somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা কবে উঠবো?

২৭ শে আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৪:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্লাস এইটে থাকতে কি এক প্রশ্নের জবাবে আমাদের টিচার বলেছিলেন, ডেভেলপমেন্ট একটা সাইকেলের মত, সবাই একসময় উপরে উঠে, আবার সময় হলে নিচে নামে। আমাদের দেশ এখন নিচে, কিন্তু দেখবি আমরা একসময় অনেক উপরে উঠবো। অন্যদের কথা জানিনা, কিন্তু আমি সেদিন কেন যেন বেশ খুশী হয়ে গিয়েছিলাম, যদিও দেশের কথা নিয়ে চিন্তা করার ফুসরত তখন আমার ছিলোনা, পড়াশোনা, বাবা-মার বকাবকি আর খেলার চিন্তা করে হাতে আর সময় থাকলেনা অন্যকিছু ভাবাভাবি। তবু খুশী হয়েছিলাম এই ভেবে যে হয়ত আমরাও একসময় উন্নতির সেই গ্রাফের ঐ চুড়ায় উঠবো, জীবনটা অনেক মজার হবে। অনেকদিন পার হয়ে গেছে তারপর। যদিও নিজে তেমন কিছুই করিনি দেশের জন্য, তবুও মনের মধ্যে ক্ষীন আশা ছিল, এত ভাল ভাল সব মানুষ যখন আছে, একদিন আমরা উঠবোই। অথচ যত দিন যাচ্ছে, আমার ক্ষীন আশা কমতে কমতে একদম তলানীতে গিয়ে পৌছে গেছে।


সেই কবে আমরা স্বাধীন হয়েছি, প্রতি বছর যদি এক পা করেও আগাতে পারতাম, আমরা আরও অনেক বেশী ভালো থাকতে পারতাম। এখনতো মনে হয় আমরা দিন দিন শুধু পিছিয়েই যাচ্ছি। এমনকি এগিয়ে যাবার তেমন কোনো পরিকল্পনা আমাদের আছে কিনা সেটাও মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়। একজনের আরেকজনের উপর দোষ চাপানো দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গেছি আমরা। ইলেকট্রিসিটি নেই, রাস্তা ঘাট নেই, জিনিসপত্রের দামের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই, জীবনের নিরাপত্তা নেই, একসময় মানুষের মধ্যে মানবতা ছিল, এখন সেটাও নেই। আছে শুধু লোডশেডিং, গরু আর ছাগলের মধ্যে পার্থক্য বোঝা দূরপাল্লার বাস/ ট্রাক ড্রাইভার, অশিক্ষিত এবং লজ্জা-শরম গুলে খাওয়া মন্ত্রিপরিষদ, আর সিনবাদের ভূতের মত ঘাড়ের উপর চেপে বসা হিংসাপরায়ণ দুই মহিলা। মাঝে মাঝে বড় অসহায় লাগে নিজেকে, সবাই তো বোঝে সবকিছু, কিন্তু কেন কোন প্রতিকার পাচ্ছিনা আমরা?


ভেবে দেখলাম যে আমাদের পয়েন্ট অফ ভিউ খুব সহজেই পরিবর্তন হয়ে যায়। তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের মৃত্যুর পর যখন অবৈধভাবে চালকদের লাইসেন্স দেয়ার কথা প্রকাশ পেল, তখন তো উচিৎ ছিলো অবৈধ সব লাইসেন্স বাতিল করা। কিন্তু না, গরীবের পেটে লাথি মারার কথা তো ভাবাও পাপ, তাছাড়া পরবর্তী ভোটের কথাও তো মাথায় রাখতে হবে। জানি শুনতে খারাপ লাগবে, কিন্তু আমার মনে হয়না দূরপাল্লার বাস/ ট্রাক ড্রাইভারদের কে আমরা গরীব শ্রেণীতে ফেলতে পারব।এদেরকে রাস্তায় চলাচলের অনুমতি দেয়া আর সাধারন মানুষের উপর র‌্যাব লেলিয়ে দেয়ার মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য আমার চোখে পড়ছেনা। সড়ক দূর্ঘটনায় শুধু আমরা সাধারন মানুষই মরি, মন্ত্রী-মিনিস্টাররা মরেননা, কারন তাদের গাড়ীর আগে কিছু চামচা শ্রেণীর গাড়ী থাকে। (আশা করছি এই মন্তব্যের জন্য আমাকে ডিজিটাল আদালতে তলব করা হবেনা)। সুতরাং যা করার আমাদেরই করতে হবে বলে মনে হচ্ছে। তারানা হালিমের অনশনের উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই, এর সাথে সাথে এটাও আশা করছি যে এটা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে নয়, মানবিক ও সামাজিক দৃষ্টিকোন থেকে করা হচ্ছে।


জাতি হিসেবে আমরা অবশ্যই ব্যতিক্রম, আমরা অনেকবেশী অনুভূতিপরায়ন, আমরা সহজেই মানুষের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দিতে পারি, আবার উত্তেজনার বশে প্রিয় মানুষদের কষ্ট দিতেও আমাদের বাধেঁনা। জিম্বাবুয়ের কাছে ৩-২ তে সিরিজ হেরে ফিরে আসা ক্রিকেট টিমকে বিমানবন্দরে ভোর ৪টায় জুতার মালা দেখাতে উৎসাহী মানুষের অভাব পরেনা আমাদের। হ্য়ত তাদের বেশী ভালোবাসি বলেই আমাদের এই অনুভূতি প্রদর্শন। ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে এটা একটু বাড়াবাড়ি মনে হয়েছিল, কিন্তু পরমূহুর্তেই মনে মনে হেসে ভেবেছি 'ভালই হয়েছে, এবার যদি একটু শিক্ষা হয়'। আমার কি দোষ, আমরা এমনই!


এদিকে পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে, ফেসবুক, গুগল প্লাস, ইউটিউব, মোবাইল ফোনের জোয়ারে আমরাও ভেসে একটু এগিয়ে গেছি। আমি অনেকটা নিশ্চিত যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং বাকি সংসদ সদস্য (সম্ভবত আন্দালিব রহমান ছাড়া) থেকে শুরু করে উচ্চপর্যায়ের সচিব পর্যন্ত কারোই ফেসবুক বা ইউটিউব সম্পর্কে পরিস্কার কোন ধারনা নেই। তবুও প্রধানমন্ত্রী বা বিরোধীদলীয় নেত্রীর ব্যাপারে কারো কোনো মন্তব্য উনাদের ঘিরে থাকা অতিউৎসাহী লোকজনের জ্বালায় তাদের কানে চলেই যায়। তারপর শুরু হয় তাদের অযথা হয়রানি। সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটেও যদি একটু মনের দুঃখ ভাগ করতে না পারি, তাহলে আমরা কোথায় যাব? পুলিশের কাছে গিয়ে তো লাভ নেই, বাজারে নিয়ে ছিনতাইকারী বলে গনপিটুনী দিয়ে ওপারে পাঠিয়ে দেবে। মাথায় পট্টিবাধা কালো চশমাপরা উনাদের কাছে যাবার কথা চিন্তা করলেই তো মনেহয় 'থাক, বেচে তো আছি আপাতত'।


জানিনা কিভাবে এতকিছুর মধ্যে আমরা বেঁচে আছি। ভাঙ্গাচোড়া রাস্তা আর ঘাতক ড্রাইভারের ধাক্কায় যদি মারা নাও যাই, আহত অবস্হায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যালের বয়, ব্রাদার, আর সুইপাররা তো আছেই। উনারা যদি কষ্ট করে অপারেশন করে দেন তাহলে ওপারে যাওয়া ঠেকায় কে? (যারা এখনো ভিডিওটা দেখেননি তাদের জন্য লিংক দিয়ে দিলাম)



এতকিছুর পরও আমরা একগাদা আশা নিয়ে বসে থাকি, একদিন সব কষ্ট শেষ হবে। কিন্তু সেই কষ্ট শেষ হওয়াটা দেখতে যে আরও কত দিন, আরও কত জীবন উৎসর্গ করতে হবে কে জানে। আর কতখানি নিচে নামার পর আমরা উপরে উঠবো?

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৪:০১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×