গাছটার সাথে বন্ধুত্ব অনেক দিনের। কি ভীষন বর্ষনের সন্ধা, কি তপ্ত রোদেলা দুপুরবেলা, অথবা ফাল্গুনের পড়ন্ত বিকেলবেলায় জীবনটা যখন ভীষন ক্লান্ত, অথবা কোথাও কথা বলার কেউ থাকত না, গাছটার আঙিনায় বসে শুরু হোতো কথা বলা। সে যেন এক সময়জ্ঞান তুচ্ছ করে শুরু হোতো কথা বলা।
অভিযোগ, অনুনয়, আকাংখা একের পর বলেই যেত হোসেন। তীব্র ক্ষোভে, অথবা প্রচণ্ড আক্ষেপে কখনো আচড়ে দিয়েছে গাছটার শরীর, নখ দিয়ে খুটখুট করে কখনো বাকল তুলে ফেলেছে, উত্তরে কিচ্ছু বলেনি গাছটা শুধু আঘাতের জায়গা থেকে কশ বেরিয়ে এসেছে, হাল্কা লাল রংয়ের।খুব মন খারাপের দিনে জড়িয়ে ধরে থেকেছে, তার উত্তরেও কিছু বলতে পারেনি গাছটা।
পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লেখা চিঠি গুলি যখন নিরব থেকে একমনে দেয়াশলাই এর কাঠি জালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে, সার্টিফিকেট গুলি ছিড়ে ছিড়ে ওই আগুনে ফেলেছে, আগুনের আচে পুড়েছে শরীরের খানিক জায়গা শুধু অনুভব করে গিয়েছে আধপাগল এই মানুষটার অনুভূতি গুলি। গাছ টা ভাবে মানুষের আসলে দিন শেষে কথা বলার কাউকে প্রয়োজন হয়। এই মানুষ টার নেই, কেউ ই নেই। এই যে এত এত মানুষ তাও কি কেউ ই নেই? প্রশ্ন আসলে ও কিছুই বলতে পারে না।
এই তো কিছুদিন আগে, ভাজ না খোলা এক শাড়ি নিয়ে পুড়িয়ে দিল, হয়ত অনেকদিন ধরে আলমারিতে পড়ে ছিল, রং নষ্ট হয়ে গিয়েছে, মানুষ টা ঐদিন কোন কথাই বলে নি, শীতল চোখে ওই পুড়ে যাওয়া দেখছিল। এক মানুষ হারিয়ে ফেলার অনুভূতি কেমন খুব জানতে ইচ্ছে করছিল গাছটার। খুব ইচ্ছে করছিল কিছু বলতে, কিন্তু গাছ তো। মরে যাওয়া গাছ। একটা পাতাও নেই যে পাতায় পাতায় ভাষা বানিয়ে হোসেন কে কিছু বলবে।খুব কথা বলতে ইচ্ছে হয়। মানুষটাকে খুব বলতে ইচ্ছে হয়। মানুষ টা ভয় পাবে না তো?
মরে যাওয়া গাছটায় হঠাৎ ই একটু একটু করে প্রান ফিরে আসে, একটু সবুজ দেখা যায়, দুটি তিনটি পাতা আসতে থাকে। গাছটা অপেক্ষায় থাকে তীব্র যৌবনের।
তার ও অনেক কিছু বলার আছে। এক জীবনে অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৩২