somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি এবং তারা তিনজন...

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমেই আমার পরিচয়
দেই ।
আমি বৃক্ষ,বৃক্ষ মানব ।
আমি বহুদিন ধরে চিন্তা,
গবেষণা আর রাত
জেগে জেগে ভেবে একটা
জিনিস বুঝেছি যে আমি
মানুষ নই,আমি আসলে
একটা বৃক্ষ ।
আমার নিবাস ঐ দূর
কোনো বনের গভীরে
যেখানে মানুষের পায়ের
ছাপ পড়েনি,সেখানে
আমার সত্তা থাকে আর
শুধু একটা ফাঁপা বাঁশের
ন্যায় এই মনুষ্য সমাজে
আমি বিচরণ করছি এবং
আমার মনে হয় যে,
কোন এক রাতে আমি
ঘুমিয়ে পড়লে
জেগে দেখবো আমি
কোন এক গভীর বনে
দাঁড়িয়ে আছি,সেখানটা
আমার কাছে অপরিচিত
হলেও আমি সেখানের
বাসিন্দা ।
আমাকে ভুল করে কে
যেনো এই মানবসমাজে
রেখে গেছে ।
আমি বৃক্ষ,বৃক্ষ আমি,
আমি ও বৃক্ষ,বৃক্ষ ও আমি ।।


মজিদ সাহেবের
বয়স প্রায় ৮৫ বছর ।
পেশায় তিনি একজন
ভ্যানচালক ।
আমার সাথে তার
পরিচয় এক আকাশ কালো
মেঘলা দিনে ।
আমি যেনো কোথায়
গিয়েছিলাম ।
ফিরে আসছিলাম হেঁটে
হেঁটে ।
চারদিকে নিকষ কালো
আঁধারে ঢেকে গিয়েছিলো ।
আমি দ্রুত পায়ে হাঁটতে
লাগলাম ।
বিনামেঘে বজ্রপাত হচ্ছিল,
আমি ভয়ে,আতংকে চুপসে
যাচ্ছিলাম ঠিক তখন
মজিদ সাহেব পিছন থেকে
উঠে এসে বললেন-
বাবা,ভ্যানে উঠো ।

আমি তাকে বাসার
ঠিকানা বলিনি তবু সে
ঠিকঠাক আমাকে পৌছে
দিলো ।
আমি তাকে টাকা দিলেও
সে নেয়নি ।

সালাউদ্দীন সাহেব একজন
দিন মজুর,
দিন এনে দিন খান ।
কখনো মাটি কাটেন,
টুকিটাকি ব্যবসা করেন
আবার মাঝে মাঝে
বিরস হয়ে বসে থাকেন ।
আমার সাথে তার পরিচয়
অনেকটা অলৌকিকভাবে ।
আমি কলেজে যাচ্ছিলাম,
তখন নতুন কলেজে
উঠেছি ।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে
কিছুদূর যেতেই দেখলাম
একজন পঞ্চাশর্ধ ব্যক্তি
একটা গাছ ধরে দাঁড়িয়ে
আছেন ।
তার পরণে একটা তালি
মারা লুঙ্গি,গায়ে তিলে
পড়া একটা পাঞ্জাবী ।
আমাকে দেখে বললেন-
বাবা,
আমাকে একটু হাসপাতালে
নিয়ে যাবে,আমার পা
মচকে গেছে ।
কিভাবে পা মচকালো আমি
তা জিজ্ঞেস করিনি ।
আমি তাকে নিয়ে হাসপাতালে
গেলাম ।
হাসপাতালে পা রাখতে
গিয়েই উনি বললেন-
বাবা পা ঠিক হয়ে গেছে ।
আমি কথা না বাড়িয়ে
চলে আসলাম ।

কাওসার কাগজ টোকায় ।
প্রতিদিন এক বস্তা কাগজ
টোকালে সে ৫০ টাকার
মতো পায় ।
একদিন দুপুরবেলা আমি
ঘুমাচ্ছিলাম ।
হঠাত্‍ ঘুমের ঘোরে
একটা শীতল হাতের
ছোঁয়া পেলাম আর শুনতে
পেলাম-
ভাই উঠেন,উঠেন ।
আমি আতংকে ঘুম থেকে
উঠে দেখি গায়ে ঢোলা
একটা জামা আর
হ্যাফপ্যান্ট পরা অবস্থায়
একটা ছেলে আমার খাটের
কিনারায় দাঁড়ানো ।
আমি ভয় পেলে বললাম-
নাম কি ? কি চাও ?
সে তার কাঁধে থাকা
ব্যাগ থেকে একটা ডায়রী
বের করে দিয়ে বললো-
এই নেন আপনার খাতা ।

আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম
কারন ডায়েরীটা আমার
জীবনের প্রথম লেখা
ডায়েরী ।
অসংখ্য শৈশব ঐ ডায়েরীতে
লিপিবদ্ধ ।
আমি ডায়েরী থেকে মুখ
ফিরিয়ে দেখি সামনের
ছেলেটি নেই ।
অন্য একদিনের কথা ।
আমি একা একা হাঁটতে
অনেকদূর চলে গেছিলাম ।
হঠাত্‍ ভয় লাগলো যে
বেশ দূরে এসে গেছি
ঠিক তখন দেখি সেই
ছেলেটি কাঁধে একটা
ব্যাগ নিয়ে আসছে ।
আমি তাকে ডাক দিয়ে
নাম জিজ্ঞেস করলাম ।
সে বললো তার নাম
কাওসার,সে কাগজ
টোকায় ।
তার আপন বলে জগতে
কেউ নাই ।
কাওসার আমার সাথে
বাড়ি পর্যন্ত আসলো ।
আমি তাকে থাকতে
বললাম ।
সে বললো,আমি ঘুমাই না ।।

-বাবা,কেমন আছো ?
:জী,ভালো ।আপনি ভালো ?
-গরীব মানুষের আবার
ভালো থাকা ।বাবা,আমি
তোমার পাশে বসতে পারি ?
:হ্যা,পারেন ।
আপনার জন্ম কত সালে,
মনে করতে পারবেন ?
-সেটা তো বলতে পারবো
না বাবা,আমি মূর্খ মানুষ ।
তয় বাবা,আমি ৫২ সাল
দেখেছি,ছেলেগুলি কিভাবে
বুকের রক্ত দিলো তা
জানি ।
:ভাষা আন্দোলন কথা
বলছেন ?
-হ বাবা,টগবগে কটা
ছেলে সামান্য একটা
ভাষার জন্য জীবন দিলো ।
:সামান্য বলছেন কেনো !
-বাবারে,
যার জন্য জীবন দিছে
তার কি কোনো দাম আছে ?
ভ্যান চালাই,কত জন ভ্যানে
ওঠে,কৈ কাউকে তো শুদ্ধভাবে
বাংলা কৈতে শুনিনি,
কি কি আবিজাবি মিশিয়ে
কথা কয় আর কিসব গান
শোনে আবার তার সাথে
সুর মেলায় ।ছেলেগুলি
ছিল বোকা,শুধু শুধু
জীবন দিয়েছে ।
একটা যুবকও দেখিনা
যার মইধ্যে দেশপ্রেম আছে ।

-আমি কি বসতে পারি ?
তাকিয়ে দেখি সালাউদ্দিন
সাহেব ।আমি বললাম-
জী বসুন ।
-কি কথা বলছেন আপনারা ?
:৫২ সালের ভাষা
আন্দোলনের কথা ।
এখনকার যুব সমাজ বাংলা
ভাষার প্রতি টান অনুভব
করেনা তাই ।
-আরে বাবা,আমি ৭১
সালে একজন যুবক ছিলাম ।
যখন শুনলাম পাকিস্তানী
হারামীরা আমাদের দেশের
মানুষ মারছে,আমি তখনই
যুদ্ধে চলে গেছিলাম ।
:আপনি মুক্তিযোদ্ধা !
-কাউরে বলিনারে বাজান ।
কত রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধ
হতে দেখলাম আর আমার
বড় মেয়েটাকে গত বত্‍সর
যৌতুকের টাকা দিতে পারি
নাই বলে তাকে মেরে ফেলা
হয় ।

সালাউদ্দীন সাহেব কেঁদে
উঠলেন ।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিলো ।
আলো ঝাঁপসা হতে লাগলো ।
দূর থেকে কে যেনো হেঁটে
আসছিলো ।
কাঁছে আসতেই দেখি
কাওসার ।
আমি বললাম,
কি ব্যাপার কাওসার,
কেমন আছো ?
কাওসার করুণ কন্ঠে
বললো- ভাই তিনদিন
কিছু খাইনা,হাঁটতে কষ্ট
হচ্ছে ।

তার কথা শুনে মজিদ
ও সালাউদ্দীন সাহেব
একসাথে বলে উঠলেন-
খাবা কিভাবে বাবা,
দ্যাশের সবটেকা,খাবার
তো বড়লোককে ঘরে ।

মজিদ ও সালাউদ্দীন
সাহেব একসাথে উঠে
কাওসারকে বললেন-
আয় বাবা আমাদের
সাথে...
কাওসার হাঁটা শুরু করলো ।
আমি উঠে বললাম-
আপনারা কারা ?
তখন সন্ধ্যা নেমে গেছে,
সবকিছু অস্পষ্ট ।
তারা তিনজন একসাথে
আমার দিকে তাকিয়ে বললো-
আমরা বৃক্ষ !!!




সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:২০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×