সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক হারুন অর রশীদ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। তিনি ছাত্রী মুন্নির প্রেমের বলি হয়েছেন। মহিলা কলেজের দর্শন অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী সুজিনা আক্তার মুন্নি, তার সহযোগী বান্ধবী সাফিয়া খাতুন লিপি বন্দি হয়েছে র্যাবের জালে।
মুন্নি ও লিপির দেয়া তথ্যমতে র্যাব গতকাল ওই কিলিং মিশনে অংশ নেয়া ২ দুর্বৃত্ত রাসেল আহমদ ও আলিমুলকে আটক করেছে। তাদের কাছ থেকে নিহতের মোবাইল ফোনও উদ্ধার করে র্যাব। খুনি আলিমুলের আশ্রয়দাতা নগরীর দরগা গেট এলাকার হোটেল আজমীরীর ম্যানেজার লোকমান মিয়াও আটক হয়েছে র্যাবের হাতে। তবে কিলিং মিশনের ৩ দুর্বৃত্তের মধ্যে অন্যতম কাওসার এখনও রয়েছে পলাতক। এ মামলায় এর আগে কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক হারুন মজুমদার তিন ছাত্রদল কর্মীকে আটক করে দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আটক ৩ ছাত্রদল কর্মী এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলেও মিডিয়ায় বক্তব্য দেন এসআই হারুন।
২২ মার্চ বেলা ৩টায় কলেজ থেকে বাসায় ফেরার পথে নগরীর চৌহাট্টার নিজ বাসার সামনে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে খুন হন অধ্যাপক হারুন।
বৃহস্পতিবার সিলেট সফরকালে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে খুনিদের গ্রেফতারে স্থানীয় প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ দিয়ে যান। এ অবস্থায় গত রোববার রাত থেকে এই মামলা তদন্তে মাঠে নামে র্যাব-৯ একটি চৌকস দল। র্যাব সূত্র জানায়, বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে ওইদিন রাতেই র্যাব কিলিং মিশনের অন্যতম নায়ক রাসেল আহমদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। নগরীর পাঠানটুলার পল্লবী আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে নিহতের মোবাইল ফোনসহ রাসেলকে আটক করে র্যাব। এরপর ঘটনার মূল নায়িকা কলেজ ছাত্রী মুন্নিকে রাসেলের মাধ্যমে ফোন দিয়ে তার অবস্থান জেনে নেয় র্যাব। এর কিছুক্ষণ পর নগরীর সুবিদবাজার এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। এরপর একে একে মুন্নির বান্ধবী লিপিকে বাগবাড়ি এবং অপর খুনি কাওসারের আশ্রয়দাতা নগরীর দরগা গেটের আজমীরী হোটেলের ম্যানেজার মোঃ লোকমান মিয়াকে আটক করা হয়। খুনি কাওসার এই হোটেলের একটি কক্ষে নাম রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই সাতদিন ধরে অবস্থান করছিল। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে সে পালিয়ে যায়।
আটককৃতদের দেয়া তথ্যমতে, সরকারি মহিলা কলেজের দর্শন অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী সুজিনা আক্তার মুন্নি তার পুরনো প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে সম্প্রতি খুনি কাওসারের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। মুন্নি ও লিপি দু’জনই অধ্যাপক হারুনের প্রাইভেট ব্যাচের শিক্ষার্থী। এর সূত্র ধরে মুন্নির সাবেক প্রেমিক বিষয়টি নিয়ে নালিশ করে অধ্যাপক হারুনের কাছে। অধ্যাপক হারুন বিষয়টির সালিশ প্রক্রিয়া নিয়ে মুন্নি, লিপি এবং কাওসারের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে যান। এক পর্যায়ে লিপি ও মুন্নি তাকে শিক্ষা দেয়ার কথা বলে প্রাইভেট ব্যাচ ছেড়ে চলে যায়। ২২ মার্চ তারাই খুন করায় অধ্যাপক হারুনকে।
র্যাব জানায়, ঘটনার দিন সকাল থেকে লিপি ও মুন্নি কলেজে অবস্থান করে অধ্যাপক হারুনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে। বিকাল পৌনে ৩টায় তিনি বাসায় ফেরার জন্য কলেজ থেকে রওয়ানা দিলে তথ্যটি তাত্ক্ষণিক মোবাইল ফোনে খুনিদের জানিয়ে দেয় মুন্নি। এ সময় অধ্যাপক হারুনের বাসার সামনে ওঁত্ পেতে অপেক্ষা করছিল তিন খুনি কাওসার, আলিমুল ও রাসেল। মুন্নির বান্ধবী লিপিও ছিল তাদের সঙ্গে। ঘটনার ৫ মিনিট আগে লিপি অধ্যাপক হারুনকে ফোন করে তার বাসায় ফেরার তথ্যটি নিশ্চিত করে। বিকাল ৩টায় নিজ বাসার সামনে পৌঁছামাত্র খুনিরা ঝাঁপিয়ে পড়ে অধ্যাপক হারুনের ওপর। এ সময় তিনি লিপি ও মুন্নির হাত ধরে অনুনয় বিনয় করে প্রাণভিক্ষা চান বলেও জানতে পেরেছে র্যাব। কিন্তু পাষণ্ডরা তাকে প্রথমে কাঠের টুকরো দিয়ে পেটায়। পরে ছুরিকাঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।