somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিনটি অণুগল্প

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




অণুগল্প ১-

স্বামী – স্ত্রী শুয়ে আছেন একসাথে। পুরো সপ্তাহ ভেসে গেছে ব্যস্ততায়, ক্লান্তিতে। আহারে, আবুল হাসানের সেই লক্ষী বউ! তার নাকফুল ছোঁয়া হয়না কতদিন! বিছানার চাদরে ঝড়, মশারির ফাঁক গলে এলোপাথারি জোৎস্না। জানালা দিয়ে চোখটাকে টুপ করে ঐদিকে পাঠিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে স্বামীর ঠোঁট স্ত্রীর চিবুক ভেজায়।
-দ্যাখো, কি সুন্দর জোসনা আইজকা!
স্ত্রী দু সেকেন্ড নীরব থেকে আলতো করে বলে ওঠেন - শুনো নিতুর আব্বা, নিতুর স্কুলের টাকাটা তো দ্যাওয়া হয় নাই। মনে রাইক্ষো।
স্বামী দীর্ঘশ্বাস ফ্যালেন, স্ত্রী দীর্ঘশ্বাস ফ্যালেন। এইসব দীর্ঘশ্বাস মশারির মাঝে আততায়ী দু-একটা মশার শুঁড়ে লেপ্টে যায়। তারপর, সেই শুঁড় তাদের রক্তে আরো দীর্ঘশ্বাস বোনে।

অণুগল্প ২-

ঐ যে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন– “তেরো-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই। শোভাও নাই, কোনো কাজেও লাগে না। স্নেহও উদ্রেক করে না, তাহার সঙ্গসুখও বিশেষ প্রার্থনীয় নহে।” তো এই তেরো-চৌদ্দ বছরের একটা কিশোর, ধরলাম আজহার তার নাম; সে তার খালার বাসায় বেড়াতে গেলে খালা তার বেডরুমে বসে বছরখানেকের শিশুটিকে দেখভালের সাথে সাথে এই-ঐ ব্যাপার স্যাপার নিয়ে বেশ গল্প জুড়ে দ্যান আজহারের সাথে। মাঝে একবার শিশুটি কেঁদে উঠলে আজহার দ্যাখে, খালা গল্প করতে করতেই কি নিঃসঙ্কোচ শিশুটিকে কোলে তুলে একটা স্তন বুজে দ্যান কোমল ঠোঁটে। আর সেই সময়, আজহার এক হতবিহবল পরিস্থিতির মাঝে পড়ে যায়। যেহেতু খালা তখনো গল্প করছেন, অতএব হুট করে উঠে চলে যাওয়া যায় না, আবার গল্প শোনার জন্য খালার দিকে তাকাতেই হয়। আর এই তাকানোই সর্বনাশ। উফফ, চোখ, দোহাই লাগে-শান্ত থাকো।

আরো কিছুক্ষণ পর আজহারের গাইঁগুঁই সব তুচ্ছ করে চা-নাশতা আনার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠে চলে গেলে আজহার দ্যাখে-শিশুটি কি সুন্দর হাত দুটো মুঠো পাকিয়ে ফুল হয়ে কোলবালিশের মাঝে ঘুমিয়ে আছে। এই ফাঁকে সকলের অগোচরে একটা চুমু খাওয়া যায়। শিশুর ঠোঁটে তখনো দুধের একটা মিষ্টি গন্ধ।
আরো একটু পরে, মিনিটখানেক ধরে শিশুটির দিকে চুপচাপ তাকিয়ে থাকতে থাকতে আজহারের হঠাৎ মনে হয়-এই একটা মানুষ, একে খুন করা কত সোজা!

তাৎক্ষণিক একটা শক খেয়ে সম্বিত ফেরে; আজহার কিছু না বুঝে আল্লাহর নাম নিতে থাকে ক্রমাগত।

অণুগল্প ৩-

ঐ নিতুই বড় হল; বয়স তার আঠারো ছুঁইছুঁই, সামনে তার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। এইরকম কুক্ষণে প্রেমদেবতা তার সাথে খেলা শুরু করলেন। নিতু তার চাচাতো ভাইয়ের প্রেমে হাবুডুবু খেল, ইসহাক-কবির-আফসার সব পৃষ্ঠায় কি সুন্দর দেখা যাচ্ছে সেই যুবক; ধরে নিলাম আজহারের পোট্রেট। আহ প্রেম, তুমি এতো মিষ্টি কেন? এইসব কর্কশ বইয়ের পাতায় এতো কবিতা মাখালে কখন? এভাবেই চলতে চলতে কোন এক ভরদুপুরে মনখারাপের পাহাড়ে; নিতু পড়ে ফেললো নিঃসঙ্গতা কবিতা।

অতটুকু চায়নি বালিকা!
অত হৈ রৈ লোক, অত ভীড়, অত সমাগম!
চেয়েছিল আরো কিছু কম!

একটি জলের খনি
তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিল

একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী!

নিতুর চোখে জল; আপাতদৃষ্টিতে অকারণ। নিতু নিজেও বোঝে না এতো শূন্যতা কোত্থেকে এলো। তৃষ্ণার্ত চোখ, তোমার এতো কান্না কেন? বিছানায় উপুর হয়ে বালিশ ভেজানোর প্রাক্কালে ঐ যে আমাদের সেই লক্ষী বউ নিতুর আম্মা বাঁজখাই গলায় চিৎকার করে ওঠেন- অ্যাই নিতুউউউ, উঠলিই তো দুপুর বাজায়া, অখন আবার ঘুমানোর কী আছে ? উঠ, এক্ষুণি উঠ। উইঠা পড়তে ব। এএএহ, দুইদিন পর পরীক্ষা, তাও রাজকুমারীর ঘুম ভাঙ্গে না ! উঠ, এক্ষুণি উইঠা পড়তে ব।
বালিশে অসমাপ্ত কান্নার মাঝে ভিজে পড়ে থাকে নিতুর রমণী হওয়ার ইচ্ছাটুকু।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৪২
৪৭টি মন্তব্য ৪৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×