somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ম্যালহাম গ্রামে একদিন

২৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :












নর্থ ইয়র্কশায়ারের নদী রিভার এ্যায়ার (Aire) । ম্যালহাম কোভের নিচ থেকে উৎপত্তি ঘটিয়ে ম্যালহাম গ্রামের ওপর দিয়ে নদীটি বয়ে গেছে। গারগ্রেইভ(Gargrave) আর স্কিপটনকে (Skipton) অতিক্রম করে এ্যায়ার নদী প্রবেশ করেছে ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ারে। সেখানে Keighley, Bingley, Saltaire Shipley অতিক্রম করে প্রবেশ করেছে Leeds সিটিতে।

২০১৬ সালে পড়তে গিয়েছিলাম ইউনিভার্সিটি অফ লীডসে। সেখানে নানারকম ফিল্ড ভিজিটে নিয়ে যেত আমাদের। উদ্দেশ্য ডাটা সংগ্রহ করা। সেই সংগ্রহীকৃত ডাটা নিয়ে পরে করানো হতো নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষা।

একদিন এই অ্যাায়ার নদীর উৎপত্তি স্থলে নিয়ে যাওয়া হলো আমাদের। সকাল সাতটায় ইউনিভার্সিটি থেকে বাসে উঠে আমরা রওয়ানা দিলাম। বেশ দীর্ঘ সময়ের যাত্রা। সাথে করে একটা বড় ব্যাকপ্যাক নিয়েছিলাম সবাই। সেখানে প্রয়োজনীয় টুকিটাকি, পানি, হাল্কা খাবার, মাফলার এটা সেটা।

এক ঝাঁক তরুনের মাঝে আমি অপেক্ষাকৃত বেশী বয়সী। অবশ্য স্বস্তির বিষয় এই যে, আমার মতো দু একজনও ছিল যারা বেশি বয়সে পড়তে গিয়ে দলছুট হয়ে পড়েছে। তবে প্রত্যেকেই যার যার মতো করে নিজের অস্বস্তি কাটানোর ব্যবস্থা করে নিয়েছে। আমি ভিড়ে গিয়েছিলাম চাইনিজগুলোর সাথে। চাইনিজ মেয়েগুলো এত কিউট আর প্রাণবন্ত। সব কথাতে হি হি করে হাসে। ইংরেজিতে প্রচণ্ড দুর্বল আর অংকে দুর্দান্ত চোখা। তবে এ ছিল আমার পর্যবেক্ষণ। এটাকে সার্বজনীন বলা যাবে কী না বলতে পারব না।

লিন নামে একজনের সাথে আমার খুব বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। লিন কম্পিউটার এমনভাবে ব্যবহার করত, যেন কোনও খেলনা সামগ্রী। আর অংক করত মুখে মুখে।

যাহোক আমাদের সেই সেদিনের যাত্রার গল্প বলি। সাথে বেশ কিছু শিক্ষক শিক্ষিকা ছিলেন। তারা যথেষ্ট বন্ধুসুলভ। আমাদের দেশের গোমড়ামুখো শিক্ষকদের মতো নয়। পুরো রাস্তা তারা ছাত্র ছাত্রীদের হই হুল্লোড় শুনলেন এবং মাঝে মাঝে একটু আধটু উস্কানিও দিলেন। তবে বাস থেকে নামার আগে সতর্ক করে দিতে ভুললেন না। 'তোমরা এখানে প্রথমবার এসেছ হয়ত অনেকেই। কাজেই সাবধানে থাকবে এবং নিরাপদে সময়মত বাসে ফিরে আসবে।'

আমরা গন্তব্যে নেমে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেলাম। এ কী স্বর্গীয় শোভা! এখানে স্যাম্পল কী সংগ্রহ করব! সারাদিন ঘুরতে দিলেই তো পারে আমাদের!

ঘুরলাম আমরা মন্দ না। সাথে নিয়ে আসা খাবার দাবার খেলাম। একটা করে লাঞ্চ প্যাকেটও দিয়ে দেওয়া হল আমাদেরকে। ভাবলাম ভালই তো, খাব দাব ঘুরব। তা করলাম তবে কাজ করতে হলো নিজদের গরজেই। আমাদের কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যেতে হয়েছে। কাজেই যে গ্রুপ কাজ করবে না, পরে তাদেরকে পস্তাতে হবে। সোজা হিসাব! এতগুলো টাকা খরচা করে বুড়া বয়সে পড়তে গিয়েছি! পস্তানোর ইচ্ছে ছিল না তাই!

আনন্দ নিয়ে স্যাম্পল কালেকশন চলল। সেই সাথে চলল নানারকম ঠাট্টা তামাশা। ম্যালহাম কোভ দেখিয়ে শিক্ষিকা জানালেন এখানে নাকি হ্যারি পটারের শুটিং হয়েছিল। ব্যস আর যাবে কোথায়! আমরা দল বেঁধে সেই কোভের সামনে গিয়ে ছবি তুললাম। ঘুরতে ঘুরতে নানারকম মজার জিনিসের সাথেও দেখা হয়ে গেল।

একটা গাছের কাণ্ডে দেখলাম নানারকম পেনি ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে। শিক্ষিকা দেখিয়ে বললেন, হয়ত এখানে উইশ করা হয়েছে। বুঝলাম এটিও আমাদের দেশের সেই সুতা ঝুলানোর কেচ্ছা আর কী! ওরা বলে উইশ, আমরা বলি মানত। তফাত বেশি কিছু না। কুসংস্কার দেশে দেশে যুগে যুগে এক এবং অভিন্ন।

ফিরতে ফিরতে সেদিন আমাদের সন্ধ্যা হয়ে এলো। আমরা মোট পাঁচটা জায়গা থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করলাম। অর্থাৎ নদীটির গতিপথের পাঁচটি শাখা থেকে।

অনেক আনন্দ আর মনভরা তৃপ্তি নিয়ে বাসায় ফিরলাম। আহা! বর্ণীল তারুণ্যে বইয়ে মুখ গুঁজেই সময়টাকে পার করেছি! উদ্বেগ ভরা মন নিয়ে পরীক্ষার হলে চিড়েচ্যাপ্টা হওয়ার জন্য অপেক্ষা করেছি। জানতেও পারিনি এত আনন্দ পড়াশুনায়! এই আনন্দের সাথে বার বার দেখা করতে মন চায়!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৩
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×