ফেসবুকে সেদিন এক বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তের পোস্ট দেখলাম- ভারতের সাথে বাংলাদেশের তুলনা। চমকে উঠবেন না, তুলনাটা বর্তমান সময়কে কেন্দ্র করে নয় মোটেও। টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির পর থেকে এ পর্যন্ত সামগ্রিক দলগত পারফর্মেন্স এর একটা চিত্র। যারা জানেন না তারা আমার মতো রীতিমতো চমকে উঠবেন। প্রায় সবদিক দিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে। ভারত আমাদের প্রতিবেশী এবং বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। কিন্তু বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের ভয়ংকর শত্রুর নাম ভারত। টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের নীতি এবং অবস্থান তাই বলে। সবচে ন্যক্কারজনক যে জিনিসটা, সেটা হলো- ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ না খেলা। ভারতের মতো ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়াও একই পথে হাঁটার কারণে গোটা বছরে বাংলাদেশের অতি সংক্ষিপ্ত ক্রিকেট সূচি বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতির পথে মারাত্বক প্রতিবন্ধকতা। টাকা এবং জৌলুসের খেলা আইপিএল এর জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার ভয়ে বিপিএলে খেলোয়াড় না পাঠানোর হঠকারী সিদ্ধান্ত ভারতের মতো অহংকারী ক্রিকেট বোর্ডই নিতে পারে। গত বিশ্বকাপে আম্পায়ারদের মাধ্যমে বাংলাদেশেকে হারিয়ে দেওয়ার টাটকা ক্ষতটার কথা কি ভোলা যায়?
তবে এক জগমোহন ডালমিয়া ছিলেন স্রোতের বিপরীতে। বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তিতে এই মানুষটির নিঃস্বার্থ ভূমিকা ছিলো। ব্যস ওই পর্যন্তই। বিগ থ্রির রাক্ষসী আচরনের কারনে বাংলাদেশের চলার পথটা শ্বাপদসংকুলই ছিলো। টেস্ট প্লেয়িং নেশন হওয়ার পরও রেংকিং এর মারপ্যাঁচে বাংলাদেশকে বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করার জন্য এখনো বাছাইপর্ব খেলে আসতে হয়। অতি সম্প্রতি যোগ হলো ষড়যন্ত্রের নুতন মারণাস্ত্র। গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশ দলে খেলে যাওয়া তাসকিন এবং আরাফাত সানির নাকি বোলিং অ্যাকশন অবৈধ!!! সবচে যে জিনিসটা ধর্তব্য- যে আম্পায়া মহোদয় (রড টাকার) এর রিপোর্টে তাসকিন অভিযুক্ত, তার পরিচালনায়ই তাসকিন বোলিং করেছে আগে, তখন সমস্যা হয়নি। আর হঠাৎ করে বিশ্বকাপের মতো বড়ো একটি মঞ্চে এ্ই উদীয়মান তরুন সম্ভাবনাময় বোলারের মাথার উপর চাপিয়ে দেওয়া হলো পাহাড়সম এক বোঝা। আরাফাত সানির কথা বললাম না এ কারনে, ঘরোয়া লিগে নাকি দেশের কোচ কিংবা আম্পায়াররাই সমস্যা দেখেছিলেন।
প্রথম আলোর ক্রীড়া সাংবাদিক উৎপল শুভ্রর সাথে ইন্টারভিউতে বাংলাদেশ বিদ্বেষী হিসেবে (কু)খ্যাতি পাওয়া রমিজ রাজাকে দেখলাম ডিগবাজি মারতে। বললো, বাংলাদেশের জন্য তার নাকি ভালোবাসাই আছে। কিন্তু তাসকিন প্রসঙ্গ আসতেই সে তার স্বরুপে ফিরে গিয়ে বললো- বাংলাদেশের দর্শকেরা নাকি মনে করে গোটা দুনিয়াই তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
বাংলাদেশের দর্শকরা আবেগপ্রবন ঠিকই, কিন্তু হিসাবের মারপ্যাঁচ তারাও বোঝে। ক্রিকেট দুনিয়ায় যেকোন দলকে হারানোর সামর্থ্য বাংলাদেশের আছে। এটা প্রমাণিত সত্য। যুগ যুগ ধরে চলে আসা ইনডিয়া-পাকিস্থান দ্বৈরথের কথা মানুষ এখন আর ততোটা ভাবেনা। পাকিস্থানের বর্তমান দলটি অনেক বেশি অনভিজ্ঞ এবং তাদের পারফর্মেন্সও ততোটা আশাব্যঞ্জক নয়। বিশেষ করে ভারতের সাথে নিকট অতীতে এই দলটি নিয়মিত হেরেই চলেছে। তুলনায় বাংলাদেশের- সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, মাশরাফি অনেক দিন
ধরেই দলে খেলছে। সেই সাথে দলে যোগ হয়েছে নতুন দিনের কান্ডারী- সাব্বির, সৌম্য, মুস্তাফিজ, তাশকিনের মতো ম্যাচ উইনিং প্লেয়ার। বাংলাদেশের এই প্লেয়াররা যদি ঠিকঠাক ক্লিক করে, তাহলে বিপক্ষ দলের অবস্থা কি হবে তা সহজেই অনুমেয়। চাই কি সে দল ভারত কিংবা পাকিস্থান।
সম্ভবত এখানেই সবার গাত্রদাহ। পুঁচকে সেদিনের বাংলাদেশ, যারা কদিন আগেও প্রত্যেকটা ম্যাচে সম্মানজনক হারের জন্য খেলতো, রাতারাতি তাদের বড়ো দলে পরিণত হওয়াকে হয়তো মন থেকে মানতে পারছেনা অনেকেই। এই অনেকের মধ্যে আমি এগিয়ে রাখবো ভারতকেই। কারন- শুরু থেকেই ভারতের আচরণ বৈরী ছিলো বাংলাদেশের প্রতি। তাসিকিনের বিষয়ে একজন মানুষের প্রতি অপার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো। তিনি হলেন- বাংলাদেশ দলকে আমূল পাল্টে দেওয়া কোচ চন্ডিকা হাথুরাসিংহে। অকপটে তিনি বলে ফেলেছেন- যারা তাসকিন আর সানির বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ করছে, খোদ তাদের অভিসন্ধি নিয়েই সন্দিহান তিনি। বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি আরো বলেছেন- এতোদিন কেন প্রশ্নটা উঠলোনা, যেখানে এই আম্পায়ারের অধীনেই খেলে এসেছে তাসকিন।
হ্যাটস অফ টু ইউ কোচ!!!!
মাশরাফির ভাষ্য অনুয়ায়ী, তাসকিন অনেক ম্যাচিউরড বোলার। চাকার এর অপবাদে দমে যাবার পাত্র সে নয়। স্থানীয় কোচদের আশা- বাংলাদেশের এই তরুন তূর্কী খুব সহজেই বোলিং অ্যাকশন এর পরীক্ষায় পাশ করে যাবেন। চলুন সবাই মিলে এই প্রার্থনাই করি- সকল ষড়যন্ত্রের বিষদাঁদ ভেঙে যাবে, বাংলাদেশ যে দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে, তাকে থামাবার সাধ্য বিগ থ্রি কেন, কোন অপশক্তিরই নেই। তাসকিন এবং সানি পরীক্ষায় সফলভাবে উৎরে দলে যোগ দেবে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:১১