বিবাহিত ব্যাচেলরদের রান্নার অ আ ক খ জানার আগে জেনে নেয়া যাক এই শ্রেণিতে কারা কারা আছেন, কিংবা অদূর ভবিষ্যতে আপনিও আসতে পারেন এই ক্যাটাগরিতে:
১. বিয়ে করছেন অথচ আপনি ম্যাইনক্যার চিপায় ফাইসা গেছেন
২. অতিরঞ্জিত করে ভাব-ভালোবাসা প্রকাশ করতে গিয়া ধরা খাইছেন বউয়ের কাছে
৩. পাশের বাসার ভাবির রান্নার প্রশংসা কইরা এখন রিমান্ডে আছেন
৪. বউয়ের কোন রান্নায় খুত ধইরা আগামী সাতদিন আপনার উপর হেসেল সামলানোর গুরু দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে
৫. আপনি আর্জেনটিনা আর বউ ব্রাজিল সাপোর্টার হইলে ব্রাজিল যদি খেলায় হাইরা যায়
৬. বউয়ের কোন মতের সাথে আপনার দ্বিমত হইলে। এই যেমন ধরেন বউয়ের একটা রান্না আপনার কাছে মজা লাগলো না তবুও বউয়ের ডরে কইলেন উহা অমৃত! কিন্তু সেই রান্না সত্যি সত্যিই বউয়ের কাছেও উহা মজা লাগলো না। তখন আপনি সেই রান্নার প্রশংসা কইরা পরলেন বিপদে। বউ বলবে "বুঝছি, বিয়ের এতদিন পর আমার আর তোমার স্বাদ মিলছে না"!!!! ফলাফল বউয়ের মুখ ভার, রান্নার দায়িত্ব আপনার!
৭. আপনি যদি পালা করে রান্নার কাজ করেন বউয়ের লগে!
কথা দিচ্ছি এই রেসিপি ফলো কইরা রান্না করলে মজা অইবোই অইবো।
১. সব ধরনের শাক ভাজি (রেসিপিটি প্রমান সাইজের এক আঁটি শাকের জন্য): এই রেসিপির সাহায্যে জগতের সব শাক রান্না করতে পারবেন। এইটা হইলো একের ভিতর সব শাক রান্নার রেসিপি তাও আবার তিন স্টেপে!
= স্টেপ ওয়ান: শাক বাছাবাছির ঝামেলা মনে হইলে বাজার থেকে কিনে আনা আটি শুদ্ধা কুঁচি কুঁচি কইরা কাইটা ধুইয়া লন। বেশি ছোট কুঁচি করতে যাইয়া আবার হাতে লাগায়েন না । ধুয়াধুয়ির ঝামেলা মনে হইলেও করতেই অইবো। কারণ খাইবেন তো আপনিও!
= স্টেপ টু: করাইতে শাক তুইলা দিয়া এক চিমটি লবন এবং ৫ টা কাচামরিচ আস্ত শাকে ছাইরা দেন। (লবন কম কইরাই দিয়েন, লাগলে পরেও দেওয়ন যাইবো)। মাঝে মাঝে নাইরা দেন। শাকের পরিমান কমে এলে এবং পানি শুকিয়ে এলে চুলা নিবিয়ে দেন।
= স্টেপ থ্রি: এবার একটা পেঁয়াজ এবং তিন চার কোয়া রসুন (সেইচ্চা) আর এক চামচ তেল একসাথে দুই মিনিট নাড়াচাড়া কইরা সিদ্ধ করে রাখা শাক ছাইরা দেন। এক মিনিট নেড়েচেড়ে বাটিতে পরিবেশন করুন। আর উপভোগ করুন দারুণ সব শাক ভাজি।
জগতের সব সবজি ভাজি (আধা কেজি সবজির জন্য): দুই স্টেপে জগতের সকল সবজি ভাজি শিখে নেন
= স্টেপ ওয়ান: সবজির চামড়া ছাড়িয়ে যে কোন সাইজ করে কেটে নেন এবং ধুইয়া নেন। চামড়া ছাড়ানোর ঝামেলা মনে হইলে চোছা শোদ্ধায় কাইটেন কারন গরু ছাগলের চামরার মতন সবজির চামরা বেচন যায় না।
= স্টেপ টু: একটা পেঁয়াজ, চারটা কাঁচামরিচ, কয়েকটা আস্ত জিরা, অল্প তেল, তিন ফাকি (হলুদ, মরিচ, ধনিয়া) এক টেবিল চামচ কইরা করাইতে দিয়া দুই মিনিট নেড়েচেড়ে আগে থেকে কেটে রাখা সবজি ঢেলে দিন। ৮ মিনিট পর আপনার রান্না রেডি। এবার মনের মাধুরী মিশিয়ে পরিবেশন করুন।
জগতের সব সবজির ঝোল রান্নার রিসিপি (আধা কেজি সবজির জন্য): মাছসহ/ মাছ ছাড়া
= স্টেপ ওয়ান: সবজি ভাজির অনুরূপ। রিপিট কইরা সময় নষ্ট করতে চাই না।
= স্টেপ টু: একটা পেঁয়াজ, চারটা কাঁচামরিচ, কয়েকটা আস্ত জিরা, অল্প তেল, তিন ফাকি (হলুদ, মরিচ, ধনিয়া) এক টেবিল চামচ কইরা করাইতে দিয়া দুই মিনিট নেড়েচেড়ে অল্প করে পানি দেন। তারপর ঢেকে দিয়ে দুই মিনিট রাখুন। (এইটাকে মাছ কসানো বলে)। কসানো মাছ আলাদা করে উঠিয়ে রাখুন নইলে ভেঙে যাবে যে। তারপর সবজিগুলান ঢেলে দিয়ে মাছের অনুরূপ কসান। দুই মিনিট পর পরিমান মতো জল দিয়ে কসানো মাছগুলান ছেড়ে দিন। (এই পরিমান জল দিবেন যাতে মনে হয় মাছগুলো সাতার কাটছে)।
ঢাকনা দিয়া ঢাইকা দশ মিনিট ফুল স্পিডে চুলা ছাইরা রাখেন। দশ মিনিট পর ঢাকনা খুইলা মজাদার সবজি উপভোগ করুন।
(বি:দ্র: মাছ ছাড়া রাধতে চাইলে সময় আরো কম লাগবো। তখন আর মাছ কসানোর দরকার নাই।)
জগতের সব ভর্তা: যে কোন ধরনের প্রমান সাইজের শাক কিংবা তিন চারটা সবজির জন্য-
ভাত রান্না করার সময় রাইস কুকারের উপরে শাক/সবজি সিদ্ধ করে নিন। সাথে ৪/৫ টা কাচা মরিচ সিদ্ধ দিয়েন। ভাত হওয়ার পর শাক/সবজিগুলো নামিয়ে একটা পেঁয়াজ, তিন চিমটি লবন এবং সিদ্ধ করে রাখা কাঁচামরিচ আর সবজি চটকে নিন ভালো ভাবে। চটকাতে কষ্ট মনে হলে বাসার ব্লেন্ডারে সব একসাথে দিয়া ব্লেন্ড করে নিন। কাম শেষ। এবার গরম গরম পরিবেশন করুন।
ভাত রান্নার রেসিপি: রাইস কুকারে যতপট চাল নিবেন তার দ্বিগুণ পরিমান পানি দিয়ে বসিয়ে দিন। আপনার আর কিছু করা লাগবো না। হাড়ির খবর রাইস কুকারই রাখবো।
ডিম ভাজির রেসিপি:
একটা পেঁয়াজ কুঁচি, দুইটা মরিচ কুঁচি, এক চিমটি লবণ আর একটা যেকোন প্রাণীর ডিম (এমনটি ঘোড়ার ডিমও) একসাথে মিশান। করাইতে এক টেবিল চামচ তেল দিয়া গরম হওয়ার পর মিশ্রনটি ছেড়ে দিন। (ভয় পাবেন না, বুকে সাহস রাখুন। এক ফোটা তেল ছিটকে গায়ে আসলে মইরা যাবেন না।) উল্টে পাল্টে দুই মিনিট ভেজে নিলেই আপনার ডিম ভাজি রেডি।
সব ধরণের মাংস রান্না (এক কেজির জন্য):
= স্টেপ ওয়ান: ৩ টা কাঁচা মরিচ আর দুইটা পেয়াজ ৩ টেবিল চামচ তেল একসাথে দুই মিনিট ভেজে নিন। বাজারে ভিবিন্ন ধরনের মাংসের রেডিমেড মসলা পাওয়া যায় উহা ঢেলে নিন করাইতে। অল্প পানি দিয়ে দুই মিনিট নাড়ুন। তারপর এক কেজি মাংসের পুরোটাই ঢেলে দিয়ে ৫ মিনিট কসিয়ে নিন। কসাতে না চাইলে সরাসরি পানি দিয়ে ৩০ মিনিট সিদ্ধ করে নিন ব্যাস রান্না রেডি।
দেখছেন রান্না কত্ত সহজ ব্যাপার। আপনেরা হুদাই রান্নারে ডরান। এখন আর বউয়ের ভরসায় নয়, এবার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পালা। দেখিয়ে দাও পুরুষ জাতি তোমরাও পারো।
খাবার আগে অবশ্যই রান্না করা সব জিনিসের ছবি তুইলা ফেসবুকে দিবেন। মাইনসের লাইক না পাইলে রান্নার আর মজা রইলো কই বলেন। কয়েকদিন এইভাবে রান্না করলে আপনিও একজন আদর্শ শেফ হয়ে উঠবেন। মজা না হইলেও সমস্যা নাই। কয়েকদিন পর একটা ব্লগ চ্যানেল খুইলা বিবাহিত ব্যাচেলরদের রান্না করা শিখাবেন। ইউটিউবে তো আর কেউ রান্না চাইখা দেখতে আসবো না! মজা না হলেও ইয়াম্মি, মজাদার, ওয়াও..... এমন সব অঙ্গভঙ্গি করুন। তখন দেখবেন আপনি হিট। ইনকামের অভাব হইবো না।
আর কোন রেসিপি লাগলে বইলেন, ফ্রিতে দিয়া দিমুনি। ফাস্ট ফুড থেকে শুরু কইরা মিস্টান্ন...... সব.....।।।
সব ছবি কালেক্টেড
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৫:০৪