somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোহিঙ্গা মুসলমানদের ইতিহাস এবং মিয়ানমারের আরাকানে মুসলিম নির্যাতনের অজানা কাহিনী (৪)

৩০ শে জুন, ২০১২ রাত ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মানবিক বিপর্যয়ের মুখে রোহিঙ্গা মুসলিমরা :
নিজ দেশে গণহত্যার শিকার, বাংলাদেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত আছে। রাখাইন রাজ্যের মংডু ও আকিয়াব এলাকায় চলছে গণহত্যা ও বেপরোয়া লুটতরাজ। রোহিঙ্গাদের হাজার হাজার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। এ অবস্থায় মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন পৃথিবীর সবচেয়ে নিপীড়িত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রোহিঙ্গারা।

চলমান সহিংসতায় কমপক্ষে হাজার হাজার মুসলমানকে শহীদ ও উদ্বাস্তু করা হয়েছে। এসব উদ্বাস্তু খাদ্য ও নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য মরিয়া হয়ে দিগিবিদিক ছুটে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু কোথাও নিরাপদ আশ্রয় মিলছে না রোহিঙ্গা মুসলমানদের।

গত বুধবার রাতেও বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন রাখাইন রাজ্যের দুটো গ্রামে ঘরে ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে রাখাইন বৌদ্ধরা। সাম্প্রদায়িক এই দাঙ্গায় অন্তত হাজার হাজার ঘরবাড়িও জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইনদের সহায়তায় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী নাসাকা, পুলিশ ও ‘লুন্টিন’ বাহিনী এই হত্যাকান্ড ও লুটতরাজের ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। এদিকে নিজ দেশেই চরম নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশে প্রবেশের পথও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পরিবার-পরিজন নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হচ্ছেন তারা। বুকফাটা কান্না আর মৃত্যুকে মেনে নিয়ে আবার মিয়ানমারে ফিরে যেতে হচ্ছে হতভাগ্য রোহিঙ্গাদের। অনেকে আবার জীবন বাঁচাতে নৌকায় করে নদীতে থাকার চেষ্টা করছেন। অনেকের লাশ ভাসছে বঙ্গোপসাগরে। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নিগৃহীত সংখ্যালঘু হচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলিমরা।

এদিকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট, জাতিসংঘ এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানালেও মিয়ানমারে গণহত্যা বন্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা।

জ্বলছে গ্রামের পর গ্রাম : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এখনও চলছেই। রাখাইন রাজ্যের মংডু ও আকিয়াব এলাকায় চলছে গণহত্যা ও লুটতরাজ। জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। মিয়ানমারের স্থানীয় সূত্রগুলো বলেছে, রাখাইনের অধিবাসীদের সহায়তা দিয়ে নাসাকা, পুলিশ ও ‘লুণ্ঠিন’ বাহিনী এই হত্যাকান্ড ও লুটতরাজের ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। আরাকান রাজ্যের মুসলমানরা মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন।

শুধু মংডুতেই হাজার হাজার মুসলমানকে শহীদ করেছে রাখাইন বৌদ্ধরা। নিখোঁজ রয়েছেন হাজার হাজার মুসলমান। রাখাইন-মুসলমানদের দাঙ্গায় মুহূর্তেই সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন হাজার হাজার ব্যবসায়ী ও মধ্যবিত্ত রোহিঙ্গা পরিবার। মিয়ানমার সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য জরুরি অবস্থা ও সান্ধ্যআইন জারি রাখলেও তা কেবল মুসলমানদের উপর কার্যকর করা হচ্ছে। রাখাইন বৌদ্ধরা অলিখিতভাবে সান্ধ্যআইনের বাইরে রয়েছে।

মংডু এলাকার দক্ষিণ, নয়াপাড়া, বমুপাড়া, মাঙ্গালাপাড়া, সম্মন্যাপাড়া, চারমাইল, হাদির বিল ও ঝুড়ারপাড়া এবং আকিয়াবের নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, মং লেংপাড়া, বাহারছড়া, ছাক্কিপাড়া, জালিয়াপাড়া, রোহাইঙ্গা ও ওয়ালিদপাড়া সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। আবু বকর জানান, এসব এলাকায় কয়েকদিন আগেও যারা সচ্ছল জীবনযাপন করতেন মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এখন তারা সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়ে গেছেন।

মংডু ও আকিয়াবে কোনো মুসলমান যুবতি ঘরে থাকতে পারছে না। রাখাইন যুবকরা ‘লুণ্ঠিন বাহিনী’র প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মুসলমান যুবতীদের ঘর থেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কয়েকদিনে এরকম ৫ হাজারের অধিক মুসলমান তরুণী নিখোঁজ হয়ে গেছেন। তাদের আদৌ ফিরে পাওয়া যাবে না বলেই বিশ্বাস করছেন মিয়ানমারের ওইসব এলাকার বাসিন্দারা।

যেসব বাংলাদেশী ব্যবসায়ী দাঙ্গার কারণে মিয়ানমারে আটকা পড়েছিলেন তাদের মধ্যে মঙ্গলবারও ৫ জন ফিরে এসেছেন। এখনও ৮ জন মিয়ানমারেই অবস্থান করছেন। অন্যদিকে মঙ্গলবার ১২ জন মিয়ানমার নাগরিক টেকনাফ ট্রানজিট পয়েন্ট হয়ে তাদের দেশে ফিরে গেছেন। তবে এখানে ৫৯ জন মিয়ানমার নাগরিক বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।

কালাদান প্রেস জানিয়েছে, মংডুতে পুলিশের একজন উগ্রপন্থী পুলিশ কর্মকর্তার উস্কানিতে রাখাইন, দাঙ্গা পুলিশ ও পুলিশ মুসলমানদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। ‘থান’ নামের ওই পুলিশ কর্মকর্তা নিজেই আগুন দেয়ার কাজে জড়িত। এতে বলা হয়, ১৪৪ ধারা মংডুতে কেবল রোহিঙ্গাদের উপর প্রযোজ্য কিন্তু রাখাইনরা এটি মান্য করছে না এবং তারা সব জায়গায় চলাফেরা করছে। রাখাইনরা পুলিশের সাহায্যে রোহিঙ্গাদের ঘর থেকে খাদ্যশস্য ও জিনিসপত্র লুণ্ঠন করছে। রোহিঙ্গা মুসলমানরা এখন গুরুতর খাদ্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের ঢুকতে দিচ্ছে না বিজিবি : মিয়ানমারের রাখাইন ও সরকারি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ ও লুটতরাজ থেকে বাঁচতে শত শত রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তারা কোনো রোহিঙ্গাকেই বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে দিচ্ছে না। যারাই আসছে তাদেরকেই ‘পুশব্যাক’ করা হচ্ছে।

অপরদিকে নাফ নদীর মোহনা ঘোলারচর এলাকায় ৫০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গাভর্তি একটি ইঞ্জিন বোট চরে আটকা পড়েছিল। সাগরে প্রচন্ড ঝড় এবং উত্তাল থাকায় রোহিঙ্গাভর্তি ওই ট্রলারটি কোথাও যেতে পারছিল না।

অপরদিকে গত ১৩ জুন বুধবার টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিনে প্রবেশের চেষ্টাকালে বিজিবি ও কোস্টগার্ড রোহিঙ্গা বোঝাই ৩টি ট্রলার গভীর সাগরের দিকে চলে যেতে বাধ্য করে। সকালে সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ উপকূল দিয়ে ৩৯ জন রোহিঙ্গা নিয়ে একটি ট্রলার কূলে ভিড়তে চাইলে কোস্টগার্ডের টহলদল তাদের আটক করে। একই দিন সকালে শাহপরীর দ্বীপের অদূরে নাফ নদীর ঘোলারচর মোহনা দিয়ে ৪৪ জন রোহিঙ্গা নিয়ে একটি এবং ৩০ জন রোহিঙ্গা নিয়ে আরও একটি ট্রলার কূলে ভিড়তে চেষ্টা করে। বিজিবি ও কোস্টগার্ড ৩টি ট্রলার আটক করে। এ সময় ট্রলারে থাকা রোহিঙ্গাদের অনেকেই অভুক্ত এবং আহত ছিল। স্থানীয়দের সহয়তায় এসব রোহিঙ্গার কিছু শুকনো খাবার, খাবার স্যালাইন ও পানি দিয়ে ৩টি ট্রলারকেই গভীর সাগরের দিকে চলে যেতে বাধ্য করে বিজিবি ও কোস্টগার্ড। এ সময় সাগরে প্রচন্ড বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। ৩টি ট্রলারের অধিকাংশই নারী ও শিশু এবং তারা আরাকান প্রদেশের রাজধানী আকিয়াব শহরতলীর বিভিন্ন পাড়া থেকে আশ্রয় নেয়ার জন্য এসেছে বলে তারা জানিয়েছিল। (একটি জাতীয় দৈনিক)
(ইনশাআল্লাহ চলবে)

১ম পর্ব এখান থেকে পরতে পারেন
২য় পর্ব এখান থেকে পরতে পারেন
৩য় পর্ব এখান থেকে পরতে পারেন
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:২৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×