেয়াল করলে দেখা যাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তি সময়ে পূর্ব হতে আসা ক্ষোভ ও হিংসাই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলো। এবং ক্ষোভের ফলাফল যে শুধুই প্রতিহিংসা ডেকে আনে তার যোগ্য উধাহারণ হয়ে ওঠে এই অস্ট্রো-হাঙ্গারীয়ান যুদ্ধ যা অঞ্চলিক যুদ্ধ মেনে শুরু হলেও শেষ হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বপ্রস্তুতি হিসাবে। অস্ট্রো-হাঙ্গারিয়ান এম্পায়ারকে ১৯৭৮ সালে বার্লিন ট্রিটির মাধ্যমে বসনিয়া-হেযেগোভিনার নিরপেক্ষ শাষক হিসাবে দায়ীত্ব দেয়া হলেও তারা যখন তারা আক্রমন করে বসে তার পর থেকেই যেন ক্ষোভের বারুদ জমা হতে শুরু করে সার্বিয়া বা জাতিগত স্লাভদের মধ্যে। প্রিন্স ফার্দিনান্দ এর এসাসিনেশনের পর কি হয় তা আমাদের মোটামুটি জানা আছে। তবে আমার বলার মূল বিষয়টি আজ এই যে ইউরোপের শুরু থেকেই চলে আসা ক্ষোভের সংসস্কৃতি নিয়ে। জার্মানি তখন বেশ ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে নিজের ভুখন্ড ও ক্ষতিপুরোনের নামে অর্থ জার্মানি তো হারিয়েছিলোই সাথে তিনটি মোনার্কি (অটোমান, অস্ট্রো-হাঙ্গারিয়ান, জার) পতনের মুখোমুখি হয়। আমার আজো মনে হয় সে ঘটনার রেশ আজ ২০২২ এ পর্যন্ত বয়ে নিয়ে বেড়াতে হচ্ছে পৃথিবীর অধিবাসিদের। বৃটিশ/ফরাসিরা বা ট্রিপল এন্টেটিকে ভয় পেয়েছিলো জার্মানরা না তাদের তৈরি কলনিয়াল ব্যাবস্থায় হানা দেয়। রাশানদের সার্বিয়ানদের সমর্থন এসব ছাড়াও এসব ঘটনায় সব ঘটনার মূলে ছিলো এম্পেরিয়ালিজম ও পূর্ববর্তি রোশানলের ইতিহাস তৈরির কারন প্রতিশোধপরায়ণ মানব মস্তিস্ক। মানুষের মধ্যে এই মহাযুদ্ধের অর্থ খরচের মহাৎসবের ইতিহাস দেখলে রিতীমত চোঁখ কপালে উঠতে বাধ্য। যদি ইউরোপের ৬ টি দেশের সামরিক খরচ দেখা যায় তা ছিলো এ সময় ৪০০ মিলিওন পাউন্ড যা ৪ গুন বেশি ৪০ বছর আগের তুলনায়। নিচে রেফারেন্স দিবো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব পূর্ববর্তি ঘটনার প্রভাবঃ
এই ঘটনা প্রবাহের প্রবাহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিকা তৈরি করায় আমরা সবথেকে মারাত্মক ইতিহাস দেখতে পেয়েছি। মানুষের হিংসাকে যখন যুক্তিবাদ দিয়ে প্রচারনা করা হয় তখন মানুষ অনেক বেশি অকৃষ্ট হয়। অ্যারিস্টটল বলেছেন LOGOS যেটা মানুষকে নিজের মতাদর্শে পিছে টানতে তিনটি অব্যর্থ পন্থার একটি। বাকি দুটি হলো ETHOS, PATHOS। ETHOS হলো সেই পন্থা যা রেফারেন্স দিয়ে মানুষকে নিজের দিকে টানে আর PATHOS হলো সম্পূর্ণ ইমোশনাল করে দেওয়ার মাধ্যমে নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করা। জার্মানদের ভার্সাই চুক্তিকে নিজেদের অপমান বলে ধারন করা জার্মানদের ব্যবহার করতে ও নিজের মধ্যের ঘৃণার আগুন মানুষের মধ্যে ঢেলে দিয়ে ইচ্ছের পূর্ণ প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই হিটলারের মাধ্যমে। যার জন্য প্রথমেই LOGOS এর ব্যবহার করেন তিনি এবং এর পর ক্ষমতায় এসেই PATHOS এর ব্যবহার করে অন্য সব যুক্তির খুন করেন এর মাধ্যমেই আধুনিক সমাজে আমরা নাৎসীবাদ ও ঘৃণা সাধারণ মানুষ পর্যায়ে ব্যবহার করার পলিটিক্সের দেখা পাই। এর আগে মোনার্কিতে আমরা সাধারন জাতিয়তাবাদের ঘৃণা দেখতে পাইনি যা এবার মোটামুটি কোন সংক্রমক রোগের চাইতে বেশি মারাত্মক ভাবে দেখা পাওয়া যায়। একই ভাবে জাপান ও অন্য দেশ গুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে আমরা আজ হিটলারের সময়ে প্রকাশ পাওয়া পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন সময়। যার উপরে সুপিরিওরিটি ও সুডোসায়েন্স কাজ করে যাচ্ছে। শুধুমাত্র সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ডিফেন্স বাজেটের বৃদ্ধি ছিলো প্রায় ৪৪ শতাংশ।
আজকের সমাজে প্রতিহিংসা ও বাস্তবতাঃ
আজকে আমাদের ইন্সডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট গুলোতে প্রতিহিংসার বাস্তবতা যদিও ইউরোপিয়ান ইতিহাসের থেকে ভিন্ন তবে এক ক্ষেত্রে সম্পর্কযুক্ত বটে। তো যাই হোক আমাদের মধ্যকার প্রতিহিংসা আমাদের মুক্তির স্বাদ দিতে পারছে না সেই শুরু থেকেই তারপরও আদিম এই চর্চা করে চলেছি যুগে যুগে। যার রিসেন্ট সংযুক্তি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এবছর সামরিক খাতে ব্যয় যুক্তরাষ্ট্র,চিন,ভারত ও রাশিয়া মিলে সারা পৃথিবীর ৬২ ভাগ করেছে। এবং হিসাব করে দেখলে এরাই বিশ্বের সব থেকে সংঘাত তৈরিকারি দেশ। আমাদের অনেকেই এই যুদ্ধে রাশিয়া আর নয়তো ইউক্রেন ন্যাটোকে সমর্থন করে যাচ্ছে। আপাত দৃষ্টিতে রাশিয়ার দোষ বেশি বলা চলে তার পরও সেই আদিম ইউরোপিয়ান সংঘাত হিংসার ইতিহাস প্রত্যক্ষ বা পরক্ষ ভাবে বহন করে চলেছে মানুষ পুরো পৃথিবীর মানুষ আজও। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বা বার্লিন ওয়াল ভাঙার মতো ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ের কিছুটা বলা যায় যা মানব ইতিহাসকে সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারার ইতিহাসে নজির তৈরি করেছে তারপরও আবার নতুন করে তৈরি হওয়া উত্তেজনা তার সম্পূর্ণ পরিপন্থি ঘটনা। এর আগে মধ্যপ্রাচ্যে তৈরি করে আসা ঘটনা গুলো নির্দেশ করে ইউরোপিয়ান ও আমেরিকানদের মানবতার বা সভ্যতার আইকন সেজে থাকতে চাওয়ার ব্যার্থতাকেই। এবার সেই ব্যার্থতা তাদের মূল ভূখন্ডে এবং মানব ইতিহাসের সব থেকে বিধ্বংসী অস্ত্রসস্ত্রের ঝনঝনানির সাথে। কিউবান মিসাইল সংকটের পর আবার একবার কি পৃথিবিকে পারমানবিক যুদ্ধের সম্ভাবনা খুব কাছ থেকে নাকি প্রত্যক্ষ করতে হবে মানব ইতিহাসের সব থেকে বড় মান সৃষ্ট বিপর্যয়কে? শান্তি ও জ্ঞানের চর্চা ইউরোপকে দিয়েছে উচ্চস্থান পৃথিবী দেখেছে শান্তি ও মিলে থাকলে কি করা সম্ভব তার পরও আমাদের পশ্চাদপদযাত্রা বারে বারে নিজেদের অস্তিত্ব করেছি বিপন্ন। এখন আমাদের গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে কাজ করা উচিৎ ছিলো সেখানে আমরা কি আছি? আজকে কর্পোরেট লাইফেও আমরা ভালোবাসাকে বিক্রি করে ম্যাটেরালিয়েস্টিক ক্যারিয়ারকে ও প্রতিযোগিতাকে করেছি ভালোবাসা। হয়তো সভ্যতায় প্রতিযোগিতা ভূমিকা রেখেছে শেষও কি করে দেয়নি? কালো কাপড় চোখে মিথ্যার পিছে ছুটে মানুষ নিজেই নিজের শত্রু। মানুষে-মানুষে ভেদাভেদে হয়েছে কারো স্বার্থরক্ষা কিন্তু পরিশেষে মানুষ হেরেছে জিতেছে হিংসা ও মৃত্যু।
ভালোবাসাকে মানুষ করেছে কঠিন হিংসাকে করেছে সহজ এটা কি সভ্যতা নাকি বর্বরতা?
ভালোবাসা কি খুব কঠিন?
প্রেমে পড়া কেন বারণ?
রেফারেন্সঃ
ফেডারেল ডিফেন্স বাজেট ইউএস ১৯২৯-২০১৭
রিচার্ড ফুইনি
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
কিউবান মিসাল ক্রাইসিস
হিটলারের আদ্যোপান্ত ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
ইউক্রেন ও রাশিয়া ক্রাইসিসের শুরু
ইউক্রেন ও রাশিয়ান যুদ্ধের বর্তমান
২০২২ সালে প্রকাশিত সামরিক ব্যয়ে শীর্ষ ৫ দেশ।
জার্মান সরকারের অ্যান্টিসেমিটিক প্রচারনার ফলে তখনকার পত্রিকায় অ্যালবার্ট আইন্সটাইন দেশ ত্যাগের পর প্রকাশিত কার্টুন যা এথনিক হেইটকে নির্দেশ করে।
সামরিক ব্যয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০২২ সকাল ১১:০৬