দুপুরের বাঁশি :
এইসব ভরদুপুরে অজস্র কাক, এইসব দুপুরে রোদরঙ্গা হাওয়ায়; ছাতিম গাছের ছায়া একটা ইলিপ্টিকাল সময়ের স্টিকার এঁটে দেয় জানালার ডান পাশটায়।
এইসব দুপুরকে সবাই বলে মনোটোনাস।
আর এই যে এইসব শূণ্যদুপুরে কে জানি একটানা বাঁশি বাজায় অদূরে; বিষাদসঙ্গীত।
আটপৌরে জনতা ক্ষুব্ধ – “পাগল নাকি এই হালায়!
এই দুপুরে বাঁশি বাজাস ক্যান বে? রাইতে কি ঘুম পায়? ”
বাঁশিতে তখন একটা কৌতুক ভেসে ওঠে।
শহরের নিয়ম :
শহর থেকে পালাচ্ছি, দূরে, আরো একটু দূরে, লোডস্টোন এর সীমানার ঠিক দু-হাত দূরত্বে; যেখানে দীঘির আঁচলে ভেসে ওঠে একটি হৃষ্টপুষ্ট শাপলা ।
বাতাসে ঘাসফড়িং এর মত দূরন্ত মৃদুবৃষ্টির শিষ। কোন এক টিপিকাল মা একটা রিকশাকে থামিয়ে সওয়ার; অতিরিক্ত সাবধানতায় হুড আর নীল রঙের পলিথিন দিয়ে একটা কারাগার বানিয়ে তার মাঝে পুরে দ্যান তার পাঁচ-ছ বছরের শিশুকে। আমি দেখি, রিকশাটা চলতে শুরু করলে শিশুটি কারাগার থেকে একটা হাত বের করে দ্যায় বৃষ্টির শব্দ ছোঁবে বলে।
তাকিয়ো না রারুসি, পেছনে তাকিয়ো না। তাকালেই তুমি ঐ বৈশিষ্ট্যহীন ছায়াগুলোর মায়ায় পড়ে যাবে। শহরের দিকে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেই একটা ভূত তোমার চোখের পাঁপড়িতে ভর করবে। আর কখনোই তুমি শহর থেকে বের হতে পারবে না।
তাকিয়ো না।
বৃষ্টিবালিকা :
এই যে সামনে একটা সুগভীর সবুজ। তার পরিধির উপরে আজহার অরণ্যপাঠ করার সূচিপত্র হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে; আগন্তুক। অরণ্যের ঠিক মাঝে, সাঁঝের ভাঁজে একটা ঝর্ণা থাকার কথা। সেন্টারফোলড। সেই ঝর্ণায় ভেজে দুটো বনবিড়াল। একটা পাহাড়, অনির্দিষ্ট উচ্চতায়; মেঘভেজা বরফ চোখে অপলক তাকিয়ে দ্যাখে পাতাদের হৈচৈ। এইসব দৃশ্য আজহারের গোপন দর্পণের উল্টোপাশের প্রলেপ।
বুনোফুলে রঙের ঝড়; কোন এক বৃদ্ধ শেকড়ের খুব কাছে জন্ম নেয় এক বৃষ্টিবালিকা। এই বালিকার পায়েলের পাশে পড়ে থাকে, পুড়ে থাকে আজহার এর অন্যমনস্ক মন। আজহার জানে, বিকল পাখির গান এর মাঝে একটা কবিতা লুকানো আছে। সেই কবিতা খুঁজতে গিয়ে দ্যাখে – বৃষ্টিবালিকার পায়ে আলতা দিয়ে আঁকা একটা কিশোরী নদী লজ্জা পাচ্ছে খুব।
বালিকার ঠোঁটে ঢেউ; আজহারের কানে কানে বলে – আজকে রারুসির মন খারাপ। চলো, একটা লাল বেলুন উড়াই।
কিছু বেশি কথা :
১-'বিকল পাখির গান' নূরুল আলম আতিক এর একটি টেলিছবির নাম। টেলিছবিটা খুবই সুন্দর।
২- "কবিতা লিখে ফেললাম" বলাটা খুব কঠিন মনে হয় আমার কাছে। তাই, এই তিনটাকে হয়তো অণুগল্প বলাটাই শ্রেয়। তবে, সবচেয়ে মানানসই তকমা - "কিছু না"; গার্বেজ।
৩- নিজেকে গিনিপিগ ধরে সিদ্ধান্তে আসলে বলতে হয় - তরুণদের কখনো মন খারাপ হয় না। তরুণদের হয় 'মেজাজ গরম'।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৪:০৭