somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীল জল শৈশব-৩

১৮ ই নভেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Click This Link

বিলাতী মামা ও অন্যান্য

হাতিয়ায় আমার পিতার বদলীর চাকরীর সূত্রে থাকতাম। কিন্তু অনেকগুলো স্থানীয় পরিবারের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো আমাদের। শুরু করেছিলেন সিংচরের চেয়ারম্যান মাসুদুল হক খান। আমার মা নাকি তাঁর মৃত বোনের মতো। সোজা আমার মাকে বোন ডেকে ফেললেন। এই পরিবারটির কারো কারো সাথে এখনো সম্পর্ক বজায় আছে। তিনি আমার আপন দুই মামার সাথে আমাদের তৃতীয় মামা হয়ে গেলেন। এখন আর বেঁচে নেই তিনি। কী বিচিত্র কারণে আমাদেরকে তিনি ভীষণ ভালো বাসতেন। তাঁর বড়ো ছেলে শোভা খান একটা এনজিওতে কাজ করেন। বোহিমিয়ান টাইপের মানুষ। ভালো গান করেন। তাঁর স্ত্রী বেতারেও গান করতেন এক সময়। এই শোভা খান আমাদের বাড়ীতে দীর্ঘদিন থেকেছেন। আমাদের বাড়ীতে থেকে বিএ পাশ করে গেছেন তিনি। তার ছোটভাই জেবু সোনালী ব্যাঙ্কের উঁচু পদে আছেন। জেবু ভাইয়ের স্ত্রী এখন একটি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব। (শোভা ভাইদের বাড়ী নিয়ে পরে লিখবো বিস্তারিত।)

মাসুদ মামাকে কেন্দ্র করে আমার বহু মামা হয়ে গেলো হাতিয়ায়। কারণ বড়ো কেউ এলেই আমি মামা ডাকা শুরু করতাম ( নতুন কিছু শিখলে শিশুরা যা করে আর কি )। এর মধ্যে একজন এলেন, নাম আফলাতুন। এই নামটি এখনো আমার কাছে আনকমন। আফলাতুন মামা ছাড়া আরেকটি মাত্র আফলাতুন নাম আমার চোখে পড়েছে। তিনি একজন সাংবাদিক ও সাহিত্যিক ছিলেন। মাঝে মাঝে মনে হতো ইনিই সেই আফলাতুন কিনা ? সেটা নানা কারণে যাচাই করা হয়নি। আর হবেও না, কারণ সাহিত্যিক আফলাতুন বেশ আগেই মারা গেছেন। বড়ো হয়ে জেনেছি গ্রীক দার্শনিক প্লেটোর নাম আরবীতে লেখা হয় আফলাতুন।

অন্যান্য নতুন পাতানো মামাদের কথা ভুলে গেলেও বিলাতী মামার কথা মনে আছে। একদিন এলেন এক সেইকালের সাজুগুজু করা ভদ্রলোক। আমি বললাম, মামা আপনি তো খুব সুন্দর ( সাজগোজকে সৌন্দর্য বলে ধরে নিয়েছিলাম) আপনার বাড়ী কোথায় ? তিনি বললেন, বিলাত (ইংল্যাণ্ড)। এরপর থেকে তিনি হয়ে গেলেন আমার বিলাতী মামা। অনেক চেষ্টা করেও তিনি নিজের আসল নাম আমার কাছে গছাতে পারলেন না। আমিও তার আসল নাম জানিনা। সেই সব মামারা কে যে কোথায় আছেন জানিনা। সাগরের নীল জলের ঢেউরাও এর জবাব জানে কিনা জানি না।

দুধের কৌটা, বিস্কুটের টিন............

সেই কালে শিশুদের বিকল্প প্রধান খাদ্য ছিলো গরুর দুধ। টিনের কৌটার দুধ ছিলো আলাদা ফুটানীর মাধ্যম। এখনকার মতো বহুরকমের দুধের কৌটা পাওয়া যেতো না। অল্পকিছু ব্র্যাণ্ড ছিলো- ডানো, বেবিলাক, লা ফ্রিজিয়ানা, অস্টার মিল্ক ইত্যাদি। আমার প্রিয় ছিলো ফুলক্রিম অস্টার মিল্ক। প্রায়ই মায়ের অজান্তে ( সোজা বাংলায় চুরি করে ) খেতাম। হরলিক্সও পাওয়া যেত। আমি পছন্দ করতাম না।

বিস্কুট পাওয়া যেত প্যাকেটের পাশাপশি টিনেও। এসার্টেড বিস্কুট। নাবিস্কোর টিন আমার প্রিয় ছিলো। আজকালকার মতো তখনো বিদেশী বিস্কুটের টিন পাওয়া যেত।

তেল বলতে দোকানের খোলা সরিষার তেল। সয়াবীন মাত্র আসতে শুরু করেছিলো। দাম কম ছিলো। তখন সেটা ছিলো গরীবের তেল। বাদাম তেলের নাম শুনতাম। এটা কি পৃথক কোন তেল না সয়াবীনের ভিন্ন নাম তা বলতে পারি না।

সেদিনকার পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসা বনস্পতি নামে ডালডা আর তাল্লোর গাওয়া ঘি ছিলো সুপার হিট।

তখন শিশুদের পেটের সমস্যার অব্যর্থ মহৌষধ ছিলো উডওয়ার্ডের গ্রাইপ ওয়াটার। সকল ওষুদের ওপর ক্ষিপ্ত থাকলেও গ্রাইপ ওয়াটারের ঝাঁঝালো মিষ্টি স্বাদ আমার খুব প্রিয় ছিলো। এরশাদ আমলের ওষুধনীতির পাল্লায় পড়ে গ্রাইপ ওয়াটার বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হলেও ভারতে বোধহয় এখনো পাওয়া যায়। বছর সাতেক আগে আমার ছেলের জন্য ভারত থেকে একজনের মাধ্যমে আনিয়েছিলাম। (চুপে চুপে বলে রাখি ছেলের সাথে আমারো খুব খেতে ইচ্ছে করছিলো।) (চলবে)
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×