somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আঁধার রাতের গল্প: পর্ব-০২

০২ রা এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৮:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাত তখন প্রায় সাড়ে দশটা বাজে। কেরোসিনের হারিকেনটা তখনও নিভু নিভু করে জ্বলছিলো। বড় ঘরের দক্ষিনের জানালাটা খোলাই থাকে প্রতিদিন। আবহাওয়া যে গরম তাতে খোলা না রেখেও উপায় নেই। জানালা দিয়ে হু হু করে বাতাস আসছে। সে বাতাসে লাইলির খোঁপা ছাড়া চুলগুলো যেন উড়ছিলো। যে খাটে ফরহাদের ছেলে দুটো ঘুমুচ্ছে সেই খাটে লাইলি জানালার কাছে বসে কি যেন ভাবছিলো। কাঠের আলমারি দিয়ে আলাদা করা আরেকটা খাটে ফরহাদ শুয়ে আছে। মাথা উঁচু করে মাঝে মাঝেই লাইলির দিকে নজর রাখছিলো ফরহাদ।

- এখনো ঘুমাওনি কেন লাইলি?
- ঘুম যে ধরতাছে না। ঘুমামু কেমনে?
- ঘুম না ধরুক, আসো আমি তোমাকে ধরছি......।
- কি যে কন না আপনে....!

লাইলির চোখ দু'টো অচেনা এক খুশিতে জ্বলজ্বল করছে। হারিকেনের নিভু নিভু আলোতে যেন স্পষ্ট দেখতে পেল ফরহাদ।
- ওরা কি ঘুমাইছে?
- হ, মেলাকখন আগেই ঘুমাইছে.....
- এই খাটে আসো গল্প করি।

উঠতে গিয়েও প্রথমবার কি মনে করে যেন আসলো না। থেমে গেলো অব্যক্ত কোন শঙ্কায়। একটা বাদুর ঘরের পাশে বিচি কলার বড় একটা গাছে ডানা ঝাপটে উঠলো। সেই শব্দে আবার বাস্তবে ফিরে এলো যেন। সম্বিৎ ফিরে পেয়ে দেখে ফরহাদ লাইলির হাত ধরে টানছে।

- কি হলো, কি ভাবছো? আসতে বলতেছি না?

বাড়তি কোন কথা না বাড়িয়ে লাইলি বসা থেকে উঠে এলো। ফরহাদের তার পাশে নিয়ে বসালো লাইলিকে। কেমন যেন ভয় ভয় করছে। ফরহাদ তখনও তার পাশেই বসা। ফরহাদের ডান হাতটা লাইলির বাম উরুতে রাখলো আলতো করে। লাইলি চমকে উঠলো যেন। এতো গরমের মাঝেও শরীরে কাটা দিচ্ছে। শীতকালে বেশি শীত লাগলে এমন লাগে, তবে এই গরমের মধ্যে শরীরের পশমগুলোর এমন আচরনের সাথে লাইলি পরিচিত নয়। কি মনে করে যেন ফরহাদই উঠে গেলো। টেবিলের উপর রাখা বাতিটা একেবারে নিভিয়ে দিলো। সাথে থাকা গ্যাস লাইটের আলোয় এপাশে আসলো ফরহাদ। আবারো একই জায়গায় বসলো এসে। এবারে লাইলির গাঁ ঘেসে। লাইলির নিশ্বাসের শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে ফরহাদ। কিন্তু কোন কথা বলছে না। বিছানায় শুতে বলার সাথে সাথেই শুয়ে পড়লো। লাইলি যেন এর অপেক্ষায় করছিলো। আমাবস্যার এমন রাতে সামাজিকতার কথা ভুলে গেলো দু'জনেই। লাভ ক্ষতির সমীকরণ করার চিন্তাও করলো না মেয়েটে। সমাজ কি মেনে নিবে তাদের সম্পর্ক?

সকালে উঠার অভ্যাস আগে থেকেই লাইলির। ফরহাদ ঘুম থেকে উঠার আগেই উঠান ঝাড়ু দেয়া শেষ রোজকার মতো। রান্নাও বসানোর আয়োজন করছে চুলায়। যেন পাঁকা গিন্নি! আজকে আরো নতুন উদ্যোমে বাড়ির কাজগুলো করছে। ফুলের উপর ভ্রুমর বসলে ফুলগুলো যেমন ফল হবার প্রস্তুতি নেয় লাইলির মনেও যেন তেমন আনন্দ। ঘুম থেকে উঠে লাইলিকে পাশে না পেয়ে জানালা খুলে বাইরে তাকালো ফরহাদ। লাইলিকে আগের চেয়ে ফূর্তিতে কাজ করতে দেখে ফরহাদ যেন স্বস্তি পেলো। ভেবেছিলো লাইলি হয়তো আর এ বাড়িতে কাজ করতে চাইবে না। হয়তো ফরহাদের সামনে মুখ দেখাতেও লজ্জা পাবে। কিন্তু তার কোনটাই হলো না। ফরহাদের মেয়ে ইতোমধ্যেই উঠে পড়েছে ঘুম থেকে। লাইলি টিউবয়েল থেকে মাটির কলসিটা ভরে রান্না ঘরে রেখে তখনই বের হচ্ছিলো। পেছন থেকে ফরহাদের মেয়ের ডাকে ঘুরে তাকালো।

- লাইলি আপা, তোমার পায়জামায় দাগ কিসের?
হাত দিয়ে দেখালো ফরহাদের মেয়ে। কান্ড কারখানা সব দেখছিলো ফরহাদ জানালা দিয়ে উঁকি মেরে। মাথায় হাত দিয়ে দাঁতে জিব কামড়ে ধরলো, " সর্বনাশ, মেয়েটা কি সব বুঝতে পারলো তাহলে? কি বোকা যে লাইলি, রাতের জামাটা এখনো পড়ে আছে, বদলাইনি এখনো! কি রেখে কি যে উত্তর দিবে?"

- এইডা তো কচুর কস, কাইলক্যা যে নতি আনতে গেছিলাম তোমার মুন নাই?
- হ, হ...... বাড়িতে গিয়া বদলিয়া আহো, যাও।

লাইলিও মনে মনে ভাবছে, রক্তের দাগ কোত্থেকে এলো! কচুর লতি আনতে গিয়ে তো ক্ষেতে নামেনি। তাহলে......?
ঘরে থেকে সেলোয়ার কামিছ নিয়ে পাগাড়ের ঘাটে আসার সময় লাইলি তার বাবার সামনে পড়লো। এতো সকালে তো মেয়ে গোসল করে না কখনো, তাহলে আজকে কেন....... ভেবেই মেয়েকে ডাক দিলো ইলিমউদ্দিন।
- কি রে লাইলি, নাহিবার যাস নি?
- হ বাবা....., লাইলি উত্তর দেই।
-তা এতো বিহানেই কেন? তোর পিছে কি ভরাইছোস এতো?
ফরহাদের মেয়েকে যেমন উত্তর দেই, বাবাকেও সে একই কথা বলে এড়িয়ে যায়। গোসল করতে নেমে সেও চিন্তায় পড়ে যায় এই দাগ নিয়ে। এক বদনা পানি মাথায় ঢালতে ঢালতে মনে পড়ে গতকাল রাতের কথা। মনে পড়তেই লজ্জা লজ্জা লাগছিলো। কেমন যেন অন্যরকম অনুভূতি হয়েছিলো কিছু সময়ের জন্য। প্রথমে একটু ব্যাথাও পেয়েছিলো, কিন্তু সেই স্বর্গীয় অনুভূতির সামনে ব্যথাকে ব্যাথা মনে হয়নি। তাই বিষয়টা ভুলেই গিয়েছিলো।

তাড়াতাড়ি গোসল সেরে ও বাড়িতে যেতে হবে। সকালের রান্না সারতে হবে। মেয়েটা আবার স্কুলে যাবে। পুরাতন গামছায় চুলগুলো মুছতে মুছতে ফরহাদের উঠানে এসে দাঁড়ালো লাইলি। ফরহাদ তখন মুখে ব্রাশ নিয়ে পাগাড় পাড়ের দিকেই যাচ্ছিলো। লাইলিকে দেখে ফিরে আসলো। ফরহাদের মন থেকে শঙ্কা দূর হলো।" যাক মেয়েটা সব সামলে নিয়েছে ভালো ভাবেই। বুদ্ধি আছে বলতে হবে মেয়েটার।

চলবে....
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১০:১৬
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×