এই ডাইরিটা লিখেছিলাম ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার সময়। বছুরে ডাইরি। দেখলাম, মোটামুটি পুরো ডাইরিটাতেই লেখা দিয়ে ভরে রেখেছিলাম। যাইহোক, চলে যাই ডাইরিতে... কিছু অংশ আজ তুলে ধরবো, এই প্রয়াশে...
"আমার মাঝে মাঝে নিজেকে বড্ড অসহায় লাগে! নিজেকে মনে অয় কি একটা অনুগ্রহে বেঁচে আছি।
কখনোবা মনে হয় এই সংসার সমুদ্রে আমার কোন অস্তিত্ব থাকবেনা, এটা সত্যি যে থাকবে না। কিন্তু কেন!
আজ আমি যেখানে বসে লিখছি, সেখানে আজ থেকে একশত বছর কিংবা তারও ঊর্ধ্বে কে ছিলেন? আবার বর্তমান থেকে একশত বছর পর কারা থাকবে!
তারা কি জানবে যে এখানে বসে এক চিত্ত লিখেছে তার এই ডাইরিখানার এই পৃষ্ঠাটা?
জানবে না জানি!
আমিও যেমন জানিনা আমার থেকে একশত বছর পূর্বের উত্তরসূরির কথা।
ইতিহাসে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের স্থান নেই। ইতিহাস ধারন করে মহামানবদের। আমরা সাধারণ খেটেখাওয়া মানুষ হারিয়ে যাই সময়ের বাঁকে। ইতিহাসের পাতায় আমাদের জায়গা সংকুলান হয় না।
সময় তার অতল গহবরে আমাদেরকে ঢেলে দিবে। আমাদের অভিনয় করা চরিত্রগুলো মুছে যাবে অস্পৃশ্য শক্তিধারায়। আমরা হারিয়ে যাবো। সত্যিই কি হারিয়ে যাবো?
তবে কেন এই আসা আর যাওয়া!!!
আমি যদি চাঁদ হতাম। কিংবা সূর্য!
নাহ এসব কল্পনা করতেও কষ্ট লাগে। একবার নিজেকে চাঁদের জায়গায় দেখলে বড্ড কষ্ট অনুভূত হয়।
চাঁদ কি একা? সত্যিই একা?
শতাব্দীর পর শতাব্দীর ক্রমধারা পেরিয়ে একইভাবে সে দায়িত্ব পালন করে আসছে এই চাঁদ, সূর্য। ভবিষ্যতে ও যাবে। কিন্তু এর কি শেষ নেই!
যদিও আমি মহান নই। তদুপরি জানি যে মহান হওয়ার যন্ত্রণা অনেক!
যাইহোক, পুরনো কথায় ফিরে আসি। সবসময়, সর্বদা নিজেকে বড় একা মনে হচ্ছে ইদানিং। বড় কষ্ট অনুভব করি তখন। কষ্টে বুক ফেটে চৌচির অবস্থা! এতো মানুষের ভিড়ে কেন যে এতো অসহায় লাগে, কেন!!!
বাবার ইচ্ছে বড় হয়ে প্রতিষ্ঠা পাওয়া। বাবার ইচ্ছের সাথে মা'র ইচ্ছে মিলেমিশে একাকার জানি।
জানি বাবা-মার স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। সমাজে প্রতিষ্ঠা পেতে হবে। সেই জন্যই লড়ে যাচ্ছি জীবনের সাথে পাল্লা দিয়ে।
আমার কোন ইচ্ছে নেই। আমি একা আছি। নিঃসঙ্গ মানুষের ইচ্ছে থাকতে নেই!
প্রতিদিন আকাশে চাঁদ উঠে। প্রতিদিন ডুবেও যায়। প্রতিদিন কতো ফুল ফুটে এই সুষমাধরায়। প্রতিসন্ধায় আবার কতো ঝড়ে যায়। এমনইতো প্রতিদিন জন্মে কতো মানব শিশু। প্রতিদিন যায় ঝড়ে কতো প্রাণ। প্রতিদিন মরে শত শত মানব, আর শুন্য করে রেখে যায় তার স্থান। মুছে যায় তার এই পৃথিবীর স্মৃতি। সময় খেয়ে ফেলে। সময়ের পেটটা এতো বড় কেন!!!
আকাশে তারা উঠে লাখে লাখ। ছিটকে পড়েও যাও দু চারটা। কোনবা গ্রহ হারায় তার গ্রহত্ত। কোনবা নক্ষত্র হারায় তার আলো। কোনবা, মানুষ হারায় তার অঙ্গ, দেহের নানা উপাদান, চোখের দৃষ্টিসীমার পরিধি, হাত কি বা পা!
হয়তো চলে যাবো। হয়তো নয়, সত্যিই চলে যাবো। এসেছি যখন, বিদায় তো নিতে হবেই। বিদায়ের ক্ষণ অজানা। হয়তো এখনি, কিংবা খানিক পরে! তারও পরে! কিংবা অনেক পরে!
আশ্চর্য লাগে!
আমি যাত্রা করবো অথচ আমিই জানিনা! পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য!
এখনো শিশিরের ঘাসে দু পায়ের পাতা ডুবিয়ে হাটি। মেঘে কাঁধ উঁচিয়ে তাকিয়ে থাকি। বৃষ্টিস্নাত পথে বই বুকে জড়িয়ে ধীর পদক্ষেপে দুপদ ক্রমাগত নাড়াচাড়া করি সামনের দিকে। কারোবা আশায় থাকি, কারো জন্য হয়তো পথ চেয়ে থাকি আশায় অপেক্ষার দৃষ্টি মেলে দিয়ে।
সন্ধায় ঘাসের বুকে বসে বসে আকাশের তারা দেখি। চোখ মেলে পৃথিবীর রূপের নৃত্য দেখি। কর্ণে সুর শুনি। জীবনের সুর কর্ণগোচর করি। মেঘরাজির খেলা দেখি। মানুষের ব্যস্ততা দেখি।
যাক এসব কথা!
যা দেখি, যার জন্য অপেক্ষা করি, কুয়াশার চাদরে গা ঢেকে, শিশিরের সাগরে দু পা দেবে দিয়ে হাটি অথবা দৌড়াই, একদিন আর এসব করবো না। যেদিন আমি থাকবো না পৃথিবীতে।
সে বিদায়ের দিন একটি, মাত্র একটি নিথর দেহ পরে থাকবে উঠোনে। আত্মীয়-অনাত্মীয়রা এসে দেখে যাবে মরদেহ। সবার সাথে সম্পর্ক শেষে হবে। মনে রেখো পৃথিবী, মনে রেখো সেদিন তুমি আমায় ভুলে যাবে।
আমি সেদিন পোকার খাদ্য হতে যাবো। মাটি আর আমি হয়ে যাবো একাকার। "
----------------------------------------------------------------------------------------------
ডাইরিটাতে অনেক লেখাই আছে এরকম। আমার কাছে সবচেয়ে অবাক লাগে, আমি ইন্টারমিডিয়েট থাকা অবস্থায় এতো জটিল শব্দ দিয়ে লেখা আর এইরকম অদ্ভুত ভাবনা ভাবলাম কি করে। এই ডাইরি স্মৃতিগুলো এখন আমার কাছে বিস্ময়। হয়তো সময় আরও যাবে আর সাথে রয়ে যাওয়া এই স্মৃতির পাতাগুলো আরও বিস্ময় জাগাবে। জাগাবে ভালো লাগাও।
অনেক অনেক ধন্যবাদ, কষ্ট করে লেখাটা পড়ার জন্য। শুভ রাত্রি।
==============================================================
বাংলা বইয়ের সুবিশাল অনলাইন লাইব্রেরীঃ Bangla eBooks Download PDF
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৫১