শুভযাত্রা বাসে উঠেই দেখি "লাল দো পাট্টা......." গানের ভিডিও চলছে। বাসের ভেতর কত দাঁড়ি-টুপিওয়ালা মানুষ দেখলাম, কেউ কিচ্ছু বলছেনা। এমন গানের দৃশ্য আমার মোটেই পছন্দ না। বিশেষ করে নাচ আমি একদমই পছন্দ করি না। কখনো গান শুনলেও অডিও গান শুনি। আর মিউজিকসহ গান যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলি। গানটা আগেও শুনেছি কিন্তু এই প্রথম গানের ভিডিও দেখে চোখ সরিয়ে নিতে বাধ্য হলাম। বাসে উঠার পরেই গানটা বন্ধ করতে বললাম কন্ট্রাকটারকে। যেন কানেই তুললো না আমার কথা। অবাক করার মতো ব্যাপার হচ্ছে যেখানে মনিটর লাগানো তার উপরেই বড় অক্ষরে লেখা "বিসমিল্লাহে মাজরেহা ওয়া মুরসাহা ইন্নি রাব্বিলা গাফুরুর রাহিম"। কিছুক্ষণ পরেই আমার কাছে ভাড়া চাইতে আসলাে। আমি বললাম, গানটা আগে বন্ধ করেন তারপর ভাড়া দেব। বাধ্য হয়েই গানটা বন্ধ করলো। প্রায়ই বাসে উঠে দেখি নাটক সিনেমা চলে বাসের মধ্যে। বিশেষ করে লোকাল বাসগুলোতে বেশি চলে। লোকাল বাস রাস্তায় বিভিন্ন স্টপেজে লেট করে যাত্রী উঠায়। যাত্রীরা চিল্লা চিল্লি করে বলে নাটক ছেড়ে রাখে। শিশুদের যেমন কান্না থামাতে হাতে চকলেট বা ললিপপ ধরিয়ে দেয়া হয় তেমন কারবার আর কি।
সেদিন নবীনগর স্মৃতিসৌধের সামনে থেকে বাসে উঠলাম। বাসের ভেতর সিট একটাও খালি নেই। দাঁড়িয়ে আছি, তারপরেও গাঁ ঘেঁষাঘেষি করে। সেদিনও বাসের সামনে ঝুলানো মনিটরে হিন্দি কি ছবি যেন চলছিল। জায়গা না পেয়ে একেবারে মনিটরের সামনে দাঁড়াতে বাধ্য হলাম। পেছন থেকে একলোক চেচিয়ে বলছে ধূর, হুজুরদের জ্বালায় বাসেও শান্তি নেই। কথাটা শুনেই ড্রাইবারকে মনিটর অফ করতে বললাম। ড্রাইভার মনিটর অফ করে দিলো।
বাসে কখনো ইসলামিক গান বা ওয়াজ তেমন শুনি না। ব্যতিক্রম দেখেছিলাম একদিন চন্দ্রা মোড় থেকে টাঙ্গাইলের উদ্দ্যেশ্যে এক বাসে উঠে। পুরোটা রাস্তা ওয়াজ বাজছিলো। কেউ টু শব্দটিও করেনি। আমিও শুনছিলাম মনযোগ দিয়ে। এক পর্যায়ে একটা কথা খুব মনে ধরলো, "এমন কাজ আমরা কেন করবো যে কাজের বিনিময়ে শুধু আনন্দ আর পাপ জোটে? সেই কাজই তো করা উচিত যার দ্বারা দুনিয়াতেও উপকার পাওয়া যায়, আবার আখিরাতেও নাজাতের উছিলা হয়।" ঠিকই তো, আমরা কতশত কাজ করি দৈনিক, যার দ্বারা নিছক আনন্দ আর পরকাল খোয়ানো ছাড়া কোন লাভই হয় না। আমরা শত শত বই পড়ে শেষ করছি, হাজারো কবিতা উপন্যাসের নাম কেউ কেউ এক নি:শ্বাসে বলতে পারবেন! কিন্তু পুরো কোরআন অর্থসহ পড়েছেন এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে।
শুক্রবার-শনিবার ঘুরে এলাম গ্রামের বাড়ি থেকে। বাড়িতে যাবার সময় কিছু না কিছু গিফ্ট নিয়ে যাই আয়েশার জন্য। মা-বাবার জন্য ফল-ফ্রুটস তো থাকেই। এবার একটা গল্পের বই কিনলাম আয়েশার জন্য। বইয়ের নাম "রৌদ্রময়ী"। ছোট গল্পের বই। আজকে সকালে জিজ্ঞেস করলাম, কেমন লাগলো বইটা? বললো কিছু গল্প ভালো লেগেছে।
ও হ্যাঁ, বলাই হয়নি একটা কথা! আমার একটা কবিতা প্রকাশিত হয়েছে একটা মাসিক পত্রিকায়। সেই পত্রিকাটাও কিনেছিলাম আয়েশার জন্য। আয়েশা তো অনেক খুশি।
কবিতাটা নিচে দিলাম:
বছর ঘুরে আবার এলো
শুভ নতুন দিন
ফুল পাখিরা বাজায় যেন
সুখের রিন ঝিন।
নতুন দিনের নতুন সুরে
নতুন করে বাঁচা
শোষণ যত ভাঙবো শিকল
বন্ধি সকল খাঁচা।
সুখের বাঁশি বাজুক এবার
শহর থেকে গ্রামে
শান্তি সুখের নামুক ধারা
আমাদের এই ধামে।
আয়েশা আবার প্রেমের গল্প পড়তে বেশি ভালোবাসে। আগে অবশ্য বই তেমন পড়তো না। বিয়ের পর বলে কয়েও এক-দুই পৃষ্ঠার বেশি বই পড়াতে পারিনি। সেদিন আমাকে বলছে ও নাকি দুইটা উপন্যাস পড়ে শেষ করেছে! আমি তো অবাক! যে নাকি বই পড়তে পছন্দই করতো না, সে দুই দুইটা আস্ত উপন্যাস পড়েছে? "কি কি উপন্যাস পড়েছো?" জিজ্ঞেস করতেই "প্রেমাতাল" আর "এই মনিহার" উপন্যাস পড়েছে বলে জানালো আমাকে। খুশি হলাম মনে মনে। বললাম তোমার জন্য এবাবের বই মেলা থেকে গল্পের বই কিনে দেব। বলে না না, গল্পের বই না, রোমান্টিক প্রেমের উপন্যাস আনবা। আমি বললাম আচ্ছা। ভাবছি কি কি বই কেনা যায়! ব্লগ ঘেটে সামুর জনপ্রিয় লেখকদের বই অবশ্য লিস্ট করে ফেলেছি ইতোমধ্যেই। কেউ চাইলে ফ্রিতে পরামর্শ দিতে পারেন এ ব্যাপারে।
ছবি: ইন্টারনেট....
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৩৯