somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার দ্বিতীয় বার ভূত দর্শন!

২৪ শে জুন, ২০১০ রাত ১২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মে ৩, ২০০১। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হবে ৭ তারিখ। কাজিন বাশার ভাইয়ের কাছ থেকে উনার রুমের চাবি নিয়ে এসেছি। বাসা খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত ওটাই আপাতত আশ্রয়। যেহেতু ভার্সিটি তখনো বন্ধ, রূমের তালাটা আমিই খুললাম। বাইরের দরজায় তালা দেয়া থাকেনা। দীর্ঘ দিনের অব্যবহারে মাকড়শা'র জাল জমে গেছে পুরো প্যাসেজ জুড়ে; বুঝলাম, আমিই প্রথম। আর কেউ আসেনি। সারারাতের ট্রেন জার্নির ধকল, তাতে প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে রিকশা না পেয়ে স্টেশন থেকে প্রায় আড়াই-তিন কিলোমিটার পায়ে হেঁটে পীর মহল্লার এই বাসাটাতে এসেছি। ৬২-এ-১ লিচুবাগান, সিলেট। গুণে গুণে পঞ্চম তলা। ঘরে ঢুকে একটু স্বস্তি পেলাম। বৃষ্টির সময়, তাই দীর্ঘদিনেও ঘরে খুব একটা ময়লা জমেনি। আর জমলেও করার কিছু ছিলনা। পরিষ্কার করার শক্তিটুকুও নেই। কোন রকমে ভেজা কাপড় বদলে নিলাম। গ্রামের ছেলে। সহজ পোশাক-লুঙ্গি আর স্যান্ডো গেঞ্জি। এইবার জম্পেশ ঘুম হবে। কষে একটা সিগারেট টেনে, উলটে রাখা বিছানাটাকে কিছুটা ভদ্রস্থ করে শুয়ে পড়লাম। পাঁচতলার জানালার কাছে সুপারি গাছের মাথাটা হেলে দুলে উঁকি দিচ্ছে বখাটে ছেলের মত। দিকগে! আমি এখন ঘুমাব। বাসার জন্য মন খারাপ লাগছে। কি আর করা! জানালার কাঁচে ঝুম বৃষ্টির স্রোত নামছে-তাই দেখতে দেখতে ঘুমিয়েও পড়লাম।

পাক্কা দশ ঘন্টা ঘুমিয়েছি। উঠে দেখি আটটা বাজে। বৃষ্টি তখনো থামেনি, বরং বেড়েছে। তার সঙ্গে দমকা বাতাশ। ইলেক্ট্রিসিটি নেই, তাই খুঁজে খুঁজে আধখানা মোম পেয়ে তাই জ্বালালাম। ভাবছি ফ্রেশ হয়ে, বাইরে যাব খেতে। সমস্যা হচ্ছে, মোমটাকে জ্বালিয়ে রাখা যাচ্ছেনা। বাতাসের বেগ যেন বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। কুছ পরোয়া নেহি। লাইটারটা কোমরে গুঁজে নিলাম, তারপর একহাতে মোম নিয়ে অন্যহাতে আলোকে বাতাসের থেকে আড়াল করে ধীরে ধীরে যাচ্ছি ওয়াশরুমের দিকে। বাতাসে আমার লুঙ্গি পতাকার মত উড়ছে, মোমের পুরো আলো আমার মুখে। আর একটু দূরেই বাথরুম। বাতাস বাঁচিয়ে একহাতে দরজা খুললাম। বাতাসে কেঁপে উঠল মোম! আর সেই সাথে একটা গগনবিদারী চিৎকার। হুইইইইইইইইশশশশস.........!!! মোমটা হাত থেকে পড়ে নিভে যাওয়ার আগে চোখের সামনে যা দেখলাম, তার দৈর্ঘ্য প্রায় ৬-৭ ফুট। বটগাছের মত প্রস্থ। স্থানুর মত দাঁড়িয়ে আছি! সেও দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে যেন বাস্তব আর পরাবাস্তবের সাথে এক অলিখিত স্নায়ু যুদ্ধ চলছে। আর এই যুদ্ধে জেতা-হারার উপরই নির্ভর করছে আমার বাঁচা মরা। আমি ঘোরের মধ্যে থেকেই এক পা পেছালাম। মানে রণে ভঙ্গ দেয়া। তারপর আরেকপা। বজ্রপাতের আচমকা আলোটুকুই আমার সম্বল। পেছাতে পেছাতে প্রায় রূমের সামনে চলে এসেছি। হার্টবিট মিস করছে অবিরত, তবু ভালো ওটা চলছে। গলা শুকিয়ে কাঠ। ঢোক গিলতে পারছিনা। মরে যাচ্ছি নাকি!
দরজার হাতলে হাত দেয়া মাত্রই ইলেকট্রিসিটি এল।
-'এই বাচ্চা, কে তুমি?'
একটা বাজখাই আর প্রকম্পিত কন্ঠ কানে এল। ঘরের কোনাটা এখনো অন্ধকার, তবে এখন আর তেমন ভয় লাগছেনা। ভয়ের প্রাথমিক ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠেছি ততক্ষণে।
আমি বললামঃ 'পলাশ, ফার্স্ট ইয়ার, ফার্স্ট সেমিস্টার।'
ঘরের কোনের ছায়াটা একটু নড়ে উঠল। দেখলাম সে আমার দিকেই এগিয়ে আসছে।
মানুষ!
মানুষই তো!
-'হেই মিয়া, তুমি তো আমারে তব্দা লাগাইয়া দিছিলা! আরেকটু হইলেই কইলজা হজম হইয়া গেছিল! আত্মা পুরা পলিথিন হইয়া গেছেগা!
আমার ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল।
আমি শুধু মিন মিন করে বললাম, আমাকে একটু পানি খাওয়াবেন?

উপরোক্ত ভদ্রলোকের নাম মোসাদ্দেক হোসেন। ৬' ২" লম্বা। ওজন ৯৫ কেজি। সিলেটে আমার প্রথম পরিচিত লোক তিনিই। আমি যখন ঘুমে ছিলাম, তখন তিনি এসেছেন মেসে। অন্ধকার থাকায় আমার ঘরের তালাটা খোলা-এটা তিনি লক্ষ করেননি। আমরা দুজনেই জানি যে, আমরা ছাড়া আর কেউ নেই মেসে, যার ফলে দুজনের এই ভূত দর্শন।

এবার শুনি উনার ভাষায় আমাকে কেমন দেখাচ্ছিল!

"আমি ড্রেস চেঞ্জ কইরা হাফ টিকিটের একটা ঘুম দিয়া ফালাইছি। হালার ম্যাচ খুইজা না পাইয়া ভাবলাম অমনেই যাই। দরজার সামনে গিয়াই দেহি-সাদা একটা মানুষ, সাদা স্কার্ট বাতাসে উড়তাছে। মুহের মইধ্যে আলো পইড়া মনে অইতাছে মরা মানুষের মুখ। প্রথমে ভাবলাম, যাইতাছে যাউকগা। আমি চুপ মাইরা থাহি। চিক্কুরটা আতকা বাইরাইয়া গেছেগা ছোটভাই। তুমি মনে কিছু নিওনা। তুমি নিজে তুমারে দেখলেও ফিট খাইতা!"

বাসাবো'র বাসিন্দা এই মোসাদ্দেক ভাইএর কাছে আমি বিভিন্ন ভাবে ঋণী। স্নেহের ঋণ। যোগাযোগ নেই, তবু এই লোকটাকে আমি খুব মিস করি। তার বিরাট বপুতে তিনটা জিনিসে ঠাঁসা ছিল। বাস্কেটবল, সারল্য, আর স্নেহ-যার প্রতিদ্বন্দ্বী হবার চেষ্টাও কেঊ করেনি কখনো।
ভালো থাকুন মোসাদ্দেক ভাই।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ১০:৪৫
৩৬টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×