somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনে প্রথম বিয়ের জন্য পাত্র দেখা; Feeling টা অদ্ভুত ;) - পর্ব২

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিকাল থেকে আম্মু-বাবার Order দেয়া শুরু;
* রেডি হওয়া শুরু করো
* সুন্দর করে সাজো
* সুন্দর একটা জামা পর ইত্যাদি ইত্যাদি।
মনের মধ্যে তখন তীব্র বেগে ঝড় বোইতে শুরু। ঘরে আগুন লাগিয়ে দিতে ইচ্ছা করছিলো।
এমনটা মনে করার কারণও আছে।
এই ছেলে দেখার বিষয়টি আমার কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত ভাবে আসে। আগেরদিন দুপুর বেলা বাবা ফোন করে বলে যে আগামীকাল আমরা ছেলে দেখতে যাবো। আর যেমনটা এর আগে বললাম, এখানে আমার অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন কেও মনে করলো না। এই কথাটি আমি যখন শুনলাম তখন আমার মনের মধ্যে যে এক মুহূর্তে যে কত শত চিন্তা চলে আসলো এবং সাথে সাথেই চোখে পানি চলে আসলো।

অশান্ত মনের চিন্তা গুলো কিছুটা এরকম :
* আজ আমার পাশে 'সে' থাকলে মনে ইকটু সাহস পেতাম
* বাবার সাথে জমপেষ এক ঝগরা করতে হবে
* কিছু পাগলামি করতে হবে
* শুন্যের ও যে একটা মুল্য আছে সেই কথাটা আমাকেই প্রতিষ্ঠিত করতে হবে
* ফুপ্পিকে ফোন দিয়ে ইকটু চিল্লা-চিল্লা করতে হবে,যেন জীবনে আমার জন্য কোনো বিয়ের প্রস্তাব আনার আগে, আমার সাথে যেন একবার পরামর্শ করে নেয়।
মনের মধ্যেই সব Plan করছিলাম আর অপেক্ষা করছিলাম শুধু একটি আকর্ষণীয় সুযোগের।

মাথায় তখন এই প্রশ্নগুলাও আসছিলো:
* ছেলে যদি বুড়া হয়? আমাকে প্রশ্ন করলে আমি কি বলবো?
* আমার boy-friend এর ব্যাপারে কিছু জানতে চাইলে কি বলবো? (কী আর বলবো? সত্যি কথাই বলবো যে কোনো প্রেমিক নাই, ব্যাস।)
* পরিবারের সবাই কেমন হবে?
* পরিবারের মহিলারা কি কট্টর হিজাবী জাতীয়? তারা কি খুব গম্ভির একটা মুড নিয়ে থাকবে?
* তারা আমাকে কি কি প্রশ্ন করবে?
* আমাকে আর ছেলে কে কি একা একা কথা বলার জন্য অন্য কথাও যেতে বলবে?
এমন ধরনের সাক্ষাতে কি কি হয়, সে সম্বন্ধে আমি একেবারেই অনবগত। আর কিছু জানবোই বা কিভাবে? এটাই তো আমার জীবনের প্রথম এমন অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে ;)

দেখতে দেখতে, ভাবতে ভাবতে বিকাল হয়ে এলো। আমি, মা, বাবা সবাই সেজে-গুজে রওনা দিলাম ছেলে দেখার উদ্দেশ্যে।
ছেলের সাথে দেখা করবো বসুন্ধরা সিটির একটি ফাস্টফুড এ।
আমাদের পরিবার থেকে আমার ফুপ্পি-ফুপ্পা, ছোট চাচা এবং আমরাই গিয়েছিলাম। তাদের পক্ষ থেকে আমার ফুপ্পির সেই ঘটক বান্ধুবি,তার বর, ছেলের এক মানুষ ক্ষেকো ফুপ্পা( কেনোনা পুরাটা সময় সে তার চোখ এবং মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে আমাকে গিলেছেন) এসেছিলেন।ছেলের সাথে আরো কারা আসে, জানিনা।
চলে গেলাম আমরা ফাস্টফুডে।

আমরা যে যার জায়গা মত বসে ছেলের পরিবারের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
অবশেষে ছেলের পরিবার আসলো। ছেলে এবং তার পরিবার কে দেখে প্রথমেই আমার মনের প্রথম এবং চতুর্থ সন্দেহ দূর হল-
-"ছেলেটা দেখতে বুড়া না"
-"ছেলের পরিবারের কেও হিজাবী নন"

হাসি মুখে সবার সাথেই পরিচয় হল।
ছেলে দেখতে অতটা আহামোরি না, আর্মি অফিসারের মত দেখতে, শ্যামলা বর্ণের।কিন্তু খুব একটা আবার বাজেও না।
ছেলের মা দেখতে খুবই সুন্দর এবং স্মার্ট। মহিলা খুব হাসি খুশি মেজাজের। মজার ব্যাপার হচ্ছে মহিলা কে দেখে একদমই মনে হয়না যে উনি উনার বড় ছেলের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন। খুবই কম বয়সী দেখতে।
ছেলের বাবাও বেশ ফুরফুরা মেজাজের। সারাক্ষণ ভদ্রলোকের মুখে হাসি ছিলো।

বিরক্ত লাগছিলো শুধু ছেলের ফুপার উপোর। লোকটি বোধহয় একটি নতুন মেমোরি কার্ড কিনে এনেছেন শুধু মাত্র আমার ই ছবি তোলার জন্য। Click! Click! Click! চালিয়েই গেলেন পুরাটা সময় ধরে। তবে আমারও যে ক্যামেরা দিয়ে তাদের ছেলে কে ঘায়েল করিনি তাও না। আমাদের পরিবারের সবাই ও ছেলের ছবি দেখবে। তাই আমাদের পক্ষ থেকেও চলল Click! Click! Click! ;)
'হাওয়া বার্তা সংস্থা' থেকে পাওয়া খবর গুলো ও ভুল প্রমাণিত হল।

ছেলে কোনো MBA করা, বাপের হোটেলের Manager নন। বরং কানাডার কোনো এক ইউনিভার্সিটি থেকে IT তে Graduate করে বর্তমানে একটি পার্ট-টাইম জব করছেন এবং তার পাশা-পাশি পড়া-শুনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ছেলেরা দুই ভাই। ছেলের পরিবারের সাথে ছেলের দুই খালা এবং তাদের ছেলেরাও এসেছিলো। সবাই বেশ স্মার্ট এবং হাসি-খুশি।
আমরা অনেকক্ষণ ফাস্টফুড গল্প করলাম। তারা আমার কাছে আমার নাম টা পর্যন্ত জানতে চেয়েছিলো কিনা মনে নেই। সবাই যার যার মত কথা বলছিলো। হাসা-হাসি করছিলো। যেনো কোনো Family Get-together। কেও আমাকে কোনো প্রশ্নের গুলি দিয়ে ঘায়েল করলোনা। আমি পুরাটা সময়ই আকাশ-বাতাসের দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। ছেলেটাও একদম চুপ-চাপ ছিলো। পাত্র-পাত্র কোন ভাব ই ছিলোনা ছেলেটার মধ্যে।

সম্পুর্ণ বিযয়টির সাথে আমি আস্তে আস্তে নিজেকে মানিয়ে নিলাম। ছেলের পরিবার কে আমার ভালোই লাগলো। কোনো অহংকার নেই, কোনো গাম্ভীর্য নেই। আমার মনের যত ভয়, ক্ষোভ, হতাশা, আস্তে আস্তে সব দূর হয়ে গেলো।
ছেলের অতিরিক্ত চুপ করে থাকা দেখে এক পর্যায়ে ছেলের খালাই ছেলে কে কিছু বলতে বলল। ছেলেটাও কি তখন আমার মতই মানষিক অবস্থায় ছিলো বলে নাকি অন্য কোনো কারণে জানিনা, সে বলল যে তার বলার কিছুই নেই।

অবশেষে সাক্ষাতকার শেষ হলো। আমরা সবাই বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে সেখান থেকে বের হলাম। সবার কাছ থেকে হাসি মুখে বিদায় নিয়ে চলে এলাম।
জীবনে প্রথম এমন এক অভিজ্ঞতা হলো। ভালোই লাগলো এক কথায়। আশা করি ছেলেটি জীবনে অনেক সফল হোক।

আমার কপলাে এই ছেলের সাথেই আামর বিয়ে লেখা আছে কিনা জানিনা, তবে দোয়া করি, ছেলেটি যেন তার মনের মত কোনো মেয়েকে খুজে পায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:১১
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×