সকালের মোবাইল এলার্মে ঘুম ভাঙ্গলো।উঠে বসে দেখি মোবাইলে এখনো ফেইসবুকে লগ ইন করা।মনে পড়লো রাত ২টা পর্যন্ত ফেইসবুক চালানোর পর কখন যে ঘুম আসলো।ঘুমের রেশ কাটেনি।ভাবলাম আরেক দফা আবার ঘুম দিব নাকি।কিন্তু তখনই মোবাইল কাপিয়ে রনির ফোন আসলো।জরুরী তলব।ধানমন্ডি লেকে যেতে হবে।সোজা বাথরুমে গেলাম।বেশ অনেকখন ধরে সাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে থাকলাম।ঘুমের রেশ কিছুটা কাটলেও মাথা ভার ভার লাগছে।মাথার মাঝের বোঝা হঠাৎ করে মনে চেপে বসলো।দ্রুত জামা কাপড় পড়লাম বাসার চাবিটা নিয়ে বেরিয়ে এলাম।বাসার নিচের দোকান থেকে দিনের প্রথম গোল্ডলিফ ধরালাম।যতই সিগারেট পুড়ছে মাথা ও মন ততই হালকা হচ্ছে।সিগারেটের ঘুর্ণি ঝড় আমার মনের বোঝা যখন উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে তখন রিক্সা ধানমন্ডি ২৮ এর সামনে।রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম তাই ধানমন্ডি ২৮ এ নেমে গেলাম।বাকি রাস্তা হেটেই যাওয়ার পরিকল্পনা করলাম।রিক্সা ভাড়া দিয়ে সামনের চায়ের দোকান থেকে আবার একটা গোল্ডলিফ ধরালাম।হঠাৎ এক নারী কন্ঠে যেন আমার নাম উচ্চারিত হল।নারী কন্ঠ সর্বদাই আমাকে আকর্ষিত করে।তবে এই নারী কন্ঠ বেশ পরিচিত মনে হচ্ছে।যার কন্ঠ হতে পারে বলে অনুমান করছি যদি এটি তার কন্ঠ হয় তবে আমার বিস্ময়ের কোন সীমা থাকবে না।আমি নারী কন্ঠের উৎসের দিকে যখন ঘুরলাম এবং যাকে দেখলাম বেশ বিস্মিতই হলাম।আমাকে ডাক দিলো নীরা।তার দিকে তাকিয়ে আমি হারিয়ে গেলাম কল্পনায়।নীরা ছিল আমার হৃদয়।যাকে আমি ভালোবাসতাম হৃদয় এর মাঝ থেকে সব উজার করে।প্রতিদিন সুর্যের হেলে পড়া দেখতাম তার কাধে মাথা রেখে দেখতাম পাখির ডানায় সোনালী আলোর ঝলকানি।যাতে সে হয়ে উঠতো আরো রূপসী।যখন এগুলো ভাবছি তখন কখন যে সিগারেটের ঘূর্ণি ঝড় বড় থেকে আর বড় হতে থাকলো খেয়ালই ছিলো না।সম্বিত ফিরলো নীরার পুনরায় ডাকে।সে এসেই হেসে হেসে বললো কি এখনো এই সিগারেটের অভ্যাস যায়নি!!!!আমি উত্তরে হেসে সিগারেটটা ফেলে দিলাম।সে আমার সাথে কুশলাদি বিনিময়ের পর আমকে বললো চলো কথাও বসি।আমি ভেবেছিলাম কুশলাদি বিনিময়ের পর সে বিদায় নিবে তাই তার এই হঠাৎ প্রস্তাবে বেশ অবাক হলাম।কি করবো বুঝতে পারতেসিলাম।সে এক রকম জোর করে নিয়ে বিএফসিতে ঢুকলো।আমি বেশ সংকোচ বোধ করছিলাম।কিন্তু আস্তে আস্তে তার সামনে সেই পূর্বের মত হয়ে গেলাম।ভালোই লাগছে আবার ভিতর ভিতর এক দ্বিধাও কাজ করছে।বিবেক আমাকে প্রতি মূহুর্তে পুড়াতে লাগলো।মনে হতে থাকলো সে একবার আমাকে ধোকা দিয়েছে আরেকবার দিতে কতক্ষণ।এভাবে বেশ কিছুক্ষণ বিবেকের সাথে যুদ্ধ করার পর বিবেকই জয়ী হলো।তাকে কিছু বুঝতে না দিয়ে একটা হাসি দিয়ে উঠে চলে এলাম।বেরিয়ে রনিকে ফোন দিলাম আজকে আমি আসবো না।পূনরায় একটা গোল্ডলিফ ধরিয়ে রিক্সায় উঠে বাসার উদ্দ্যেশে যাত্রা করলাম।ভাবতে থাকলাম জীবনের এই যুদ্ধে একা পথ চলবো তাও এমন কোন নরীকে আমার ভালোবাসা দিবোনা যে সেটার যোগ্য না।এসব ভাবতে ভাবতে একের পর এক গোল্ডলিফ পুড়লো ঠোটের আগায়।দৃষ্টি সেই সীমাহীন নীল তেপান্তরে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৩৭