somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দংশন (আগাথা ক্রিস্টির 'স্যাড সাইপ্রেস' উপন্যাসের অনুবাদ) - পার্ট ১

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাহিনী সংক্ষেপ

প্রেমের প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যার দায়ে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে এলেনর। সব সাক্ষ্যপ্রমাণ তার বিরুদ্ধে যাচ্ছে। আদালতে বসা এরকুল পোয়ারোই শুধু জানেন সে নির্দোষ। এলেনর আর ফাঁসির দড়ির মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন শুধু পোয়ারোই।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

‘এলেনর ক্যাথেরিন কার্লাইল, এতদ্বারা আপনাকে গত ২৭শে জুলাই মেরি জেরার্ডকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। আপনি দোষী, নাকি নির্দোষ?’

মাথা উঁচু করে সটান বসে আছে এলেনর কার্লাইল। তার কালো চুলের মাথার চিকন ভুরুর নিচে উঁকি দিচ্ছে একজোড়া উজ্জ্বল নীল চোখ।

চারপাশটা অস্বাভাবিক রকমের শান্ত।

আসামীপক্ষের আইনজীবী স্যার এডউইন বোলমারের বুক ঢিপঢিপ করছে। ‘হে ঈশ্বর! ও দেখি দোষী বলবে! যা ভয়টা পাচ্ছে...’

এলেনর মুখ খুললো,
‘নির্দোষ।’

রুমাল বের করে ঘাম মুছলেন আসামীপক্ষের উকিল। স্যার স্যামুয়েল অ্যাটেনবেরি ততক্ষণে দাঁড়িয়েছেন মামলার বিবরণী পড়তে,
‘মহামান্য আদালত, গত ২৭শে জুলাই বেলা সাড়ে তিন ঘটিকায় মেইডেন্সফোর্ডের হান্টারবেরিতে মেরি জেরার্ডের মৃত্যু হয়...’

উঁচু কণ্ঠের আওয়াজটা বেশ মধুর ঠেকছে এলেনরের কানে। কেমন একটা ঘোর লাগা শুরু হয়েছে তার। ছাড়া ছাড়া দুই-একটা কথা কানে আসছে শুধু,

‘মামলাটি অদ্ভুতরকম স্পষ্ট...’
‘...আমাদের কর্তব্য...’
‘...কারণ ও সুযোগের প্রমাণ...’
‘অভিযুক্ত বাদে মেরি জেরার্ডকে হত্যার পেছনে আর কারো কোনো কারণ ছিলো না। তরুণীটিকে তার মিষ্টি স্বভাবের জন্য সকলে পছন্দ করতেন। তার কোনো শত্রু ছিলো না...’

মেরি। মেরি জেরার্ড! সব যেন কত দূরের কাহিনী! কত আগের! কিছুই যেন আর সত্যি নেই...

‘...নিম্নোক্ত বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি:
১. বিষ প্রয়োগের জন্য অভিযুক্তের কী সুযোগ এবং উপায় ছিলো?
২. এর পেছনে তার কী কারণ ছিলো?

‘আপনাদের সামনে আমি উপস্থাপন করছি মামলার সাক্ষীদের...’
‘মেরি জেরার্ডকে বিষপ্রয়োগের জন্য অভিযুক্ত বাদে আর কারো কোনো সুযোগ ছিলো না...’

এলেনরের কাছে সবকিছু ধোঁয়াশার মত লাগছে। তারই ফাঁক গলে কানে আসছে ছন্নছাড়া কিছু শব্দ:

‘...স্যানউইচ...’
‘...মাছের ভর্তা...’
‘...শূন্য বাড়ি...’

শব্দগুলো যেন সুঁইয়ের মত ক্রমাগত খুঁচিয়ে যাচ্ছে এলেনরকে।

আদালতের সারি সারি মুখগুলোর মাঝে একটা বড় মুখ নজর কাড়লো তার। এরকুল পোয়ারো বিশাল গোঁফ আর তীক্ষ্ম চোখজোড়া নিয়ে একপাশে মাথা হেলিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

‘উনি জানতে চাচ্ছেন আমি ঠিক কেন এটা করেছি। উনি দেখতে চাচ্ছেন আমি কী ভাবছিলাম- আমার হৃদয়ে কী ছিলো...

হৃদয়...? ঝাপসা লাগছে সব... একটু ঝটকা লাগলো হঠাৎ... রডি। লম্বা নাক... ছোট্ট মুখ... রডি! চিরচেনা রডি... হান্টারবেরিতে একসাথে রাস্পবেরি খাওয়া, খালের পাড়ে দৌড়ে বেড়ানোর দিনগুলো... রডি, রডি, রডি...’

আরো কয়েকটা মুখ ভেসে উঠলো তার সামনে। নার্স ও’ব্রায়েনের মুখটা একটু খোলা। নার্স হপকিন্সের আত্মতৃপ্ত চেহারা। পিটার লর্ড- দায়িত্ববান, সহৃদয়... কেমন যেন- স্নিগ্ধ! কিন্তু এখন তাকে কেমন লাগছে? হতাশাগ্রস্ত? হ্যাঁ, সেটাই। সবকিছুতে বড় আঘাত পাচ্ছেন বোঝা যাচ্ছে। অথচ তার- নাটকের মূল চরিত্রের কিছুই গায়ে লাগছে না!

খুনের দায়ে ঠাণ্ডা মাথায় কাঠগড়ায় বসে আছে সে।

হঠাৎ তার ভেতরে কেমন যেন নাড়া লাগলো। কুয়াশা কিছুটা হালকা হচ্ছে। চারপাশের মানুষের চাহনি অনুভব করতে পারছে সে এখন। নিষ্ঠুর, অস্বাভাবিক এক আনন্দ নিয়ে শুনতে লাগলো সে সামনের লম্বা লোকটার কথাগুলো,
‘মামলার সকল তথ্যপ্রমাণ অত্যন্ত সরল এবং সহজবোধ্য। আমি একেবারে শুরু থেকে আপনাদের সামনে সব উপস্থাপন করছি...’

‘শুরু থেকে... শুরু থেকে? মানে উড়ো চিঠিটা যেদিন এসেছিলো, সেখান থেকেই...

(চলবে)

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:১৬
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×