somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইউনিফর্ম ল' এবং মুসলিম বিয়ে

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"তিন তালাক" আর এর মাধ্যমে স্ত্রী ত্যাগের ব্যাপারটা পুরুষশাসিত সমাজের নারীদেরকে ছোট করার এক অপচেষ্টা।এর পক্ষে কথা বলাদের যুক্তি কিছু নাই...তারা শুধু বিভিন্ন ভাবে ধর্মের দোহাই দেয়।আর এই কালাজ্বরটা মুসলিমদের মধ্যেই আছে...অন্য কোনও ধর্মে স্ত্রীকে "তালাক তালাক তালাক" বললে সম্পর্কচ্যুতি ঘটে না।

কয়েকদিন ধরে ভারতীয় মিডিয়ায় ঝড় চলছে।যার মূল প্রব্লেমটা হলো "ইউনিফর্ম ল' "।ধর্ম ভিত্তিক আলাদা আলাদা আইন থাকবে না-একটাই আইন হবে সব ধর্ম নির্বিশেষে।সেটা সম্পত্তি বিষয়ক,পারস্পরিক,বৈবাহিক বা যে কোনও দ্বন্দ্ব মিটমাটের জন্য।

পত্র-পত্রিকা আর টেলি মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে যে ঐ ব্যাপারটায় ভারতীয় মুসলিম নেতাদের জোর আপত্তি।তাদের বক্তব্য হচ্ছে এতে তাদের ধর্মীয় স্বকীয়তা ক্ষুণ্ণ হবে।

বাকী সব ব্যাপারে আমি অজ্ঞ তাই ঐসব ব্যাপারে কিছু নাহয় না-ই বলি,কিন্তু বিয়ের ব্যাপারটা আশেপাশে দেখে আর সবারটা শুনে কিছুটা হলেও বুঝি।তাই সেটা নিয়ে সামান্য একটু বলি।সোজা ভাষায় যুক্তিমূলক আলোচনা।

প্রথমত,বিয়েটা একটা চুক্তি।মুসলিমদের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট "দেনমোহর" (বিবাহবিচ্ছেদের সময়ে নারীকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ) প্রদানের মাধ্যমে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রথাটাই বিয়ে।অতি নিকট প্রাচীণকালে(স্বাধীনতা যুদ্ধ পূর্ববর্তী বাংলাদেশে) এমন একটা ব্যাপার ছিল যে একজন পুরুষের এক স্ত্রীকে বেশিদিন ভালো লাগছে না তখন সে একাধিক বিয়ে করত।আবার কোনও ব্যাপারে খুব মেজাজ খারাপ হলো তখন সে হুটহাট "তালাক তালাক তালাক" বলে বসলেই ব্যস শেষ!বিয়ে পণ্ড!বিবাহবন্ধন ছিন্ন!ধর্মে এমন দৃষ্টান্ত আছে তা কেউই সুনির্দিষ্ট করে দেখাতে পারবে না কিন্তু এই ব্যাপারটা যুগ যুগ ধরে চলে আসছিল।এর হাজারো উদাহরণ সাহিত্য বা পুরনো টেলিভিশন আর্কাইভ ঘাঁটলে এখনও পাওয়া যাবে।দুইটা আমি ইন্সট্যান্টলি বলি-
১."হাজার বছর ধরে" উপন্যাসে মকবুলের টুনিকে তালাক দেয়া,
২.বিটিভিতে এক সময়ে খুব জনপ্রিয় একটা বিজ্ঞাপন ছিল যেটাতে কে.এস.ফিরোজ একজন কৃষকের ভূমিকায় থাকে যে ক্ষেত থেকে ফিরে এসেও ভাত রান্না হয়নি এই দেখে স্ত্রীকে(ডলি জহুর) মৌখিক তালাক দিয়ে দেয় আর স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেছে তাই ধরে নিয়ে শুরু করে দেয় মরাকান্না।
যে চুক্তি শুরুতে মৌখিক ছিল না,লিখিত ছিল-সেই চুক্তি ভাঙ্গার সময়ে নিজের সুবিধামত তাকে মৌখিক করে নিলো "স্বামী" নামক পুরুষ।লিখিত চুক্তি ভাঙ্গাটা কি ঐ "স্বামী" নামক পুরুষের ধর্মস্খলন ঘটায় না?

দ্বিতীয়ত,বিয়েতে স্বামী বা স্ত্রী দু'জনেই প্রতারিত/ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে আর তার জন্য ইউনিফর্ম ল' হলে তাতেও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।মুসলিমদের মধ্যে যেইসব স্বামীরা মনে করে যে হাজার হোক তারা পূর্ণ আস্থা আনতে পারছে না এবং তারা বিয়ের পর তাদের স্ত্রী দ্বারা প্রতারিত/অন্য যে কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে তারা ওয়েস্টার্ন কালচারের সাথে মিল রেখে বিয়ের আগেই সম্পত্তি ভাগাভাগির(বিবাহবিচ্ছেদে স্বামীর সম্পত্তির কতটুকু স্ত্রী/স্ত্রীর সম্পত্তির কতটুকু স্বামী পাবে তার সমঝোতা চুক্তি।চাইলে চুক্তিতে বিবাহবিচ্ছেদে কেউ কাউকে একটা টাকাও দিবে না এই মর্মেও চুক্তি করতে পারে।) প্রি-নাপচ্যুয়াল অ্যাগ্রিমেন্ট করতে পারে।
সে তার স্ত্রীকে দেনমোহরের টাকা থেকে বঞ্চিত করলে তার মুসলিম বৈবাহিক যে চুক্তি ছিল তা কি রক্ষিত হলো?হবার কথা না।আর তার যদি স্ত্রীকে দেনমোহরের টাকা দেবার ইচ্ছা থাকে তাহলে সে ঐ টাকা চুক্তির(প্রি-নাপচ্যুয়াল অ্যাগ্রিমেন্ট) বাইরে গিয়েও দিতে পারে।এটা তার ব্যক্তিগত ইচ্ছার প্রকাশক হবে।কোনও সমস্যা থাকার কথা না।

তৃতীয়ত,মুসলিমদের মধ্যে এক সময়ে একটা মহামারী ছিল যেটার নাম "বহুবিবাহ"।আমাদের জেনারেশনে অনেক না হোক বেশ কিছু এমন পাওয়া যাবে যাদের একের অধিক দাদী বা নানী ছিল বা আছে।অবস্থাটা এখন অতটা মন্দ না কারণ একের অধিক বিয়ের ক্ষেত্রে প্রথম স্ত্রীর অনুমতির ব্যাপারে আইন হয়েছে।অবস্থাটা ভালো না লিখে "মন্দ না" লিখার একমাত্র কারণ হলো এখনও আমাদের সমাজে এমন প্রচুর উদাহরণ আনাচে কানাচে আছে যেখানে পুরুষটি একাধিক বিয়ে করেছে এবং দুই সংসারই সে সমান তালে চালাচ্ছে তার অর্থনৈতিক সক্ষমতা আছে বলে আর স্ত্রীটি আইনি ঝামেলায় না গিয়ে নীরবে সহ্য করে কারণ তাতে সে উপকৃত হবেই তা শতভাগ নিশ্চিত না আর বেশিরভাগ নারীরই বিয়ের পর বাবার বাড়িতে ফিরে যাবার আর উপায় থাকে না(সামাজিক,পারিবারিক আর মানষিক চাপের বাস্তবতায়)।আমাদের সমাজে এখনও অনেক মেয়েই আছে যারা পড়ালেখা করছে স্রেফ একটা সার্টিফিকেটের জন্য আর তাই বিয়ে ভেঙ্গে গেলে তারা নিজের পায়ে দাঁড়াবে সেটার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে-তাই স্বামীরা অবাধে দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারে আর স্ত্রীরা সহ্য করে যায়।
স্ত্রী/স্বামী পরলোকগমণ করলে জীবিত জন আবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতেই পারে কিন্তু তারা জীবিত থাকতে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন না করেই একাধিক বিয়ে করা শুধুমাত্র আইনের চোখে যে অনৈতিক তা না,সমাজের জন্যও হানিকর।কারণ,একজন এমন করে পার পেলে বাকীরা শ'গুণে উৎসাহিত হবে আর বিয়ে করতে পিছপা হবে না,শুধু যদি তাদের অর্থনৈতিক সামর্থ্য থাকে।
ধর্মে কী বললো তা নিয়ে অনেকে শুরু হয়ে যেতে পারেন কিন্তু একটাবার ভেবে দেখেছেন যে বহুবিবাহ ব্যাপারটা ঠিক কীভাবে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে?একজনের আগের স্ত্রীকে আর ভালো লাগছে না/পরের জনকে বেশি ভালো লাগছে তাই সে দ্বিতীয় বিবাহ করেছে তাতে সে খুব স্বাভাবিকভাবেই তার প্রথম স্ত্রীকে কম গুরূত্ব দিবে বা হয়তো একেবারেই গুরূত্ব দিবে না...এমন একটা পরিস্থিতিতে প্রথম স্ত্রীর সন্তানরা কী ধরণের চিন্তাধারা পেয়ে বেড়ে উঠবে?আর বেড়ে উঠার পর তাদের মানসিক পরিস্থিতি কি আর দশটা স্বাভাবিক মানুষের মত হবে?

আমাদের দেশে এই ব্যাপারটা নিয়ে এখনও কোনও আলোচনা দেখিনি তবে দেখবো খুব শীঘ্রি।আমি শুরুতেই আমার অবস্থান পরিষ্কার করে দিয়েছি-আর কোনও ব্যাপারে না হোক বৈবাহিক সম্পর্কের ব্যাপারটাতে ইউনিফর্ম ল' অতি আবশ্যক।ব্যাপারটা যে শুধুমাত্র নারীদের প্রতি অবমাননা দূর করবে তা না তার সাথে সাথে একাধিক বিয়ে বা বিবাহ বিচ্ছেদের মত ব্যাপারগুলি নিয়ে পুরুষশাসিত সমাজের পুরুষদের স্বৈরাচারী মনোভাবটা কিছুটা হলেও কমাতে সাহায্য করবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:২৪
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×