somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কালো কন্যার কাব্য

০৯ ই মার্চ, ২০২১ ভোর ৪:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তামাম দুনিয়া দূর কি বাত, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডেও এমন কোন হাস্যকর সামাজিক নিয়মের কথা শোনা যাবে না, যা পাওয়া যাবে ওই রঙ্গ ভরা বঙ্গ দেশে। ভালোবেসেই হোক, পরিবারের সম্মতিতেই হোক আর পালিয়ে গিয়েই হোক, ধরা যাক বিয়ে হয়ে গেল। নতুন দম্পতির সুখের সীমা নাই। বছর ঘুরতেই সন্তানসম্ভবা হল তরুণী বউ। সুখ শান্তি দ্বিগুণ হোল। সন্তান ভুমিষ্ট হোল। ছেলে হোক মেয়ে হোক, সব পিতা মাতাই শুরু থেকেই সন্তানের ভবিষ্যৎ ভেবে কিছু সঞ্চয় শুরু করে। ওর লেখাপড়া, অনাগত দিনের বিপদাপদের কথা ভেবে কত না পরিকল্পনা! ওই সন্তান যদি হয় মেয়ে, দুশ্চিন্তা বেড়ে হয় দশগুণ, ও যদি কালো হয় তাহলে তা একশগুণ। বিয়ে দিতে এক কাড়ি খরচা হবে যদি পাত্র একটা জোটেও, আর আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশীদের জীবনভর কটুকথা ফ্রি আসে কালো কন্যার জন্মের সাথে বোনাস হিসেবে।

আমরা যারা বাংলাদেশে বড় হয়েছি, গায়ের রং যাঁদের একটু চাপা, কী পরিমাণ নিদারুণ কষ্টের মাঝে তাঁদের প্রতিটি দিন যাপিত হয় ভুক্তভুগী ছাড়া সেটি কেউ ধারণাও করতে পারবে না। এই কষ্ট এই যাতনা মূলত শুরু হয় ঘর থেকেই। ক্ষেত্র বিশেষে মা বাবাও কথায় কথায় গায়ের রং নিয়ে মেয়েকে কথা শোনাতে ভোলে না। আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী তো আছেই। শিশুকাল থেকে এসব শুনে শুনে ওর ভেতরে আর কোন আত্মবিশ্বাস থাকে না, হীনমন্যতার দুঃসহ যাতনা ওকে গ্রাস করে।

আমার বড় ভাই বিয়ে করে ভাবিকে নিয়ে আসলো। গ্রামগঞ্জের অদ্ভুত নিয়ম হল বিয়ের পরদিন নতুন বউকে পুতুলের মত সাজিয়ে শোপিসের মত উঠানে রেখে দিতে হয়। লাইন ধরে পাড়ার সবাই আসে, দেখে, আর নানা মন্তব্য করে তাঁর রুপশোভা নিয়ে। ত্রিকালদর্শী এক বুড়ি আসলো পান চিবুতে চিবুতে। বড় ভাবির গায়ের রং ফর্সা, তাই অনেক এদিক সেদিক করেও সে কিছু বলতে পারছে না, কিন্তু কিছু মন্তব্য না করলে বুড়ির মানবজন্ম বৃথা হবে। তাই অবশেষে বুড়ী ভাবির মুখটা উপরে তুলে বলে, ওই মাগী, তর নাকটা বড় ক্যা রে! আম্মা এমন ধমক দিল, গজগজ করতে করতে বুড়ি উধাও হল।

একুশ শতকের পৃথিবী বদলে গেছে। কে মোটা কে কালো কে বেঁটে আর কার দাঁত একটু উঁচু, কার নাকের পাশটা ঠিক তীরের মত নয়, কার ঠোঁট দুটো কালচে বা বেশি মোটা অথবা চিকন, এইসব এক অতি মূল্যহীন বিষয়। মানুষ হিসেবে মানুষের মূল্যায়ন হয় তাঁর মেধা, জ্ঞান, সুচ্চরিত্র আর তাঁর মানবিক আচরণের মাধ্যমে।

ও মেয়ে তোমায় বলি, তোমার কি মনে হয় তুমি দেখতে সুন্দর নও? কালো বলে অনেক কথা শুনতে হয়েছে বিগত সময়ে? মোটা বলে হাসাহাসি করেছে সবাই? বিয়ে হবে না বলে নিরাশার চাদরে ঢেকে দিয়েছে জীবন তোমার? বিষবাষ্পে তোমার নিঃশ্বাস রুদ্ধ হয়ে আত্মহত্যার কথা ভেবেছ বহুবার? তবে শুনে নাও, এই জীবন একমাত্র তোমারই, তোমার ভাগ্যগঠনের দায় তোমার হাতেই। বিয়ে হবে না? বিয়েই কি জীবনের সব? নাই বা হল কারো সাথে জীবনের জোড়, জীবনকে উপভোগ করার আরো কত উপায় আছে না? সেসব খুঁজে নাও। নির্লজ্জ বেহায়া সমাজের মুখে চুনকালি মেখে দাও, জীবনে যা যা করতে মন চাইবে করে ফেল। মন চাইছে কোথাও ঘুরতে যাবে একা, বা একটু সাইকেল চালাতে ইচ্ছে করছে, একটা টাইট হাতাকাটা ব্লাউজের সাথে নাভী আর বুকের খাঁজ (cleavage) বের করে শাড়ি পরতে মন চাইছে, অথবা আজ থেকেই বোরকা হিজাব ধরবে?— কাউকে তোয়াক্কা না করে আজই স্বপ্নপূরণ করে ফেল। মনে রেখো, স্বাধীনতা মানে স্ব-অধীনতা, অর্থাৎ নিজের অধীন। তোমার জীবনের সুখের ভার অন্যের মতের উপর ছেড়ে দিও না। মানুষকে জীবনভর এই সুখের সাধনা করে যেতে হয়। জীবনভরই কি তুমি অন্যের জন্য বাঁচবে?


নারী দিবস উপলক্ষ্যে পৃথিবীর সকল নারীর প্রতি রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা। পুরুষের সমান নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক, একটুও কম না একটুও বেশি না।

৮ই মার্চ ২০২১
জাহিদ কবীর হিমন
বার্লিন থেকে
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০২১ ভোর ৪:৫৮
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×