যেকালে স্কুলে ভর্তি হতে হতেই ছেলেমেয়েদের দশ বার বছর বয়স লেগে যেত, সেকালের ছাত্র ছিলেন আমাদের জামাল খান। স্কুলে তিনি মন বসাতে পারেন নি। সেখানে বসে বই খাতা নিয়ে ফাইট করে সময় নষ্ট করার চেয়ে এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে, প্রতিবেশির গাছ থেকে এককাঁদি সুপারি কিংবা দুটা ঝুনা নারিকেল চুরি করে নলদিয়ার যাত্রাপালার পাথেয় সংগ্রহ করায় তিনি অধিক মনযোগী ছিলেন।
বিড়ির টাকার যোগান দিতে সহপাঠির বই চুরি ইতিহাসের এই জীবন্ত নায়ক, ক্লাশ থ্রি সেকেন্ড ইয়ারের সময় হেড মাস্টার উমেশ বাবুর পার্কার কলম চুরি করে সেই যে স্কুল থেকে ভেগেছেন আর জীবনে ওমুখো হননি। সেই থেকে আর Book স্পর্শ করেননি জামাল। Book এর প্রতি কোন আকর্শন না থাকলেও আরেক প্রকার বুক এর প্রতি উনার আগ্রহ সীমাহীন। তাইতো স্কুল ছাড়ার কিছুদিন পরেই আক্কাস মাঝির মেয়ে জমিলার অভিযোগের ভিত্তিতে তার ভাইদের হাতে ‘সাপ মারা’ মার খেয়েছিলেন।
এ বুকের প্রতি আকর্ষণ থেকেই তিনি এখন Book এর প্রতিও আসক্ত!এ Book কাগজের কোন Book নয় এ হচ্ছে FaceBook.
দুম্বা চরানো ভিসায় বেশ কয় বছর সৌদি ছিলেন।সেখানে থাকাকালীন শিক্ষদিক্ষায় তারই সমগোত্রিয় একজনকে খেপচা,খবুজ খাইয়ে Gamal Khan নামে আইডি খুলে এখন দেদারসে ফেসবুক গুতান। মাঝে মাঝে ‘মুরাদ টাকলা’ ভাষায় স্ট্যাটাসও দেন।
এইতো সেদিন লিখলেন- amar a duti cock pathar to noy... 'আমার এ দুটি কক পাঠার তো নয়...' পড়ে একজন কমেন্ট করে বসল, তোর দুটি কক এল কোত্থেকে? পাঁঠার থেকে ধার নিয়েছিস? নইলে পাঁঠার কথা এল কেন?
এখানে ‘মুরাদ টাকলা’ ভাষা বিষয়ে একটু বলি-ইদার্নিং ফেসবুকে হু হু করে বেড়ে চলেছে মুরাদ টাকলার সংখ্যা। বাংলার ফেসবুকের আকাশে আজ মুরাদ টাকলার ঘনঘটা। টাকলা ভাষা ঠিকমত বুঝতে না পারায় অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। ঘটে যায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা!
হয়তো আপনার কোন টাকলা বান্ধবী আপনাকে মেসেজ করল- amar vagina dekhchen? আপনি উত্তর করলেন- আস্তাগফিরুল্লাহ! ব্যস এখানেই আপনি হয়ে গেলেন আনফ্রেন্ড,ব্লক সবিশেষ ব্রেকাপ।
মুরাদ টাকলা বাংলা ভাষার কীবোর্ড-বিপর্যয়জাত বিকৃত একটি রূপ। অভ্র পুর্ব যুগে ডিজিটাল মাধ্যমে রোমান হরফে বাংলা লিখতে গিয়ে ভাষাগত অজ্ঞতাবশত এই ভাষার উদ্ভব। একবার কোন এক ব্যক্তি কারও উপর ক্ষুব্ধ হয়ে ফেসবুকে লিখতে চাইলেন,'তোর এত বড় সাহস! মুরোদ থাকলে সামনে আয়!' কিন্তু সেই ব্যক্তি বাংলায় টাইপ না জানার কারনে ইংলিশ হরফে লিখলেন,
'tor ato bara sahos. murad takla samna ay!(তোর আত বাড়া সাহোস,মুরাদ টাকলা সামনা আয়)এই লাইনের murad takla (মুরোদ থাকলে) শব্দদ্বয়কেই পরবর্তীতে টাকলা ভাষাভাষীদের আইডেন্টিটি হিসেবে গ্রহন করা হয়। মুরাদ টাকলা (Murad Takla)'র আক্ষরিক বাংলা অর্থ "মুরোদ থাকলে"। এর সাথে মুরাদ নামের কোনো ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা নেই।
উপরে আপনার বান্ধবীটি তার ভাগিনাকে কোলে নিয়ে ছবি পোস্ট করেছেন, তাই তিনি আপনাকে লিখেছেন-
amar vagina dekhchen?(আমার ভাগিনা দেখেছেন?) আর আপনি কি না ভাগিনাকে ভেজাইনা পড়ে বলে বসলেন- আস্তাগফিরুল্লাহ! অনুরুপ আমাদের Gamal Khan লিখেছিল- amar a duti cock pathar to noy...
(আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়--।) আমরা পড়লাম- 'আমার এ দুটি কক পাঠার তো নয়...'
তিনি আরেকদিন স্ট্যাটাস দিয়েছেন- koe den kub bigi cilam. onak kicu taka dura cilam. sobay onak moga korca. ami banchot holam. (কঈ দেন কুব বিগি সিলাম। অনাক কিসু টাকা দুরা সিলাম। সবায় অনাক মগা করসা। আমি বাঞ্চোত হলাম।) আসলে তিনি লিখতে ছেয়েছেন- কয়দিন খুব বিজি ছিলাম।অনেক কিছু থেকে দূরে ছিলাম।সবাই অনেক মজা করছে।আমি বঞ্চিত হলাম।
ফেব্রুয়ারী মাস এলেই আমাদের এই জামাল খান অনেকের একই টাইপের কিছু স্ট্যাটাস দেখেন, সেখানে সবাই বলে এবার বই মেলায় বই বের করলাম। এই দেখে দেখে জামাল খানের খুব শখ তিনিও বইমেলায় বই বের করবেন। একদিন তিনি সত্যি সত্যি বইমেলায় বই বের করেন। হাতে বই নিয়ে টাকলা ভাষায় একটা স্ট্যাটাস দেন,যার অর্থ-এবার বই মেলায় আমিও বই বের করলাম।
বইটি উলটো ধরা ছিল তাই নাম পড়তে না পেরে একজন কমেন্ট করে- বইয়ের নাম কি?
তিনি উত্তর দেন- নাম খেয়াল করিনি, ভাগিনার টেবিল থেকে ব্যাগে নিয়ে বইমেলায় গিয়ে বের করেছি !
পুনশ্চঃ বইমেলায় যান,সম্ভব হলে বাচ্ছাদের সাথে নিন। তাদের পছন্দের বই কিনে দিন।প্রকাশিত ছয়হাজার বই থেকে অন্তত ছয়টি বই হলেও কিনুন। মেলা থেকে ফিরে আসার সময় কারো পকেটের চিপায় চাপায় যদি কিছু টাকা অবশিষ্ট থাকে, তা দিয়ে ছবির বইটিও কিনুন। কথা দিচ্ছি আপনার সব টাকা জলে যাবেনা, এরকম একটা বই দিয়ে আমি ছোট বেলায় এক খাবলা কটকটি পেয়েছিলাম!
বইটি পাওয়া যাচ্ছে ৫৮৭ নং এক রঙ্গা এক ঘুড়ি স্টলে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:০৯