somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন বিজয়ীর কথা

১১ ই জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ৮:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুযোগমতো লক্ষ্যবস্তুর সন্ধানে ছুটে বেড়াই আমরা। শত্রুর অবস্থানের ওপর হামলা করা(রেইড) অপেক্ষাকৃত কঠিন কাজ। এর জন্য প্রয়োজন যথাযথ প্রশিক্ষণ, সাহস ও অভিজ্ঞতার, সর্বোপরি এগুলোর সূক্ষ সংমিশ্রনের। সে অবস্থায় আমরা তখনো পৌছিনি। আমাদের যুদ্ধ প্রধানত শত্রুর চলন্তযানবাহনের ওপর আকস্মিক আক্রমন বা এম্বুশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তেমনি এক এম্বুশের জন্য ইলিয়টগঞ্জ বাজারের উত্তরে পাঁচপুকুরিয়া গ্রামে হাইডআউট স্থাপন করে শত্রুর গতিবিধি ও আচরণ পর্যবেক্ষণ করার জন্য কয়েকদিন অবস্থান করতে হচ্ছে। বাহার নামে একটি ছেলে এসে একদিন অনুরোধ করল কয়েকদিন ছুটির জন্য। বলল, আমরা যে গ্রামে আছি তার বাড়ি খুব কাছেই কোনো গ্রামে, যুদ্ধ শুরুর কিছুদিন আগে ও বিয়ে করেছিল। তারপর আর স্ত্রীর সঙ্গে তার দেখা হয়নি। একরকম অপরাধীর মতোই বলল, তার বাড়ীর এত কাছাকাছি না এলে সে এরকম অনুরোধ করত না। ছেলেটির বয়স কত হবে-18, 19,20। আমার খুব মজা লাগছিল। পরিচিত হবার পর একটু বেশি ভালো লাগে, আমাদের বাহার তেমনি এক ছেলে। এই ক'দিনের রেকির কাজে বাহারের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি কোনো প্রভাব ফেলবে না। বাহার ছুটির অনুমতি পেল।
দুদিন পরই দেখি বাহার আমাদের ক্যাম্পে। অবাক হলাম ওকে দেখে। ভাবলাম ও কোনো কারণে হয়তো বাড়ি যায়নি। জিজ্ঞাস করতেই বাহার আমার সঙ্গে একান্তে কথা বলার অনুমতি চাইল। আমার বিস্ময় আরো বাড়ল। ঘরে ঢুকে যা বলল তা শুনে আমি একাধারে বিস্মিত, বিব্রত ও পুলকিত। বাহারের অনুরোধ, তার বাড়িতে আমাদের এক বেলা খেতে হবে। বাহার যাদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে তার বৌ তাদের দেখতে চায়। বাহার যে আর সবার সাথে সত্যি সত্যিই বর্বর পাকিস্তানীদের হত্যা করছে ওর বৌর তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। সে আমাদের জন্য রান্না করবে। এই দাওয়াতের শেষ অংশে একটা বিশেষ অনুরোধ ছিল। বাহার প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিনয়ের সঙ্গে বলল, সে গরিব মানুষ। তার স্ত্রী আমাদের সবাইকে (44জন) খাওয়াতে চায় কিন্তু তার আর্থিক সঙ্গতি নেই। আমরা 4/5জন যেন যাই। আমি বিব্রত। তারপরও রাজি হলাম।
দুই কোঠার ছোট্ট একটি ঘর। মাঝখানে তরজার বেড়া। আয়োজন সীমিত হলেও খাবার ছিল বেশ উপাদেয়। আমরা ক'জন পেট ভরেই খেলাম। বাহার ও তার স্ত্রীর আতিথেয়তা সত্যিই মুগ্ধ হওয়ার মতো। এ যাবত বাহারের স্ত্রী আমাদের সামনে একবারও আসেনি। খাবার শেষ হওয়ার পর বেড়ার ওপাশ থেকে বাহারের স্ত্রী মাথায় ঘোমটা টেনে দেহের অর্ধাংশ বের করে দাড়াল।'আসসালামু আলাইকুম'
15/16 বছরের এক কিশোরী মেয়ে। আমরা সালামের জবাব দিয়ে বললাম'আপনার রান্না খুবই মজার হয়েছে। আমরা পেট ভরে খেয়েছি।'
এ জবাবে একটা ধন্যবাদ আসার কথা। কিন্তু গ্রামে বোধহয় এ ধরণের ধন্যবাদের চল নেই। খাবারের আয়োজন ঠিকভাবে করা হয়নি, আদর-আপ্যায়নের অভাব ছিল- স্বাভাবিক লৌকিকতার এ ধরণের কোনো কথাই সে আর বলল না। কিছূক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। কিছু বলবে ভেবে আমরাও চুপ করে রইলাম।
'স্যার আমাদের উনি কি ভালো যুদ্ধ করে না?'
'কেন, বাহার তো খুবই ভালো যুদ্ধ করে। ও খুবই সাহসী' আমি অপ্রস্তত হয়ে বললাম।
'তাহলে যে স্যার এই কয়দিন উনি বাড়িতে। আপনারা ওনারে যুদ্ধে নেন না?'
একি অনুযোগ! বিস্মিত হবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেললাম। এ প্রশ্নের যুক্তিগ্রাহী উত্তর আছে কিন্তু সে উত্তর এ মেয়ের বুঝবার কথা নয়। মুখ দিয়ে আমাদের কারোরই কথা সরছে না। ঠিক এ অবস্থায় পড়ব আমাদের কারোরই বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না। অপলক নয়নে সদ্য পরিণীতা কিশোরী মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমরা কেউই বয়সে বিশের কোঠা ছাড়াইনি। মেয়েটি উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছে, না আরও কিছু বলবে অনুমান করতে পারছি না। তবে সে যেভাবে দাঁড়িয়েছিল, ঘোমটা মাথায় ঠিক সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইল। যুদ্ধ যে নির্ঘাত মৃতু্যর এক সমূহ সম্ভাবনা এ কিশোরীরও তা না জানার কথা নয়। কোন প্রনোদনা যুবক স্বামীকে সেই মৃতু্যর সামনে দাঁড় করাতে উৎসুক? এ কেমন ভালোবাসা?
মনে মনে বললাম, 'শোন মেয়ে। যতদিন তোমরা আছ, যতদিন তোমাদের মতো অন্তপুরের যোদ্ধারা আমাদের মতো সৈনিক তৈরি করবে ততদিন এ জাতির ভাবনার কিছু নেই, আমাদের এগিয়ে যাওয়াও থামবে না। কিছু রক্ত অবশ্যই ঝরবে, কিজানি তোমার পিন্ধনেও হয়তো বা সাদা শাড়ি উঠবে তবে তোমার এ ছোট্ট ঘরে একটা বড় লাল-সবুজ পতাকা আমরা উড়াব ইনশাল্লাহ।'
সূত্র :বিজয়ী হয়ে ফিরব, নইলে ফিরবই না (মেজর কামরুল হাসান ভুঁইয়া), পরিচ্ছদ (ভিন্ন রকম ভালোবাসা)

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ৮:৫৬
১২টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×