গতকাল সন্ধ্যার পর ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ ঘুরে এলাম। হায়রে সে কি ভিড়! প্রায় গায়ে গায়ে লেগে ছিল মানুষ, অন্ততঃ কিছু কিছু জায়গায়। যাহোক, যে বইগুলো কিনতে চেয়েছিলাম, তার একটি কেনা হয়নি সময়াভাবে, বাদ বাকি যেগুলোর স্টল খুঁজে পেয়েছি সহজে, সেগুলো কিনেছি। যেটা কেনা হয়নি, প্রথমে সেটার স্টলটাই পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু যখন শুনলাম যে স্বয়ং লেখক সেখানে উপস্থিত ছিলেন, একটু আগেই খানিক ঘুরতে বেড়িয়েছেন, তখন লেখকের সাক্ষাতেই কিছু আলাপচারিতার পর বইটি কিনবো মনস্থ করে আমিও একটু মেলা ঘুরে দেখতে অন্যত্র গেলাম। ওরা আমার ফোন নম্বর রেখে দিয়ে আমাকে বলেছিল, লেখক ফিরে এলেই আমাকে ফোন দেবে। ওরাও আর ফোন দেয়নি, আমিও ফেরার সময় একটু তাড়াহুড়ো করার কারণে স্টলটাকে পুনরায় খুঁজে পাইনি। সময় স্বল্পতার কারণে অন্য আরেকদিন মেলায় এসে বইটি নিয়ে যাব ঠিক করে বাড়ী ফিরে এলাম।
একই স্টল থেকে 'পরিবেদন' এবং 'শতাব্দী পেরিয়ে' বই দুটো কেনার পর সেই প্রকাশনীর প্রকাশকের সাথে কিছুটা আলাপচারিতা হলো। এক পর্যায়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এবারের বইমেলায় আমার কোন বই বের হয়েছে কিনা। আমি বললাম, এবারে হয়নি, তবে তিন বছর আগে হয়েছিল। আমি লক্ষ্য করলাম, সেই স্টলে একজন মহিলা বসে ছিলেন। আমার কথাটা শুনে তিনি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন আমি সাধারণতঃ কী ধরনের বই লিখে থাকি। 'কবিতার বই' বলাতে উত্তরটা দৃশ্যতঃ তার পছন্দ হলোনা বলে মনে হলো। তিনি একটু নিম্নস্বরে জানালেন, তিনিও লেখিকা, এবারে সেই প্রকাশনী থেকেই তার দুটো বই প্রকাশিত হয়েছে। একটা ইতোমধ্যে স্টলে এসে গেছে (তিনি আমাকে বইটা দেখালেন, নাম 'বৃত্তের বাইরে', তার লেখক জীবনের প্রথম প্রকাশিত বই), অপরটা আরও দুই তিন দিন পরে আসবে। তিনি সাধারণতঃ গল্প ও উপন্যাস লিখে থাকেন, থ্রিলার লিখা ও পড়াও তার পছন্দের বিষয়। 'বৃত্তের বাইরে' এর মোট আটটি গল্পের মধ্যেও একটি থ্রিলার রয়েছে বলে তিনি জানালেন। মনে পড়ে গেল, আমার প্রথম প্রকাশিত বই "গোধূলির স্বপ্নছায়া" যেদিন প্রথম 'জাগৃতি প্রকাশনী'র স্টলে এলো, সেই রাতেই একজন মধ্যবয়সী মহিলা যিনি আমার পাশে দাঁঁড়িয়ে তার পছন্দের কিছু বই কিনছিলেন, 'আমার প্রথম প্রকাশিত বই' কথাটি শুনেই বইটির কোন পৃষ্ঠা না উল্টিয়েই এক কপি কিনে নিয়েছিলেন। আমি তার এ বদান্যতায় ভীষণ আনন্দিত ও অভিভূত হয়েছিলাম। সেই কথাটা মনে করেই আমিও একটি পৃষ্ঠাও না উল্টিয়ে 'বৃত্তের বাইরে' বইটি কিনে ফেললাম। বাসায় এসে কয়েকটি পৃষ্ঠা পড়ে বুঝলাম, আমার অর্থ পানিতে ফেলিনি।
মেলায় প্রায় ঘণ্টা দু'য়েক ছিলাম। এত অল্প সময়ে মেলার কিছুই দেখা হয় না। তাই ভালো ভাবে না দেখে মেলা সম্বন্ধে কোন মন্তব্য করা সমীচীন হবে না। তবে এটুকু বোধহয় বলাই যায় যে এবারে আমার চোখে মেলার ব্যবস্থাপনাকে বেশ শিথিল এবং অগোছালো মনে হয়েছে। পরিবেশ পরিচ্ছন্নতাও আরো উন্নত হওয়া প্রয়োজন। লক্ষ লক্ষ লোক প্রতিদিন মেলায় আসে। তাই হয়তো সকলের স্থান সংকুলান করার জন্য এত বড় জায়গা নিয়ে মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। সেটাতে সমস্যা নেই, তবে জনস্রোত সঠিকভাবে সঞ্চালন করার জন্য সঠিক দিক নির্দেশনার অভাব ছিল। আরও স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দেয়া সমীচীন ছিল। এক স্টল থেকে পঞ্চাশ গজের মত নিকটবর্তী আরেক স্টলের কথা জিজ্ঞেস করলে স্টলের লোকজনকে অপারগতা প্রকাশ করতে দেখেছি, কথা বলতেও অনিচ্ছুক দেখেছি।
ঢাকা
২২ ফেব্রুয়ারী ২০২২ (২২০২২০২২)
২০২২ এর সংগ্রহঃ
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৩৮