“জ্যঁ ডমিনিক বোবি (Jean-Dominique Bauby)”
ফ্রান্সের এই বিখ্যাত অভিনেতা, লেখক এবং ফ্যাশন ম্যাগাজিন “ELLE” এর সম্পাদক ৪৩ বছর বয়সে, ১৯৯৫ সালের ৮ ডিসেম্বর, এক ম্যাসিভ স্ট্রোকের স্বীকার হন। বিশ দিন অজ্ঞান থাকার পর জেগে উঠে নিজেকে আবিষ্কার করেন এক হাসপাতালে। জেগে উঠার অল্প কিছুক্ষণ পর জানতে পারেন বাম চোখ বাদে শরীরের বাদ বাকি অংশ প্যারালাইজড হয়ে গেছে। শুরু হয় তার নিজের দেহের ভিতরের বন্দি জীবন। এই অবস্থায় তার বাম চোখের পাতা পিট পিট করার মাধ্যমে “পার্টনার-এসিস্টেড স্ক্যানিং” নামক এক অদ্ভুত পদ্ধতিতে যোগাযোগ করতেন উনি।
এই পদ্ধতিতে একজন লোক তার সামনে ধীরে ধীরে বর্ণমালাগুলো বার বার উচ্চারণ করতো, তার প্রয়োজনীয় বর্ণটি উচ্চারণ করলেই চোখ পিট পিট করতো। সমস্ত শরীর প্যারালাইজড হওয়াও সত্ত্বেও এই ধীর গতির পদ্ধতি ব্যবহার করে উনার ইন্টারলোকিউটর “ক্লাউডি ম্যান্ডিলিবিল” এর সহযোগীতায় লিখে ফেলেন “দ্যা ডাইভিং বেল এন্ড দ্যা বাটারফ্লাই” নামে হৃদয়গ্রাহী এক মেমোয়ের। বোবি ১৩২ পৃষ্টার পুরো বই তার মাথার ভিতর প্রস্তুত করেছেন এবং একটি একটি বর্ণ করে লিখিছেন। প্রতিদিন চার ঘন্টা করে প্রায় দশ মাস সার্থক পরিশ্রমের পর বইটি সম্পন্ন হয়েছিল।
এক হিসেবে দেখা গেছে বইটি লিখতে গিয়ে বোবিকে প্রায় দুই লক্ষ বার চোখের পাতা ফেলতে হয়েছিল এবং একটি শব্দ লিখতে লেগেছিল গড়ে প্রায় দুই মিনিট। বইটিতে তার স্ট্রোকের পরবর্তি প্রতিটা দিনের বর্ণনা এবং স্ট্রোকের আগের কিছু ঘটনা স্থান পেয়েছে। ১৯৯৭ সালের ৭ই মার্চ বইটি প্রকাশিত হয়। অসাধারণ রিভিউর সাথে সাথে ঐ দিনই বইয়ের সমস্ত কপি (২৫ হাজার) বিক্রি হয়ে যায় এবং অল্প সময়ের মধ্যেই ইউরোপের এক নম্বর বেস্ট সেলারে পরিণত হয়। বইটি প্রকাশিত হওয়ার দুইদিন পর অর্থাৎ ১৯৯৭ সালের ৯ই মার্চ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বোবি মৃত্যু বরণ করে।
২০০৭ সালে বিখ্যাত “দ্যা পিয়ানিস্ট” এই স্ক্রীন প্লে’র জন্য অস্কার প্রাপ্ত স্ক্রীন প্লে রাইটার রোনল্ড হারউড এর দক্ষ স্ক্রীন প্লে রাইটিং এর মাধ্যমে পরিচালক জুলিয়ান স্নাবল এই বইটিকে একই নামের এক মুভিতে রূপদান করেন। যা তাকে কান ফিল্ম ফেস্টিবল এর সেরা পরিচালক এর সম্মাননা এনে দেয়।
অসাধারণ স্ক্রীন প্লে এবং ইউনিক ক্যামেরা ওয়ার্ক সম্পন্ন অসাধারণ এই মুভিতে বোবি চরিত্রে প্রথমে জনি ডেপ এর অভিনয় করার কথা থাকলেও পরবর্তিতে বিখ্যাত ফ্রেঞ্চ অভিনেতা ম্যাথিউ আমালির্ক তা করেন। বই থেকে পুরো পার্ফেক্ট ভাবে এডাপ্ট করতে না পারলেও পরিচালক যথেষ্ট চেষ্টা করে এবং সফলও হয়েছেন অনেকাংশে। যার জন্য উনার প্রশংসা করাই যায়। মুভিতে মিউজিকের ব্যবহারে ছিল রাজকীয় ছোঁয়া। যা মুভিটি উপভোগ্য হওয়ার অন্যতম কারণ। মুভিটি ২০০৮ সালে সেরা পরিচালকসহ মোট চারটি ক্যাটাগরিতে অস্কারের নমিনেশন পেয়েছিল এবং গোল্ডেন গ্লোবে জিতেছিল সেরা পরিচালক এবং সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্রের পুরস্কার।
যেহেতু বইটি পড়িনি তাই জানি না কেমন তবে মুভিটি দেখে বইটি কেমন হবে তা হারে হারে অনুমান করতে পারছি। সবাইকে বইটি পড়ার এবং মুভিটি দেখার আমন্ত্রন রইলো।
ইংরেজি ভাষায় অনূদিত বইয়ের ডাউনলোড লিংকঃ- Click This Link
মুভির ডাউনলোড লিংকঃ- Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৫৫