somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুই নভোচারী

১৫ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


“আমি আবারও বলছি তোমাকে,” প্রথমজন বলল দ্বিতীয়জনের উদ্দেশ্যে, “শুধু শুধু সরকারি জ্বালানি অপচয় করতে যাচ্ছি আমরা। সেই সঙ্গে আমাদের সময়ও!”
খানিকটা বিরক্ত হয়েই প্রথমজনের দিকে তাকালো দ্বিতীয়জন। প্রশ্ন করল, “এরকমটা তোমার কেন মনে হচ্ছে বলো তো?”
“কারণ আমি তোমার মত শুধুমাত্র মাহাকাশবিজ্ঞান পড়েই বসে নেই, ইতিহাসও পড়েছি।”
“কী পড়েছো ইতিহাসে? বলো তো শুনি!”
“আমি পড়েছি,” প্রথমজন বলতে লাগলো, “এর আগেও আমাদের মহাকাশচারীদের একটা দলকে ঐ গ্রহে পাঠানো হয়েছিলো। তারপর তাদেরকে রীতিমত প্রাণ হাতে নিয়ে পালিয়ে আসতে হয়েছিলো। কারণ ঐ গ্রহের তথাকথিত বুদ্ধিমান প্রাণীরা আমাদের মহাকাশযান দেখামাত্রই নিজেদের ডজন খানেক উড়োযান নিয়ে হামলা করতে ছুটে এসেছিলো! চিন্তা করতে পারো অবস্থাটা? আমাদের একটা মাত্র মহাকাশযান, আর ওদের ডজনখানেক উড়োযান! ওরা শুধু প্রযুক্তিতেই উন্নতি করেছে, কিন্তু বুদ্ধিমত্তা আর মানসিকতার দিক দিয়ে ওরা আমাদের এখানকার বুনো আদিবাসীদের চাইতেও বর্বর!”
“কী যে বলো না ভাই!” প্রথমজনের কথা হেসে উড়িয়ে দিলো দ্বিতীয়জন। বলল, “ইতিহাস কিছুটা আমিও পড়েছি। তুমি যেই ঘটনার কথা বলছো, সেটা আজ থেকেও আরো প্রায় দেড়শো বছর আগেকার ঘটনা। এতদিনে ওরা অবশ্যই অনেকটা বদলেছে।”
“কিন্তু তাই বলে কথা নেই বার্তা নেই ওভাবে আক্রমণ করে বসবে?”
“ভয় পেয়েছিলো হয়ত বেচারারা!” বলল দ্বিতীয়জন। “তোমার ঘরে আচমকা কেউ ঢুকে পড়লে তুমি ভয় পাবে না?”
“তা পাব। কিন্তু তার উপর হুটহাট করে হামলা করে বসব না। জানতে চাইব সে কে, কোথা থেকে এসেছে, কী চায় ইত্যাদি।” মুখ বাকালো প্রথমজন। “আচ্ছা, দেড়শো বছর আগের কথা নাহয় বাদ-ই দিলাম। মাত্র পচিশ বছর আগে আমাদের আরো চারজন নভোচারী ঐ গ্রহে গিয়েও আবার সঙ্গে সঙ্গেই ফিরে এসেছিলো। কারণ তখন ঐ গ্রহটার একটা অংশে সেখানকার সেই তথাকথিত বুদ্ধিমান প্রাণীদের দু’পক্ষের মধ্যে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ চলছিলো। সেই যুদ্ধটা কী নিয়ে ছিলো বলো তো?”
মুখ টিপে হাসলো দ্বিতীয়জন। বলল, “তারা প্রস্রাব দাঁড়িয়ে করবে না বসে এটা নিয়ে!” কথাটা বলেই আর হাসি চেপে রাখতে পারলো না সে, হো হো করে হেসে উঠলো।
“তারপরেও তাদেরকে তুমি বুদ্ধিমান প্রাণী বলবে? যাদের মধ্যে কিনা ঠুনকো থেকেও ঠুনকো ব্যাপারে যুদ্ধ বেধে যায়?!”
“আচ্ছা, মানলাম তারা বুদ্ধিমান প্রাণী না।” দ্বিতীয়জন বোঝানোর চেষ্টা করল প্রথমজনকে, “কিন্তু একটা ব্যাপার একটু চিন্তা করে দ্যাখো তো, আমাদের গ্রহ ছাড়াও অন্য কোনো গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে, এরকমটা কি আজ থেকে দু’শো বছর আগেও কেউ ভাবতে পেরেছিলো? না, পারে নি। এখনো পারে না। পারলেও সেটা কেবলমাত্র বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে, বাস্তবে নয়। আজ থেকে দেড়শো বছর আগের আমাদের সেই মহাকাশচারীরা ফিরে এসে যখন বলেছিলো যে তারা ঐ গ্রহে বসবাসকারী প্রাণীদের তাড়া খেয়ে পালিয়ে এসেছে, তখন তাদেরকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করেছিলো কারণ তাদের হাতে কোনো প্রমাণ ছিলো না। এমনকি আজ থেকে পচিশ বছর আগেও যারা ঐ গ্রহটাতে গিয়েছিলো, তারাও ফিরে এসে সবার হাসি-ঠাট্টার খোরাকে পরিণত হয়েছিলো। কারণ ওখানে প্রাণের অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ তারা দেখাতে পারে নি। ওখানকার সেই প্রাণীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা তো দূরে থাক, যুদ্ধের মাঝখানে পড়ে তারা তো প্রাণের সামান্যতম নমুনাও সংগ্রহ করার ফুরসত পায় নি! এখন যদি আমরা ওখানে গিয়ে কোনো রকমে অন্তত একটা প্রাণীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে প্রাণের একটা ছোটখাটো নমুনাও ওখান থেকে সঙ্গে করে নিয়ে আসতে পারি, আর প্রমাণ করতে পারি যে শুধুমাত্র আমাদের গ্রহেই না বরং আমাদের গ্রহ থেকে দুই হাজার পাঁচশো পয়তাল্লিশ আলোকবর্ষ দূরের একটা গ্রহেও প্রাণের অস্তিত্ব আছে, তাহলে কীরকম একটা ব্যাপার দাঁড়াবে ভাবতে পারো? চিন্তা করতে পারো, আমাদের খ্যাতি তখন কোন পর্যায়ে চলে যাবে?!”
“হুম। এটা অবশ্য মন্দ বলো নি।” প্রথমবারের মত দ্বিতীয়জনের কথায় সম্মতি জানালো প্রথমজন। কিন্তু পরমুহুর্তেই আবার বলল, “কিন্তু ওখানে গিয়ে যদি দেখি, ঐ গর্দভ প্রাণীগুলো আবারো কোনো ঠুনকো বিষয় নিয়ে তুমুল যুদ্ধ বাঁধিয়ে বসে আছে?”
“আরে এত ভয় পাচ্ছো কেন?” আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে বলল দ্বিতীয়জন, “আমরা তো আর খালি হাতে যাচ্ছি না। নিরাপত্তার জন্যে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র তো নিচ্ছি-ই সঙ্গে করে!”
“আর হ্যা, পচিশ বছর আগের রিপোর্ট অনুযায়ী ঐ গ্রহের বায়ুমণ্ডল কিন্তু প্রচণ্ড দূষিত।ওখানকার বায়ুমণ্ডলে মিশ্রিত বিষাক্ত গ্যাসের কারণে ঐ চার মহাকাশচারীর মধ্যে একজন তো প্রায় মরতে বসেছিলো!” প্রথমজনের যেন রীতিমত গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো। “এখন তো আরো খারাপ অবস্থা হওয়ার কথা!”
দ্বিতীয়জন আবারও আশ্বস্ত করার চেষ্টা করল প্রথমজনকে, “ওটা নিয়েও ভয় পেয়ো না। আমাদের সাথে তো গ্যাস মাস্ক থাকবেই, ওখানে পৌঁছে ওটা আর মুখ থেকে খুলবই না!”
প্রথমজন কাঁধ নেড়ে বলল, “ঠিক আছে। চলো তাহলে, রওনা হওয়া যাক!”
অতঃপর পৃথিবী নামক গ্রহটির উদ্দেশ্যে মহাকাশযান নিয়ে রওনা হয়ে গেলো কেপলার-৯০ গ্রহের দুই নভোচারী।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১১:১৯
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×