এক কলা বিক্রেতার বোকা কিসিমের দুই পুত্র ছিল। একদিন কলা বিক্রেতা দুই ছেলেকে পঞ্চাশটা করে কলা দিয়ে গ্রামে বিক্রি করতে পাঠালেন।ভাল করে বুঝিয়ে বললেন, একটি কলা যেন একটাকা করে বিক্রি করা হয়।একটা টাকা হাতে না আসা পর্যন্ত কাউকে যেন একটি কলা না দেয়া হয়।
দু;পুত্র দু;পথে গ্রামের পথ ধরল। বিকেলের দিকে দুই ভাইএর এক বট তলায় সাক্ষাত হয়।দেখা গেল বড়ভাই একটাকা বিক্রি করেছে ছোট ভাই কোন কলা বিক্রি করতে পারেনি। তারা ছিল ক্ষুদার্ত।পিতার নিষেধ থাকায় তারা নিজেদের কলা খেয়ে উদরপুর্তি করার সুযোগ ছিলনা।
হঠাত বড় ভাইয়ের মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে যায়, “ আরে আমি ক্ষুদায় মরছি কেন?আমার কাছে তো এক টাকা আছে আমি ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে একটা কলা কিনে খাচ্ছিনা কেন?”
যেই ভাবা সেই কাজ!বড় ভাই ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে এক টাকায় একটা কলা কিনে খেল। এদিকে ছোট ভাইও ক্ষিদায় অস্থির! তার হাতে এখন নগদ একটাকা। ওই টাকা দিয়ে সে বড় ভাইয়ের কাছ থেকে একটা কলা কিনে খেলো।
এভাবে সব কলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই একটাকার লেনদেন হতেই থাকল। দুই ভাইয়ের একশ কলা বিক্রি হয়ে গেছে, অথচ বাড়ি ফিরেছে তারা মাত্র একটাকা নিয়ে।
আমাদের দেশে প্রচলিত মুদ্রাগুলির মধ্যে একটাকা হচ্ছে সর্বনিন্ম মুদ্রা।এক টাকার মুদ্রাটি অনেকের কাছে আপাতদৃষ্টিতে মূল্যহীন মনে হতে পারে। কিন্তু অর্থনৈতিক বিনিময় মুল্যমান বিচারে এই একটাকা কিরূপ বিধ্বংসী ভুমিকা রাখতে পারে উপরের গল্পটি তার প্রমান।
যে কথা বলার জন্য এই কাহিনী ফেঁদেছি এবার তা বলি-করোনার তান্ডবে পৃথিবী নামক গ্রহটি এখন লন্ডভন্ড।অকালে ঝরে যাচ্ছে হাজার হাজার তাজা প্রান।মুখ থুবড়ে পড়ছে বিশ্বের অর্থনিতি।করোনা তান্ডব একসময় থেমে গেলেও অর্থনৈতিক ক্ষতি মানুষকে অনেক ভোগাবে। জাতিসংঘ বলছে করোনা পরবর্তি বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারনে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে অন্তত তিন কোটি লোক মারা যেতে পারে।কাজীর গরু হিসাবে কাগজে কলমে যতই আমরা উন্নয়নের মহা সড়কে থাকিনা কেন, হতভাগ্য তিনকোটির বিরাট একটা অংশ যে আমাদের মত অনুন্নত দেশের নাগরিক তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
আসন্ন অর্থনৈতিক দুর্যোগ প্রতিহত করার একটি সহজ উপায় হচ্ছে মানি সার্কুলেট করা। আপনার যদি সামর্থ থাকে আপনি খরচ করুন।আপনার খরচ করা মাত্র পাচটি টাকায় কত শত লোক উপকৃত হবে আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।
উদাহরণ স্বরূপ- আপনি ৫টাকা দিয়ে একটা সিঙ্গারা খেলেন, সিঙ্গারা বিক্রেতা ৫ টাকায় লাভ করল ১টাকা, সিঙ্গারা বিক্রেতা এই ৫ টাকা দিয়ে এক খিলি পান খেল, পান বিক্রেতা লাভ করল ১টাকা। পান বিক্রেতা ৫টাকার মচির কিনল, মরিচ বিক্রেতা লাভ করল ১টাকা। এভাবে একদিনে টাকাটা একশবার হাত বদল হলে এই ৫টাকার মাধ্যমে অনেক লোকের একশ টাকা আয় হয়ে গেল। বিষয়টা অনেকটা একটাকার কলা তান্ডবের মত।
পরিশেষে- চলমান পরিস্থিতিতে পারলে সাধ্যমত দান সদগা করুন, না পারলে সাধ্যমত খরচ করুন।দেশের অর্থনিতির চাকা সচল রাখুন।
ঘরে থাকুন নিরাপদে থাকুন।
(আমি সামুতে নিয়মিতই আছি, মোবাইলে লিখতে পারিনা তাই পোস্ট কমেন্ট কম করা হয়।সামুর সাথে আছি এই বুঝাতে সাথে নিজের নিরাপদ অস্তিত্ব জানান দিতে এই পোস্ট।সকল ব্লগার নিরাপদে থাকুক এই কামনা রইল।)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:৪১