কাহিনী সংক্ষেপ
প্রেমের প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যার দায়ে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে এলেনর। সব সাক্ষ্যপ্রমাণ তার বিরুদ্ধে যাচ্ছে। আদালতে বসা এরকুল পোয়ারোই শুধু জানেন সে নির্দোষ। এলেনর আর ফাঁসির দড়ির মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন শুধু পোয়ারোই।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
‘এলেনর ক্যাথেরিন কার্লাইল, এতদ্বারা আপনাকে গত ২৭শে জুলাই মেরি জেরার্ডকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। আপনি দোষী, নাকি নির্দোষ?’
মাথা উঁচু করে সটান বসে আছে এলেনর কার্লাইল। তার কালো চুলের মাথার চিকন ভুরুর নিচে উঁকি দিচ্ছে একজোড়া উজ্জ্বল নীল চোখ।
চারপাশটা অস্বাভাবিক রকমের শান্ত।
আসামীপক্ষের আইনজীবী স্যার এডউইন বোলমারের বুক ঢিপঢিপ করছে। ‘হে ঈশ্বর! ও দেখি দোষী বলবে! যা ভয়টা পাচ্ছে...’
এলেনর মুখ খুললো,
‘নির্দোষ।’
রুমাল বের করে ঘাম মুছলেন আসামীপক্ষের উকিল। স্যার স্যামুয়েল অ্যাটেনবেরি ততক্ষণে দাঁড়িয়েছেন মামলার বিবরণী পড়তে,
‘মহামান্য আদালত, গত ২৭শে জুলাই বেলা সাড়ে তিন ঘটিকায় মেইডেন্সফোর্ডের হান্টারবেরিতে মেরি জেরার্ডের মৃত্যু হয়...’
উঁচু কণ্ঠের আওয়াজটা বেশ মধুর ঠেকছে এলেনরের কানে। কেমন একটা ঘোর লাগা শুরু হয়েছে তার। ছাড়া ছাড়া দুই-একটা কথা কানে আসছে শুধু,
‘মামলাটি অদ্ভুতরকম স্পষ্ট...’
‘...আমাদের কর্তব্য...’
‘...কারণ ও সুযোগের প্রমাণ...’
‘অভিযুক্ত বাদে মেরি জেরার্ডকে হত্যার পেছনে আর কারো কোনো কারণ ছিলো না। তরুণীটিকে তার মিষ্টি স্বভাবের জন্য সকলে পছন্দ করতেন। তার কোনো শত্রু ছিলো না...’
মেরি। মেরি জেরার্ড! সব যেন কত দূরের কাহিনী! কত আগের! কিছুই যেন আর সত্যি নেই...
‘...নিম্নোক্ত বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি:
১. বিষ প্রয়োগের জন্য অভিযুক্তের কী সুযোগ এবং উপায় ছিলো?
২. এর পেছনে তার কী কারণ ছিলো?
‘আপনাদের সামনে আমি উপস্থাপন করছি মামলার সাক্ষীদের...’
‘মেরি জেরার্ডকে বিষপ্রয়োগের জন্য অভিযুক্ত বাদে আর কারো কোনো সুযোগ ছিলো না...’
এলেনরের কাছে সবকিছু ধোঁয়াশার মত লাগছে। তারই ফাঁক গলে কানে আসছে ছন্নছাড়া কিছু শব্দ:
‘...স্যানউইচ...’
‘...মাছের ভর্তা...’
‘...শূন্য বাড়ি...’
শব্দগুলো যেন সুঁইয়ের মত ক্রমাগত খুঁচিয়ে যাচ্ছে এলেনরকে।
আদালতের সারি সারি মুখগুলোর মাঝে একটা বড় মুখ নজর কাড়লো তার। এরকুল পোয়ারো বিশাল গোঁফ আর তীক্ষ্ম চোখজোড়া নিয়ে একপাশে মাথা হেলিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
‘উনি জানতে চাচ্ছেন আমি ঠিক কেন এটা করেছি। উনি দেখতে চাচ্ছেন আমি কী ভাবছিলাম- আমার হৃদয়ে কী ছিলো...
হৃদয়...? ঝাপসা লাগছে সব... একটু ঝটকা লাগলো হঠাৎ... রডি। লম্বা নাক... ছোট্ট মুখ... রডি! চিরচেনা রডি... হান্টারবেরিতে একসাথে রাস্পবেরি খাওয়া, খালের পাড়ে দৌড়ে বেড়ানোর দিনগুলো... রডি, রডি, রডি...’
আরো কয়েকটা মুখ ভেসে উঠলো তার সামনে। নার্স ও’ব্রায়েনের মুখটা একটু খোলা। নার্স হপকিন্সের আত্মতৃপ্ত চেহারা। পিটার লর্ড- দায়িত্ববান, সহৃদয়... কেমন যেন- স্নিগ্ধ! কিন্তু এখন তাকে কেমন লাগছে? হতাশাগ্রস্ত? হ্যাঁ, সেটাই। সবকিছুতে বড় আঘাত পাচ্ছেন বোঝা যাচ্ছে। অথচ তার- নাটকের মূল চরিত্রের কিছুই গায়ে লাগছে না!
খুনের দায়ে ঠাণ্ডা মাথায় কাঠগড়ায় বসে আছে সে।
হঠাৎ তার ভেতরে কেমন যেন নাড়া লাগলো। কুয়াশা কিছুটা হালকা হচ্ছে। চারপাশের মানুষের চাহনি অনুভব করতে পারছে সে এখন। নিষ্ঠুর, অস্বাভাবিক এক আনন্দ নিয়ে শুনতে লাগলো সে সামনের লম্বা লোকটার কথাগুলো,
‘মামলার সকল তথ্যপ্রমাণ অত্যন্ত সরল এবং সহজবোধ্য। আমি একেবারে শুরু থেকে আপনাদের সামনে সব উপস্থাপন করছি...’
‘শুরু থেকে... শুরু থেকে? মানে উড়ো চিঠিটা যেদিন এসেছিলো, সেখান থেকেই...
(চলবে)