somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই পোকার ডাইরি থেকে! পর্ব-২

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই ডাইরিটা লিখেছিলাম ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার সময়। বছুরে ডাইরি। দেখলাম, মোটামুটি পুরো ডাইরিটাতেই লেখা দিয়ে ভরে রেখেছিলাম। যাইহোক, চলে যাই ডাইরিতে... কিছু অংশ আজ তুলে ধরবো, এই প্রয়াশে...




"আমার মাঝে মাঝে নিজেকে বড্ড অসহায় লাগে! নিজেকে মনে অয় কি একটা অনুগ্রহে বেঁচে আছি।

কখনোবা মনে হয় এই সংসার সমুদ্রে আমার কোন অস্তিত্ব থাকবেনা, এটা সত্যি যে থাকবে না। কিন্তু কেন!

আজ আমি যেখানে বসে লিখছি, সেখানে আজ থেকে একশত বছর কিংবা তারও ঊর্ধ্বে কে ছিলেন? আবার বর্তমান থেকে একশত বছর পর কারা থাকবে!

তারা কি জানবে যে এখানে বসে এক চিত্ত লিখেছে তার এই ডাইরিখানার এই পৃষ্ঠাটা?

জানবে না জানি!
আমিও যেমন জানিনা আমার থেকে একশত বছর পূর্বের উত্তরসূরির কথা।

ইতিহাসে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের স্থান নেই। ইতিহাস ধারন করে মহামানবদের। আমরা সাধারণ খেটেখাওয়া মানুষ হারিয়ে যাই সময়ের বাঁকে। ইতিহাসের পাতায় আমাদের জায়গা সংকুলান হয় না।

সময় তার অতল গহবরে আমাদেরকে ঢেলে দিবে। আমাদের অভিনয় করা চরিত্রগুলো মুছে যাবে অস্পৃশ্য শক্তিধারায়। আমরা হারিয়ে যাবো। সত্যিই কি হারিয়ে যাবো?

তবে কেন এই আসা আর যাওয়া!!!



আমি যদি চাঁদ হতাম। কিংবা সূর্য!
নাহ এসব কল্পনা করতেও কষ্ট লাগে। একবার নিজেকে চাঁদের জায়গায় দেখলে বড্ড কষ্ট অনুভূত হয়।

চাঁদ কি একা? সত্যিই একা?
শতাব্দীর পর শতাব্দীর ক্রমধারা পেরিয়ে একইভাবে সে দায়িত্ব পালন করে আসছে এই চাঁদ, সূর্য। ভবিষ্যতে ও যাবে। কিন্তু এর কি শেষ নেই!

যদিও আমি মহান নই। তদুপরি জানি যে মহান হওয়ার যন্ত্রণা অনেক!

যাইহোক, পুরনো কথায় ফিরে আসি। সবসময়, সর্বদা নিজেকে বড় একা মনে হচ্ছে ইদানিং। বড় কষ্ট অনুভব করি তখন। কষ্টে বুক ফেটে চৌচির অবস্থা! এতো মানুষের ভিড়ে কেন যে এতো অসহায় লাগে, কেন!!!

বাবার ইচ্ছে বড় হয়ে প্রতিষ্ঠা পাওয়া। বাবার ইচ্ছের সাথে মা'র ইচ্ছে মিলেমিশে একাকার জানি।
জানি বাবা-মার স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। সমাজে প্রতিষ্ঠা পেতে হবে। সেই জন্যই লড়ে যাচ্ছি জীবনের সাথে পাল্লা দিয়ে।

আমার কোন ইচ্ছে নেই। আমি একা আছি। নিঃসঙ্গ মানুষের ইচ্ছে থাকতে নেই!




প্রতিদিন আকাশে চাঁদ উঠে। প্রতিদিন ডুবেও যায়। প্রতিদিন কতো ফুল ফুটে এই সুষমাধরায়। প্রতিসন্ধায় আবার কতো ঝড়ে যায়। এমনইতো প্রতিদিন জন্মে কতো মানব শিশু। প্রতিদিন যায় ঝড়ে কতো প্রাণ। প্রতিদিন মরে শত শত মানব, আর শুন্য করে রেখে যায় তার স্থান। মুছে যায় তার এই পৃথিবীর স্মৃতি। সময় খেয়ে ফেলে। সময়ের পেটটা এতো বড় কেন!!!

আকাশে তারা উঠে লাখে লাখ। ছিটকে পড়েও যাও দু চারটা। কোনবা গ্রহ হারায় তার গ্রহত্ত। কোনবা নক্ষত্র হারায় তার আলো। কোনবা, মানুষ হারায় তার অঙ্গ, দেহের নানা উপাদান, চোখের দৃষ্টিসীমার পরিধি, হাত কি বা পা!

হয়তো চলে যাবো। হয়তো নয়, সত্যিই চলে যাবো। এসেছি যখন, বিদায় তো নিতে হবেই। বিদায়ের ক্ষণ অজানা। হয়তো এখনি, কিংবা খানিক পরে! তারও পরে! কিংবা অনেক পরে!

আশ্চর্য লাগে!
আমি যাত্রা করবো অথচ আমিই জানিনা! পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য!

এখনো শিশিরের ঘাসে দু পায়ের পাতা ডুবিয়ে হাটি। মেঘে কাঁধ উঁচিয়ে তাকিয়ে থাকি। বৃষ্টিস্নাত পথে বই বুকে জড়িয়ে ধীর পদক্ষেপে দুপদ ক্রমাগত নাড়াচাড়া করি সামনের দিকে। কারোবা আশায় থাকি, কারো জন্য হয়তো পথ চেয়ে থাকি আশায় অপেক্ষার দৃষ্টি মেলে দিয়ে।

সন্ধায় ঘাসের বুকে বসে বসে আকাশের তারা দেখি। চোখ মেলে পৃথিবীর রূপের নৃত্য দেখি। কর্ণে সুর শুনি। জীবনের সুর কর্ণগোচর করি। মেঘরাজির খেলা দেখি। মানুষের ব্যস্ততা দেখি।




যাক এসব কথা!
যা দেখি, যার জন্য অপেক্ষা করি, কুয়াশার চাদরে গা ঢেকে, শিশিরের সাগরে দু পা দেবে দিয়ে হাটি অথবা দৌড়াই, একদিন আর এসব করবো না। যেদিন আমি থাকবো না পৃথিবীতে।

সে বিদায়ের দিন একটি, মাত্র একটি নিথর দেহ পরে থাকবে উঠোনে। আত্মীয়-অনাত্মীয়রা এসে দেখে যাবে মরদেহ। সবার সাথে সম্পর্ক শেষে হবে। মনে রেখো পৃথিবী, মনে রেখো সেদিন তুমি আমায় ভুলে যাবে।

আমি সেদিন পোকার খাদ্য হতে যাবো। মাটি আর আমি হয়ে যাবো একাকার। "

----------------------------------------------------------------------------------------------
ডাইরিটাতে অনেক লেখাই আছে এরকম। আমার কাছে সবচেয়ে অবাক লাগে, আমি ইন্টারমিডিয়েট থাকা অবস্থায় এতো জটিল শব্দ দিয়ে লেখা আর এইরকম অদ্ভুত ভাবনা ভাবলাম কি করে। এই ডাইরি স্মৃতিগুলো এখন আমার কাছে বিস্ময়। হয়তো সময় আরও যাবে আর সাথে রয়ে যাওয়া এই স্মৃতির পাতাগুলো আরও বিস্ময় জাগাবে। জাগাবে ভালো লাগাও।

অনেক অনেক ধন্যবাদ, কষ্ট করে লেখাটা পড়ার জন্য। শুভ রাত্রি।
==============================================================
বাংলা বইয়ের সুবিশাল অনলাইন লাইব্রেরীঃ Bangla eBooks Download PDF

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৫১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×