somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘন বর্ষায় দার্জিলিং ভ্রমন- কিছু পথের পাঁচালী

১৯ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিলিগুড়ি পর্ব-৩

আগের পর্ব দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন


বাইপাস গোলচত্ত্বর মুখেই ক্যানেলের উপর শিলিগুড়ির সাথে ফুলবাড়ীকে সংযোগকারী ব্রীজ। ব্রীজের গোড়ায় পৌছতেই একটা অর্ধেক খালি টেম্পু হাত তুলতেই তুলে নিল।কয়েকটা স্টপেজে যাত্রীপূর্ণ হয়ে আরও কয়েকটা মোড় ঘুরে সোজা ভেনাস হোটেল মোড়ে থামল।


ফুলবাড়ীকে সংযোগকারী ব্রীজের মুখ

শিলিগুড়ি,ছোট্র অথচ গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের নাসিকা নালী।মনে হ’ল মোটামুটি গোছানো একটা শহর।শহর চিড়ে রোডগুলো ডাইনে বাম দিয়ে বেড়িয়ে সোজা বিশ্ব রোডে মিলেছে।সাত সাতটি রাজ্যের যানবাহনের চাকা ঘোরে এই শিলিগুড়ির উপর দিয়ে।তবে যাওয়া ও আসার মহূর্তের সময়টুকুতে কোন জ্যাম চোখে পড়ল না।রাজধানী শহরের মত মানুষজন যে যার কর্ম ক্ষেত্রের নিশানায় ছুটছে।

ভেনাস হোটেল Hill Cart Road এর উপর অবস্থিত।শুধু তাই নয় দার্জিলিং পর্যন্ত এ রোডটিই নামকরণে সাথে সাথে থাকবে।

ভেনাস মোড় থেকে রিক্সা,টেম্পু অনেক ভাবেই দার্জিলিং মোড়ে যাওয়া যায়।তবে এখানেও হাঁটা ধরলাম। সামান্য এগুতেই Sevoke Mor। এ মোড় থেকে Sevoke রোড বেড়িয়ে সামান্য এগিয়ে ৩১-সি ন্যাশনাল হাইওয়ের সাথে মিশেছে।আসাম,মেঘালয়,অরুণাচল প্রদেশ,মনিপুর,ত্রিপুরা,মিজোরামের গাড়ীগুলো দুটো মাত্র পথে শিলিগুড়ি থেকে বের হয়।একটি ৩১-ডি ন্যাশনাল হাইওয়ে,যেটি বেয়ে আমি এসেছি আর অন্যটি এই ৩১-সি ন্যাশনাল হাইওয়ে।



৩১-সি ন্যাশনাল হাইওয়ে দিয়ে আরেকটা প্রদেশের গাড়ী চলে।তা হ’ল সিকিম।আসাম,মেঘালয়,অরুণাচল প্রদেশ, মনিপুর,ত্রিপুরা,মিজোরামের গাড়ীগুলো Sevoke ব্রীজ দিয়ে তিস্তা পার হয়।কিন্তু সিকিমের গাড়ীগুলির Sevoke ব্রীজ মাড়াতে হয় না।Sevoke ব্রীজ অনুপম সৌন্দর্য়ের প্রতীকও বটে।সাথে এখানকার মন স্নিগ্ধ করা প্রকৃতিও সবাইকে কাছে টানে।



Sevoke Mor উত্তরমুখো সামান্য এগুতেই একটা ব্রীজের নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে মহানন্দা নদী।সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে অনেক আগেই।ক্ষুধায় পেট চো চো করছে। Hill Cart Road ধরেই মোটামুটি মানের খাবার হোটেল খুঁজতে লাগলাম।দু’একটায় ঢুকে খাবারের যা অবস্থা দেখলাম তাতে এই ভর ক্ষুধায়ও মন টানল না।


মহানন্দা নদী।ছবিটি সংগৃহীত

হঠাৎ পরিচিত কিছু দেখে চোখ আটকে গেল।রাস্তার ওপাড়ে একটি আবাসিক হোটেলের নীচে শ্যামলী গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে। বুঝতে অসুবিধা হ’ল না শিলিগুড়িতে এটাই ওর ঠিকানা।



একটু ছায়ায় দাঁড়িয়ে শ্যামলীর আবাসটি তন্ময় হয়ে দেখছিলাম।হঠাৎ একটা অখ্যাত খাবার হোটেল চোখে পড়ল।চান্দিতে ঝুলানো সাইন বোর্ডে লেখা ‘ঢাকা হোটেল’।রোড থেকেই দেখছি কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে সিট ধরার জন্য।এমন হোটেলে দেশে অনেক খেয়েছি।বাসা থেকে রান্না করে আনা খাবার বিক্রি হয় এসব হোটেলে। খেতে বসলে মনে হয় বাড়ীতে বসে খাচ্ছি।অবেলায় তেমন কিছু পাব না এ শঙ্কা নিয়েই ঢুকলাম। তরুণ বয়সী একটা ছেলে বসে আছে,সামনে ধোয়া প্লেট।আমাকে দেখেই উঠে দাঁড়িয়ে বসতে দিল।কিছু বলার আগেই নিজেই বলতে লাগল-

-অনেক দূর যাবেন বোধ হয়,আপনী আগে খেয়ে নিন।
-তা যাব,কিন্তু তাতে কি? আপনী……………….
-পাশেই কাজ করি আর এই হোটেলেই খাই।একটু দেরী হলে অসুবিধে হবে না।ভদ্র ঘরের ছেলে আর কাজ থেকে উঠে এসেছে তা পোষাকেই বোঝা যায়।
-তুই কাজ করগে,খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।ক্যাশ আগলানো মহিলা ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বলল।পরে জানলাম ক্যাশে বসা মহিলাই হোটেলের মালিক।জন্ম বাংলাদেশের খুলনা জেলায় এবং বাসায় ইনিই রান্না করেন।
সৌভাগ্যবশত পাশে বসা লোকটি চেপে বসে জায়গা করে দিলে ছেলেটির সাথে বসেই খাওয়া গেল। আর খাবার ফাঁকেই জানলাম,ছেলেটি কলেজে নাইট শিফটে পড়ে।ডাক নাম নিখিল।সারাদিন গ্যারেজে কাজ,সন্ধ্যায় ক্লাস।এন্টার মিডিয়েটটা আমিও ঢাকা তেজগাঁও কলেজের নাইট শিফটে পড়ে এসেছি।গর্বে বুকটা ভরে উঠল।

ক্ষুধার চোটে যা ছিল তাই দিয়ে পেট পুরে খেয়ে নিলাম।দামও অপেক্ষাকৃত কম।ছেলেটিকে রাজি করিয়ে ওর বিলটাও দিয়ে দিলাম।ছেলেটি খুবই আনন্দিত হ’ল। দুই দোকান পরেই গলির মুখে ওর গ্যারেজ।হাতে কিছু দিতে চাইলাম।বিনয়ের সাথে ফিরিয়ে দিল।কেবল আমার অফিসের ভিজিটিং কাডটিই চেয়ে নিল। অফিসের নাম্বারের সাথে ব্যক্তিগত নাম্বারটিও লিখে দিলাম।

নিখিলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আবার হাঁটা ধরলাম।কিছুদূর এগুতেই একটা মোড় থেকে কয়েকটি রোড বেরিয়ে বিভিন্ন দিকে গিয়েছে।একটা রোড ডিরেকশানে দার্জিলিং লেখা Arrow চিহ্ন চোখে পড়ল।



বেশির ভাগ গাড়ীও ওদিকে যাচ্ছে।নি:সংকোচে হাটা ধরলাম।মাত্র কয়েক কদম পরে একটা বীজের নীচ দিয়ে ধাবমান রেল লাইন বরাবর দূরে তাকাতেই চোখে পড়ল উঁচু উঁচু পাহাড় শ্রেণী। মন আনন্দে নেচে উঠল।সত্যিই তখন পাহাড় দেখার তর সইছিল না।সমতলের বাসিন্দা আমরা।পাহাড়ের প্রকৃতিটা কেমন লাগে কাউকে বলে বোঝাতে হবে না।এতক্ষণের ক্লান্তি মহুর্তে উবে পুরো সত্ত্বা জুড়ে খুশির শিহরণ বইতে লাগল।



মাত্র কয়েক কদম এগুতেই দূর থেকে একটা মোড় চোখে পড়ল। হ্যাঁ,যা ধারণা করেছিলাম তাই। রোড ডিরেকশান বোর্ডে লেখা ‘দার্জিলিং মোড়’ । তখনকার অনুভূতি বলে বোঝানোর মত নয়।

দার্জিলিং মোড়ের কয়েকটি ছবি(নিজের তোলা এবং সংগৃহীত)



দার্জিলিং মোড়


পাহাড়ে আলিঙ্গন করতে দাঁড়িয়ে তেনজিং নরগে


দার্জিলিং মোড়


হোটেল সেন্ট্রাল প্লাজার নীচে দাঁড়িয়ে শ্যামলী গাড়ী
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:০৬
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×