ছবিসুত্র:পল্লিমা গ্রীন
পৃথিবীতে প্লাস্টিক দূষণ এমন এক ভয়াবহ অবস্থায় চলে গিয়েছে, যে কারনে জাতিসংঘ ১০ বছরের সময় সীমা বেঁধে দিয়েছে। অর্থাৎ ২০৩০ এর মধ্যে পৃথিবীর সব দেশগুলোকে প্লাস্টিক বর্জন করতে হবে।
ঠিক এমনি এক সময়ে বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ডঃ মুবারক আহমেদ খানের পলিথিনের বিকল্প পাট থেকে সোনালি বাগের আবিষ্কার প্লাস্টিক বর্জনের এক সম্ভাবনাময় দুয়ার খুলে দিয়েছে। তার আবিষ্কার অর্থাৎ প্লাস্টিকের বিকল্প পচনশীল ব্যাগ যা দেখতে এবং কাজে পলি ব্যাগের মতই কিন্তু শতভাগ পরিবেশ বান্ধব।
প্লাস্টিকের সমস্ত বর্জ্য শেষ পর্যন্ত গিয়ে জমা হয় সমুদ্রে। মাত্র ১ টি কোমল পানীয় কোম্পানীই বছরে ৩ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার করে। প্লাস্টিক দ্রব্যের উপর লেখা থাকে “শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন” কারণ এটা শিশুর মৃত্যু ঘটাতে পারে। কিন্তু মাছেরা লেখা পড়া জানেনা তাই প্লাস্টিক খেয়ে ফেলে। হিমালয়ের এভারেস্ট থেকেও ৪০০০ টন প্লাস্টিক দ্রব্য অপসারণ করেছে নেপাল।
জনাব খানের আবিষ্কার বিশ্বকে প্ল্যাস্টিক দ্রব্যের দূষণ থেকে মানুষ এবং প্রাণীকে বাঁচাতে পারে।
খিলগাঁও পল্লীমা সংসদের অঙ্গসংগঠন "পল্লীমা-গ্রীন ২০১৯ স্বর্ণপদক” ২৮শে জুন ২০১৯ তারিখে বাংলাদেশের এই কৃতি বিজ্ঞানীকে প্রদান করে সন্মানিত করেছে। এই উপলক্ষে অনুষ্ঠানে জনাব খানের সাথে কিছুক্ষণ আলাপ করার সুযোগ হয়েছিল। অমায়িক, নির অহংকার এই লোকের প্রশংসা না করে পারা যাবেনা।
ছবি:ইন্টারনেট থেকে নেয়া
তার কাছেই জানলাম সোনালি ব্যাগ নামটা আমাদের মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর দেয়া। আমি ডঃ মুবারক খান কে জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনার এত বড় আবিষ্কার নিয়ে দেশে তো তোলপাড় হবার কথা। উনি উত্তরে বললেন এটাকে এগিয়ে নিতে প্রচুর ফান্ড বা পুঁজি বিনিয়োগের দরকার। সেটা আশাব্যঞ্জক না। আর মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কাছে তার সরাসরি এক্সেস থাকলে তিনি তাঁর কাছে সহায়তা চাইতেন। উনার প্রয়োজন গবেষণা চালিয়ে যাবার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ইত্যাদি। এর জন্য প্রচুর অর্থ বা বিনিয়োগ দরকার।
বললাম "গন মাধ্যম "? প্রসঙ্গত চলে আসলো আজকে তিনি পাট নিয়ে সুন্দর একটা কবিতার বই লিখলে হয়ত এর চেয়ে বেশি প্রচার পেতেন। আমার ঘনিষ্ঠ কজন বন্ধু বান্ধব উনার নাম বা আবিষ্কার সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। এরকম অনেক আছে। উনার সম্মতি সূচক অভিব্যক্তিতে বুঝে নিলাম।
সমস্যার সাথে সাথে সমাধানের উপায় পৃথিবীতেই রয়েছে, প্রয়োজন শুধু সাধনা আর লেগে থাকা। মনে প্রাণে আশা করি ডঃ মুবারক খানের আবিস্কার বিশ্বকে প্লাস্টিক থেকে রক্ষা করবে। আমাদের দেশ ব্যর্থ হলে অন্য দেশের মাধ্যমে এই আবিষ্কার আলোর মুখ দেখবে।
শুধু জাতি সংঘের ঘোষণার জন্যই প্লাস্টিক বাতিল করতে দেশগুলো ব্যবস্থা নেবে,তা কিন্তু নয়, এটা বাস্তবসম্মত হবেনা ৷ তাই পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষকে সচেতন হয়ে প্লাস্টিক ব্যাগ বর্জন করতে হবে। মানুষ তখনি তা করবে যখন জানবে প্লাস্টিকের কি ক্ষতি এবং হাতের কাছে বিকল্প কি? প্লাস্টিক মুক্ত পৃথিবী তৈরিতে প্রতিটা মানুষের চেষ্টা জরুরী।
ছবি: ইন্টারনেট
বর্তমানে প্লাস্টিকের ব্যবসা হাজার হাজার কোটি টাকার। এদের প্রচুর ক্ষমতা এবং সেই সাথে তারা রাজনৈতিক ক্ষমতারও অধিকারী। স্বভাবতই তারা সোনালি ব্যাগের প্রসার চাইবেনা। তাকে মাথা তুলে দাড়াতে দেবেনা। তাই আমরা নিজেকে দেশ প্রেমিক বলে দাবি করলে অবশ্যই ডঃ খানের মত দেশের সকল হিরোদের পাশে দাড়াতেই হবে। সেই সাথে মানুষকে সচেতন করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া করলে অন্যরা বসে থাকবেনা।
লেখক ঃ ব্লগার মুরশিদ
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২২