ছেলেদের জীবনটা বড়ই অদ্ভুত। অর্জন আর ব্যর্থতার হিসেব কষতে কষতে অর্ধেকটা কেটে যায়। বাকিটুকু কাটে অন্যেকে খুশি করতে করতে। আত্নাটা নিজের হলেও জীবনটা যাপন করতে হয় অন্যদের জন্যে, অন্যদের মত করে।
স্কুলের জানালার ফাঁকে তার হাজারো স্বপ্নের রং উড়ে বেড়ায়। কিন্তু গণিতের শিক্ষকের কাছে এমন অমনোযোগী ছাত্র আবর্জনাতুল্য। ইউক্লিডীয়ের উপপাদ্য না পরার জন্য সে ক্লাসে থাকার অধিকার হারাবে অথবা চকচকে বেত তার জন্য অপেক্ষা করছে।
সারাদিন ক্লাসের পর ছেলেটা অপেক্ষা করে আছরের আযানের জন্য, কখন সে ক্রিকেট মাঠের দিকে দৌড় দেবে। ১০ ওভার ফিল্ডিং করার পর ছেলেটা যখন ব্যাট করতে নামবে তখন বাসা থেকে খবর আসে তার গৃহশিক্ষক পড়াতে এসেছেন। ব্যাট রেখে চলে আসার সময় প্রচণ্ড কান্না পায় তার কিন্তু কাঁদতে পারে না। মানুষ কি বলবে এত বড় ছেলে হয়ে কাঁদে কেউ?
কিশোর ছেলেটার মনে যেন কি শূন্যতা কিছুতেই বুঝতে পারে না। বুঝল সেদিন যেদিন কলেজের করিডোরে সেই মেয়েটিকে প্রথমবার দেখল। সেই হাসিতে কি যে মায়া লুকিয়ে ছিল তার রহস্য কোনদিন ভেদ করতে পারল না। তারপর কিছুদিন একসাথে পথ চলা, অবুঝ মনের কত স্বপ্ন, কত প্রতিঙ্গা-প্রতিশ্রুতি।কিন্তু বয়স যে কোন প্রতিশ্রুতির মিনতি মানল না। যেই নদীতে দুজন ভেসে বেড়াত তারই ওপারে সংসার পাতল মেয়েটি। বন্ধুরা বলল আরে তুই ছেলে মানুষ হয়ে কি একটা মেয়ের জন্য কাঁদবি? কিন্তু চোখ যে তার অশ্রুবান রুখতে পারল না। কেউ জানল সে কথা, জানল শুধু মাথার বালিশ আর বন্ধ দরজা।
বিশ্ববিদ্যালয় যাবার পর সে আবিষ্কার করল পৃথিবী দুভাগে বিভক্ত। একদল উচ্চ সিজিপিএ প্রাপ্ত প্রথম কাতারের ছাত্র আরেকদল নিম্ন সিজিপিএধারী পেছনের বেঞ্চের ছাত্র। ধীরে ধীরে সে নিজেকে দ্বিতীয় দলটির মধ্যে খুঁজে পেল। প্রত্যাশা আর বাস্তবতার দূরত্ব দিনকে দিন আপসহীন দূরত্বে চলে যাচ্ছে।
চাকরীর প্রতিযোগিতায়ও তার অস্থান সবার পরে।বেকারত্ব আর পরাজয় ক্লান্ত হয়ে পরিবার আর বন্ধু মহলে লজ্জা ও হাসির খোরাক হয়ে যায়। লুজারের মত চলতে চলতে তীব্র হতাশা, ক্ষোভ, অভিমান তাকে গ্রাস আকুন্ঠকরে ফেলে।ছেলেটা এবারও চিৎকার কাঁদতে পারে না, মানুষ বলবে ছি ছি পুরুষ মানুষ হয়ে কাঁদছে!
সংসারের সমস্ত ভার সে নিজের কাঁধে তুলে নেয়। স্ত্রীর মুখে হাসি ফোটাতে আর সন্তানের দাবি পূরণ করতে যেয়ে কোথায় যেন তার দিনরাত্রিগুলো হারিয়ে যায়।অফিসের বৃদ্ধ কর্মচারীর অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে তার কষ্টের কথাগুলো শুনে সে। কেমন করে তার ছেলেকন্যারা তাকে বৃদ্ধ বয়সে এতীম করে দিয়েছে। মন খারাপ করে বাসায় ফিরে সে ফ্যালফ্যাল করে তার সন্তানের দিকে তাকিয়ে থাকে।
সংসারের জাঁতাকলে পিষ্ট হতে হতে কখন যে যৌবন বার্ধক্যে রুপ নেয় টেরই পাওয়া যায় না। একদিন হয়ত তারও শেষ আশ্রয় হয় বৃদ্ধাশ্রম।
ছেলেদের জীবন বড়ই অদ্ভুত। লোকে কি বলবে এই ভেবে নিজের ভাললাগার কাজটা করা হয়ে ওঠে না।অন্যের মুখে হাসি ফুটাতে ফুটাতে নিজের হাসির কথা ভুলে যায়। আঘাত-কষ্ট পেলেও কাঁদার অধিকারও তার নেই কারণ সে পুরুষ............
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৬