হুমায়ুন আহমেদ স্যার এর প্রতি আমার পক্ষপাতিত্ব রীতিমত একচোখা। স্যার যা লিখতেন তার সবই আমি পড়ি, এমনকি যখন শাওনকে বিয়ে করার পর উনার নাটকগুলোর নির্মানশৈলী একদম তলানিতে ঠেকেছিল, তখনো আমি তার একটাও নাটক বাদ দিই নি। তাঁর একটাও সিনেমা আমি বাদ দিই নি। সত্যি কথা বলতে কি, আমি হুমায়ুন স্যার এর ছাড়া অন্য কারো বইও পড়ি না, ভালই লাগে না। কেউ যদি আমাকে রবীন্দ্রনাথ অথবা হুমায়ন স্যারের মধ্যে যে কোনো একজনকে বেছে নিতে বলে, তাহলে আমি হুমায়ুন স্যারকে বেছে নেয়ার ধৃষ্টতা দেখাতে পিছপা হব না কখনোই। আর স্যারের বই যোগাড় করার জন্য আমি " মার্ক টোয়েন" পদ্ধতি ব্যবহার করতে কখনো পিছপা হইনি এবং তার জন্য আমার মনে কোনো অনুশোচনাও নেই। কেন থাকবে??? কারণ তিনিই তো আমাদের প্রজন্মকে বই পড়া শিখিয়েছেন, তাঁর বইয়ের কারণেই তো বাংলা একাডেমির বইমেলা এতটা জনপ্রিয় হয়েছে। আমার কথা যদি বিশ্বাস না হয়, তাহলে একটু খেয়াল করে দেখুন, স্যার চলে যাবার পর প্রথম বইমেলা (২০১৩ এর) কিন্তু জমে নি। অনেকে হয়তো বলবেন যে এর কারণ এবারের শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ, কিন্তু বিনীতভাবে বলবো, ৯০ এর এরশাদ পতন আন্দোলন কিংবা ৯৬ এর খালেদা পতন কিংবা ২০০১ এর হাসিনা পতন আন্দোলনের সময়ও কিন্তু বইমেলা ঠিকই জমেছিলো। আর তার কারণ ছিলেন আমাদের সেই হ্যামিলনের বংশিবাদক, "হুমায়ুন আহমেদ"।
হুমায়ুন আহমেদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের কারণেই হয়তোবা স্যারের পরিবারের অন্য সবার লেখা আমি গোগ্রাসে গিলি। যাঁদের মধ্যে প্রথমেই নাম আসে জাফর ইকবাল স্যারের লেখা। প্রথমেই শুরু করেছিলাম হুমায়ুন স্যারের অভাব পূরণ করার জন্য কিন্তু আস্তে আস্তে দেখলাম জাফর ইকবাল স্যারের লেখা পড়ে মোটামুটি একইরকম আনন্দ পাচ্ছি। স্যারের বুদ্ধিদীপ্ত লেখনীর জন্য হয়তোবা আরেকটি কারণ। এমনকি, গত জানুয়ারী মাসে দেশ থেকে আসার সময় ১৬ ঘন্টা ফ্লাইটের পুরোটা সময় আমি জাফর ইকবাল স্যারের বই পড়তে পড়তে এসেছি, একটিবারের জন্যও চোখের পাতা দুইটা এক করিনি অথবা inflight entertainment এর দিকে চোখও দিই নি। আর আহসান হাবিবের উন্মাদ ম্যাগাজিনের সাথে তো আমার সখ্যতা সেই মধ্য আশির দশক থেকে।
এমনই যখন আমার অন্ধ পক্ষপাতিত্ব তখন গতকাল জাফর ইকবাল স্যারের একটি গোল টেবিল আলোচনা শুনছিলাম, আর তখন ব্রিটিশ সময় রাত ২টা প্রায়। মন্ত্রমুগ্ধের মত স্যারের কথা শুনছিলাম। স্যারের প্রতিটি কথার সাথেই একমত, বিশেষ করে তাঁর গাইবান্ধা বিষয়ক কথার উপর তো আর কোনো কথায় হতে পারে না!!!! কিন্তু হটাত ধাক্কা খেলাম যখন স্যার উনার ক্যানাডিয়ান হাইকমিশনের জনৈক কর্মকর্তার সাথে আলোচনার প্রসঙ্গ আনলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে আপনি বললেন যেহেতু আওয়ামী লীগ নিজেই মুক্তিযুদ্ধ এর নেতৃত্ব দিয়েছে, সেহেতু আওয়ামী লীগে যুদ্ধাপরাধী নেই !!!!
বিনীত ভাবে আমি আপনাকে বলতে চাই স্যার, হয়তো তখন আওয়ামীলীগে যুদ্ধাপরাধী ছিলো না কিন্তু এখন তো আছে। কেনো স্যার, বর্তমান শ্রমমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ কে কি আপনার চোখে পড়ে না??? স্যার, আপনি কি ভুলে গেছেন ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করেছিলো, সেই যুদ্ধাপরাধীদের দল জামাতের সমর্থনে, কারণ সরাসরি নির্বাচনে তখন আওয়ামীলীগ ১৫০টি আসন পায় নি। স্যার, আমরা যারা ১৯৭৫/৭৬ সালে জন্মেছি তাদের মনে আছে কারণ ১৯৯৬ এর নির্বাচনে আমরা আমাদের জীবনে প্রথম ভোট দিয়েছিলাম।
জাফর ইকবাল স্যারের কাছে বিনীত অনুরোধ, স্যার, দয়া করে দলকানা মন্তব্য করবেন না। জানি আমাদের মতন "অগামগা" চুনোপুটিদের কথায় আপনাদের মতন বড়মাপের মানুষদের কিছুই যাবে আসবে না, কিন্তু আপনাদের মত বিশাল মানুষদের দলকানা মন্তব্য দেখলে আমাদের মত চুনোপুটিদের মনে কিন্তু গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। স্যার, এইসব রাজনৈতিক দলের তুলনায় আপনাদের স্থান কিন্তু অনেক উচুতে। এদের স্থান কিন্তু আপনাদের মতন উচুমাপের মানুষদের পায়ের নখের ময়লার সমানও না!!!!
স্যার, ধৃষ্টতার জন্য ক্ষমা চাই। কিন্তু কি করবো বলেন??? অভ্যাস হয়ে গেছে যে, ওই যে অনেক আগেই রবীন্দ্রনাথের সাথেই করে ফেলেছি!!!! পরিশেষে আপনাদের রত্নগর্ভা মা আয়েশা ফয়েজ এর আশু রোগমুক্তির জন্য পরম করুনাময়ের কাছে প্রার্থনা করছি।