এখন সন্ধ্যা হবে। মানে বিকেলের শেষ সময় চলছে। সূর্যের আলো লালচে থেকে পাকা আমের মত রং করতে করতে এক সময় টুপ করে ডুবে যাবে। শীতের মৌসুমের শেষ সময় চলছে, সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে একটু ঠান্ডা ঠান্ডা লাগে, তবে তা গরম কাপড় পড়বার মত নয়। এই সময় তেলে ভাজা গরম গরম লালচে বেগুনি থেকে ভারী মজা লাগে। দুটি বেগুনি, দুটো আলুর চপ, আর তারপর কম চিনি দেয়া একটা দুধ চায়ে চুমুক দিতেই হোসেনের চিঠি লিখবার ইচ্ছে মাথায় আসল। চিঠি লিখবে।
চিঠি! এই যুগে কেউ চিঠি লেখে?
নিজেকেই যেন প্রশ্ন করে হোসেন। রাস্তায় হাটতে হাটতে যে কয়টা ওই লাল রংয়ের চিঠির বাক্স দেখেছে প্রায় সব কয়টিই অচল, কিছু ভাংগা, কিছুতে তালা ঝুলছে। হৃদয় নিংড়ানো অক্ষরে বোনা চিঠি পোস্ট করবার জায়গা আর নেই তেমন। অথচ খুব বেশি দিন কি আগের কথা, যখন চিঠি ছিল রাগ, অনুরাগ, ভালোবাসার এক অদ্বিতীয় মাধ্যম? লুকিয়ে ঝুকিয়ে না বলা কথা বলা হোক আর পরিবারের খোজ দেয়া নেয়া হোক, সামনা সামনি যে কথা গুলি বুকের মাঝে জমে থাকত কিন্তু মুখ দিয়ে আর প্রকাশ হোতো না কি অবলীলায় না চিঠিতে বলা হোত। যেন চিঠি যেন শুধু মাত্র মন, কাগজ, আর কলম ই না, যেন পরম বন্ধু। কথা বলবার যে জড়তা, যে সংকোচ, যে আড়স্টতা, কলমের হাত ধরে কাগজের সেই সরল সাদা বুকে, অক্ষরের পর অক্ষর সাজিয়ে, যেন যাকে লিখছি সে সাদা পৃসঠার ঠিক ওপারে, যেন তার মুখ দেখা যাচ্ছে যেভাবে মন দেখতে চায় মুখখানি সেভাবেই, কোনো বক্তব্যহীন, শুধু অভিব্যাক্তি নিয়ে চেয়ে আছে। না বলা কথা গুলি যেন অন্তর থেকে বেরিয়ে এসে কলমের কালিতে সেই সাদা পৃসঠায় লেখা নামে রুপ নেয়। আহা কি আবেগ জড়ানো সেই লেখা।
কখনও আব্দারে ভরপুর তো কখনো অভিমানে কখনো প্রচন্ড হতাশায়, কখনো পরম পাবার আশায়, কখনো তীব্র আকাংখায়, কখনো শেষ ভরসায়, কখনো বা তা প্রথম চিঠি কখনো বা শেষ চিঠি। কখনো তা বহুল আদান প্রদানে এক ইতিহাস, অথবা কোন কিছুর দলিল। কি লিখব কি লিখব, কিভাবে লিখব, কি ভাবে শুরু করব, কি নামে লিখব, কোন শব্দটা যুতসই, বানান ভুল হোলো না তো? বেশি ছোট হয়ে গেল না তো আবার বেশি বড় হয়ে গেল না তো? কত আশংকায় পৃসঠা ছিড়ে ছিড়ে ফেলা, অনেক সাধনার পর মন মত একটা চিঠি লিখে ফেলা। প্রিয়জনের হাত পর্যন্ত পৌছানোর এক্টা বুক দূরুদুরু ভাব এরপর উত্তরের আশায় দিন গুনতে থাকা। চিঠি পেয়ে কি ভাবল, কি উত্তর আসবে, আদৌ উত্তর কি দেবে? এ আরেক উত্তেজনা। যখন চিঠির প্রতিউত্তরে চিঠি আসে, কখনো এক নিমিষেই পড়ে ফেলা, অথবা সযত্নে রেখে একাকী করে নিজেকে ধীরে ধীরে পড়ে ফেলা, বিশাল ব্যাপার। এ শুধু চিঠি লেখা লিখিই নয়, এর সাথে আদ্যোপান্ত যে কত কিছু আছে তা প্রদান আর আদানকারী ই জানে৷ বড্ড ইচ্ছে করছে, চিঠি লিখবে হোসেন।
প্রাপক নেই কেউ ই, তবু লিখবে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৫৫