তোমায় প্রথম আমি দেখেছিলাম
সেই সেদিনের গণভবনের
ঘনসবুজ ঘাসের চত্বরে। ঢোলা পা’জামা পাঞ্জাবী
আর ‘মুজিব কোট’ ব্র্যান্ড নামের কালো কটি পরিহিত,
তুমি সৌম্য অবয়বে নেমে এসেছিলে পায়ে হেঁটে,
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে, যেন শান্তির এক মূর্ত দেবদূত হয়ে!
দীর্ঘ দেহ আবৃত করা সাদা কালো পোষাকের মতই
মাথাভর্তি তোমার ছিল পরিপাটি আঁচড়ানো কাঁচাপাকা কেশ।
হাতে ধরা পাইপ, ‘এরিন মোর’ এর সুবাস ছড়িয়ে
তুমি কথা বলছিলে আমাদের সাথে, স্নেহের হাসি হেসে।
পৌরুষদীপ্ত কন্ঠে তুমি আমাদের শুনিয়েছিলে আশার বাণী,
তোমার কথাগুলো যেন কানে বেজেছিল শান্তির গান হয়ে।
সেদিন বিকেলে আমরা গিয়েছিলাম তোমায় সম্বর্ধনা জানাতে।
বিশ্ব শান্তি পরিষদ তোমায় দিয়েছিল এক অনন্য সম্মান,
‘জুলিও ক্যুরি’ পদকে তোমায় ভূষিত করে তারা ধন্য হয়েছিল।
তুমি এসেছিলে সেদিন আমাদের মাঝে,
আমাদের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও অভিবাদন গ্রহণ করতে।
সে এক অনন্য স্মৃতি,
শান্তি ও সৌম্যের অনন্য প্রতীক হিসেবে তোমার সে স্মৃতি
আজও আমার মনে চিরভাস্বর, চিরঅম্লান, চির দীপ্যমান।
(১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তি পরিষদ কর্তৃক ‘জুলিও ক্যুরি’ পদকে ভূষিত হবার পর সমগ্র দেশবাসী তাঁর এই সম্মানলাভে গৌরব বোধ করেন। সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকজন এজন্য দফায় দফায় দলভুক্ত হয়ে তাঁর সাথে দেখা করে তাঁকে সম্বর্ধনা জানান। আমি সে সময়ে ছাত্র ছিলাম। আমিও একটি ছাত্র প্রতিনিধিদলের সদস্য হয়ে সেরকম একটি সম্বর্ধনাদলের সাথে গণভবনে গিয়েছিলাম তাঁকে সম্বর্ধনা জানাতে। গণভবনের সবুজ লনে আয়োজিত সেই সম্বর্ধনার সময় হ্যান্ডশেকিং দূরত্ব থেকে তাঁকে দেখে অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছিলাম। সেটাই ছিল তাঁর সাথে আমার প্রথম ও শেষ সাক্ষাৎ। আজ তাঁর শততম জন্মদিনে সেই উজ্জ্বল স্মৃতিকে স্মরণ করে লেখা এ কবিতাটি শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে নিবেদিত হলো।)
মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
১৭ মার্চ, ২০২০
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০২০ রাত ১০:৩৫