somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের মেলা সংস্কৃতিঃ শহরকেন্দ্রিক নতুন ধারা

২২ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের লৌকিক উৎসবগুলোর মধ্যে মেলা খুবই জনপ্রিয়। আবহমান কালধরে গ্রামীন মেলাগুলো আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাল পরিক্রমায় গ্রামীন মেলাগুলোর বৈভব কিছুটা হারিয়ে গেলেও শহর এলাকায় নতুন আঙ্গিকে মেলা সংস্কৃতি বিকশিত হচ্ছে।
কবে থেকে মেলার সূচনা তার কোন নির্ভরযোগ্য ইতিহাস জানা যায়না। সবচেয়ে পুরনো মেলা হিসাবে খ্রীষ্টপূর্ব ছয় সালে জুলিয়াস সিজারের বিজয় স্মারক হিসাবে আয়োজিত জাঁকজমক পূর্ণ মেলার কথা উল্লেখ করা যায়। আরবের মক্কা নগরীতে দেড় হাজার বছর আগে ওকাজের মেলা ছিল বিখ্যাত। ওকাজের মেলার স্বাতন্ত্র্য ছিলো মেলার অন্যান্য উপকরণের পাশাপাশি কাব্য সাহিত্যের প্রতিযোগিতা। প্রথম বার শ্রেষ্ঠ কবির খেতাব লাভ করেন ইমরুল কায়েস। ওকাজের মেলার শ্রেষ্ঠ কবির খেতাব পাওয়া সাত জন কবিকে ‘সাবা মুয়াল্লাক্কা’ বলে অবহিত করা হয়। এরা হলেন ইমরুল কায়েস, ত্বরফা বিন আল আবদ, যুহায়ের বিন আবি সুলমা, লাবিদ বিন রাবিয়া, আমর বিন কুলসুম, হারিস বিন হিল্লিজা, ও আনতারা বিন সাদ্দাদ।

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলো কবে শুরু হয়েছে তা জানা না গেলেও এগুলো যে শতশত বছেরের পুরনো তাতে কোন সন্দেহ নেই। প্রাচীন মেলাগুলোতে ধর্মীয় আবহ সুস্পষ্ট। রাজা, বাদশাহ বা নবাবরা খাজনা আদায়ের জন্য “রাজপূণ্যাহ”র নামে মেলার আয়োজন করতেন। মেলায় গ্রামীন জনপদের মানুষের সমাবেশের পাশাপাশি উৎপাদিত শস্য, কৃষি উপকরন, গৃহস্থালীর উপকরন ইত্যাদি বেচা কেনার ব্যবস্থা থাকতো। আর ছিলো শিশুদের বিনোদনের ব্যাপক আয়োজন।

বাংলাদেশের প্রচলিত মেলাগুলোকে কবি ও গবেষক সাইমন জাকারিয়া সাতটি শ্রেনিতে বিন্যাস্ত করেছেন ০১। ধর্মীয় উপলক্ষে অনুষ্ঠিত মেলা, ২। কৃষি উৎসব উপলক্ষে অনুষ্ঠিত মেলা, ৩। ঋতু ভিওিক মেলা, ৪। সাধুসন্তের ওরস উপলক্ষে ফকির মেলা, ৫। জাতীয় জীবনের বিভিন্ন বরেন্য ব্যক্তি যেমন কবি-সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, দার্শনিক ইত্যাদির স্মরনোউৎসব উপলক্ষে স্স্মারক মেলা, ৬। জাতীয় দিবস সমূহ উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক মেলা, ৭। বাণিজ্যিক সামগ্রী প্রদর্শনী ও বিক্রয় মেলা।

নিদিষ্ট স্থান ও তারিখে মেলাগুলো প্রতিবছর আয়োজিত হয়। একদিন থেকে একমাস পর্যন্ত হতে পারে মেলার স্থায়িত্ব। নদীতীর, বট পাকুড়ের চত্বর, ধানের ক্ষেত, মঠ মন্দির বা মাজার প্রাঙ্গন, স্কুল কলেজের মাঠ প্রভৃতিস্থানে আয়োজিত হয় মেলাগুলো। কিছু কিছু মেলা আছে যে গুলো প্রায় সারা দেশে আয়োজিত হয়। যেমন- বৈশাখী মেলা, চৈত্রসংক্রান্তির মেলা, রাস মেলা, রথের মেলা ইত্যাদি।
সাইমন জাকারিয়া উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশে ৬২ টি মেলা বসে রথযাত্রা উপলক্ষে এবং সারদীয় দৃর্গাপুজা উপলক্ষে ৭৩ টি মেলা বসে। বাংলাদেশে মেলার প্রধান মৌসুম হলো শীতকাল। হেমন্তের ধান কাটা শেষে পাওয়া অবসর আর আরামদায়ক আবহাওয়া হচ্ছে এর মূল কারণ। মোকাবরম হোসেনের মতে, বাংলাদেশে পৌষ মাসে ১০৭ টি এবং মাঘ মাসে ১৪৮টি মেলা বসে। “আইন-ই-আকবরী” তে বলা হয়েছে, এদেশে এমন কোন গ্রাম নেই যেখানে মেলার ধুম পড়ে না। ১৯২১ সালে জনস্বাস্থ্য বিভাগের তৎকালীন পরিচালক সি.এ. বেল্টলি তার “ফেয়ার এন্ড ফেস্টিভ্যাল ইন বেঙ্গল” গ্রন্হে বাংলার প্রায় সাড়ে সাত হাজার মেলার বিররণ দিয়েছিলেন। ১৯৮৩ সালে বিসিক কর্তৃক পরিচালিত জরিপে বাংলাদেশে ১০০৫ টি মেলার সন্ধান পাওয়া যায়। কোনো কোনো গবেষকের মতে এখন বাংলাদেশে দশ হাজার মেলা বসে। সংখ্যা যাই হোক বাংলাদেশে এখন নিয়মিত গ্রাম শহরে মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।

নতুন ধারার শহুরে মেলা

গ্রামীণ মেলাগুলো টিকে থাকলেও তার চরিত্র বদলে গেছে। কৃষি সমাজের আর্থিক প্রয়োজনে নিজেদের উৎপাদিত ফসল ও পণ্য বেচাকেনার হার কমে এসেছে। তার বদলে শহর থেকে কেনা পণ্যের বেচাকেনা বেড়ে গেছ। গ্রামীণ মেলার পাশাপাশি শহরের বিনোদনের আয়োজন চোখে পড়ে। আবার গ্রামীণ ধাঁচের মেলা বসানোর একটা চল শুরু হয়েছে শহরগুলোতে। বাংলা একাডেমি চত্ত্বরে ১৫ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা বসছে। এর সাথে প্রধানত সরকারি উদ্যোগে নতুন ধারার মেলার প্রচলন হয়েছে। এতে বেসকারি অংশগ্রহণ ও উদ্যোগও লক্ষ্যণীয়। নতুন ধারার মেলাগুলো নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা যাক।

অমর একুশে গ্রন্হ মেলা

নতুন ধারার শহুরে মেলার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত মেলা বাংলা একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্হ মেলা। জনসাধারণ একে বলেন, বইমেলা। আর একধাপ এগিয়ে বলা হয়, বাঙ্গালির প্রাণের মেলা। বাংলা একাডেমি মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খাঁন এর মতে বাংলাদেশে প্রথম বই মেলার আয়জোন করেন জাতীয় গ্রন্হ কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক ও কথা সাহিত্যিক সরদার জয়েন উদদীন। ইউনেস্কোর একটি প্রকল্লের কাজ শেষে শিশুদের বই নিয়ে ১৯৬৫ সালে কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির (বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি) নিচ তলায় একটি বই মেলার আয়োজন করেছিলেন। এরপর তিনি ১৯৭০ সালে নারায়নগঞ্জ ক্লাবের সহযোগিতায় নারায়নগঞ্জ একটি বই মেলা আয়োজন করেন। সেই বই মেলা উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় অংশ নিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের তৎকালীন অধ্যক্ষ অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুল ইাই, অধ্যাপক মুনির চৌধুরী, সরদার ফজলুল করিম। ১৯৭২ সালে সরদার জয়েন উদদীন জাতীয় গ্রন্হকেন্দ্রের পরিচালক ছিলেন। ইউনেস্কো ১৯৭২ সালকে আন্তর্জাতিক গ্রন্থবর্ষ ঘোষণা করে। সে উপলক্ষে তিনি বাংলা একাডেমিতে আন্তর্জাতিক বই মেলার আয়োজন করেন ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে। ১৯৭২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমিতে কোন বই মেলা হয়নি। তবে বাংলা একাডেমির দেয়ালের বাইরে স্টান্ডার্ড পাবলিশার্সের রুহুল আমিন নিজামী সোভিয়ত ইউনিয়নের প্রগতি প্রকাশনির কিছু বই নিয়ে বসেন। মুক্তধারার চিওরঞ্জন সাহা এবং বর্ণ মিছিলের তাজুল ইসলাম নিজেদেরে প্রকাশনীর বই নিয়ে বসেন। শামসুজ্জামান খাঁনের এই মতের সাথে ভিন্নমত পাওয়া যায় উইকিপিডিয়াতে। ১৫ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে দি নিউ এইজ পএিকায় প্রকাশিত মাহফুজ সাদিকের প্রবন্ধের বরাতে বলা হয়েছে, যতদুর জানা যায়, ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ৮ ফেব্রুয়ারির চিত্তরঞ্জন সাহা বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গনে বটতলার একটুকরা চটের উপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে বই মেলার গোড়াপওন করেন। শামসুজ্জামান খাঁন বলেন, ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন অনুস্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। সম্মেলন উপলক্ষে চিত্তবাবুসহ সাত আটজন প্রকাশক বাংলা একাডেমির ভেতরে পূর্বদিকের দেয়াল ঘেঁষে বই নিয়ে বসে যান। সে বারই প্রথম একটি স্টলে বাংলা একাডেমির বই বিক্রি হয়। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে চিওরঞ্জন সাহার সাথে অন্যান্য প্রকাশকরাও অংশ নিতে শুরু করেন। ১৯৭৮খ্রিস্টাব্দে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক ড. আশরাফ সিদ্দিকী বই মেলার সাথে বাংলা একাডেমিকে যুক্ত করেন। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি বই মেলার সাথে যুক্ত হয়। ১৯৮৩ সালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কাজী মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে গ্রন্হমেলার আয়োজন সম্পন্ন করেন। কিন্তু ছাত্র আন্দোলনের কারণে শেষ পর্যন্ত সেই বছর বইমেলা আর হয়নি। ১৯৮৪ সালে সাড়ম্ববে বই মেলা শুরু হয়। কালের বিবর্তনে সেই বইমেলাই আজকের বিশাল বইমেলায় পরিণত হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে বই মেলা সোহরাওয়াদী উদ্যানে সম্প্রসারিত হয়েছে। বই মেলাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ প্রকাশনা শিল্প একটি শক্তিশালী ভিত্তি পেয়েছে। লেখক পাঠক প্রকাশকের এক বিপুল সমাবেশ এখন বাংলা একাডেমির প্রাণের বই মেলা । বই মেলায় প্রবেশের জন্য কোন ফি দিতে হয় না।

শিশু একাডেমির বই মেলা

২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ শিশুএকাডেমি প্রতি বছর শিশু একাডেমিতে শিশুদের বইয়ের মেলার আয়োজন করছে। প্রতিবছর বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ২০ শে মার্চ মেলা শুরু হয়। ২৬ মার্চ পর্যন্ত ৬দিন এই বইমেলা চলে। ২০১৯ সালের বই মেলায় ৭০টি প্রকাশনা সংস্থা অংশ নিয়েছে। শিশু একাডেমির প্রাঙ্গনে বই মেলাটি অনুষ্টিত হয় ।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা

১৯৯৫ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর আয়োজনে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখন প্রতি বছর ১ জানুয়ারী থেকে মাসব্যাপী এই বাণিজ্য মেলা ঢাকার শেরে বাংলানগরে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বাণিজ্য মেলা চলে। টিকেটের বিনিময়ে সবাইকে মেলায় প্রবেশ করতে হয়। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ইরান, জাপান, চীন, যুক্তরাস্ট্র, বৃটেন, অস্ট্রেলিয়া জার্মানীসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নেয়। দেশী ও বিদেশী পণ্যসামগী প্রদর্শন, রপ্তানি বাজার অনুসন্ধান এবং দেশি বিদেশি ক্রেতার সাথে সংয়োগ স্থাপনের ক্ষেত্রে এই মেলা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

বিজ্ঞান মেলা

১৯৭৮ সাল থেকে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের আয়োজনে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ ও বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথমে আঞ্চলিক পর্যায়ে প্রতিটি মেলায় স্কুল,কলেজ ও বিজ্ঞান ক্লাবের সদস্যগণ প্রতিযোগিতা মুলক বিজ্ঞান বিজ্ঞান সম্পর্কিত উদ্ভাবনী প্রকল্প নিয়ে প্রদর্শনীতে অংশ নেন। সকলগ্রুপে জেলা পর্যায়ে ১ম স্থান লাভ কারীগণকে নিয়ে ঢাকার কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ ও বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করা হয়।

শিশু মেলা

গণযোগাযোগ অধিদপ্তর প্রতিটি জেলার একটি করে উপজেলায় এবং ৪টি পার্বত্য উপজেলায় দুই দিনব্যাপী শিশু মেলার আয়োজন করে। একটি প্রকল্পের আওতায় শিশু অধিকার সম্পর্কে সচেতনা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মেলার আয়োজন করা হয়। শিশুদের জন্য নানাধরণের প্রতিযোগিতার পাশাপাশাশি শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যসম্ভার নিয়ে স্টল থাকে।

উন্নয়ন মেলা

সরকারের গৃহীত উন্নয়ন কার্যক্রম জনসাধারণের মাঝে তুলে ধরার জন্য ২০১৫ খ্রীষ্টাব্দ থেকে সারাদেশে ৩ তিন ব্যাপী উন্নয়ন মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। প্রতিটি জেলায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তর তাদের উন্নয়ন কার্যক্রম প্রদর্শন করে এ মেলায় । ঢাকায় অনুষ্ঠিত উন্নয়ন মেলার সকল মন্ত্রণালয় ও দপ্তর অংশগ্রহণ করে।

আয়কর মেলা

জনগকে আয়কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করার জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীন সম্পদ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ববোর্ড আয়কর মেলার আয়োজন করছে। ২০০৮ সালে প্রথমে আয়কর দিবস পালিত হয়। ২০১০ সাল থেকে আয়কর মেলা চালু হয়। সহজে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা যায় বলে দেশব্যাপী আয়োজিত আয়কর মেলার করদাতারা বিপুল সংখ্যায় অংশ গ্রহন করেন।

বৃক্ষ ও পরিবেশ মেলা

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে সচেতনা বৃদ্ধি এবং পরিবেশ রক্ষাসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভূমিকা রাখার জন্য বৃক্ষ রোপনকে উদ্ধুদ্ধ করার জন্য প্রতিবছর কেন্দ্রীয়ভাবে মাসব্যাপী বৃক্ষ মেলা এবং সপ্তাহ ব্যাপী পরিবেশ মেলার আয়োজন করে বন অধিদপ্তর এবং পরিবেশ অধিদপ্তর। সারাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বৃক্ষ মেলা আয়োজন করা হয়।

পাট মেলা

বস্ত ও পাট মন্ত্রণালয় প্রতিবছর ৬ মার্চ জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষে পাট মেলার আয়োজন করে। পাটের বহুযুগী ব্যবহরের মাধ্যমে পাট ও পাটজাত পন্যকে জনপ্রিয় করাই এ মেলার উদ্দেশ্য। উল্লেখ্য পাটজাত পণ্য পরিবেশ বান্ধব।

জাতীয় ফল মেলা

কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর খামার বাড়িতে ৩ দিন ব্যাপী জাতীয় ফল মেলা আয়োজন করে। সরকারি বেসরকারি প্রতিস্ঠান ফল মেলায় ফল প্রদর্শন ও বিক্রি করে।

জাতীয় মৌ মেলা
মধু চাষীদের উদ্বুদ্ধ করন মধু উৎপাদন ও রপ্তানিকে উৎসাহিত করতে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর প্রতিবছর খামার বাড়িতে জাতীয় মৌ মেলার আয়োজন করে।

মধুমেলা

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে মৌচাষ প্রকল্পের আওতায় ঢাকায় ৫ দিন ব্যাপী মধু মেলা আয়োজন করে। ২০১৯ সালে বিসিকের সাথে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারর্সিটি যৌথ ভাবে মধু মেলা আয়োজন করে। বিসিক ১৯৭৭ সাল থেকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মৌচাষের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

মধুমেলা

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি বছর ২৫ জানুয়ারী যশোরের সাগরদাঁড়িতে আয়োজন করা হয় মধু মেলা। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃস্ঠপোষকতায় জেলা প্রশাসন মধু মেলা আয়োজন করে। আগে স্হানীয় ভাবে মধুমেলা আয়োজন করা হত। মধুসূদন দত্তের সাহিত্য নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি আবৃওি, নাটক, যাএা, নৃত্য ইত্যাদির আয়োজন করা হয়।

মধুমাসে বন্ধু মেলা

কুয়াকাটা স্ট্যুারিস্ট সেন্টার ২০১৭ সাল থেকে মধুমাসে বন্ধু মেলার আয়োজন করছে । বাহারি সুস্বাদু দেশী ফলের সমাহার, গান, গল্প, পর্যটক বন্ধুদের আড্ডার মাধ্যমে দিন ব্যাপী মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

মধুর মেলা

কন্ঠশিল্পী ও সংসদ সদস্য মমতাজ তাঁর প্রয়াত পিতা মধুবয়াতির স্মরণে ২০১৬ সাল থেকে তাঁর নিজ গ্রাম মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার ভাকুম গ্রামে ৩ দিন ব্যাপী মধুর মেলার আয়োজন করছেন, এতে স্হানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বাউল শিল্পীরা ভাবগান, পালাগান ইত্যাদি পরিবেশন করেন।

জসীম পল্লী মেলা
পল্লিকবি জসীম উদ্দীন স্মরণে প্রতিবছর ১৩ জানুয়ারি কবির জন্মদিনে তার জন্মস্হান ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে কবির বাড়ির সামনে কুমার নদের পাড়ে মাস ব্যাপী জসীম পল্লী মেলা আয়োজন করে জসীম ফাউন্ডেশন। গ্রামীন সংস্কৃতির নানা উপকরণ, প্রদর্শন, বিক্রি এবং শিশুদের বিনোদনের জন্য ব্যাপক আয়োজন করা হয় মেলায়।

অন্যান্য শহুরে মেলা

উপরে উল্লিখিত মেলাগুলো ছাড়াও নড়াইলে শিল্পী এস,এম সুলতান স্মরণে সুলতান মেলা, কবি রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ স্মরণে ঢাকায় রুদ্র মেলা, দেশী বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য শিক্ষা মেলা, ল্যাপটপ মেলা, মোবাইল মেলা, চ্যানেল আই প্রকৃতি মেলা,চাকুরি মেলা, হজ্ব মেলা,ফকির লালন শাহর স্মরণে ছেউড়িয়ার লালন মেলা, সুনামগঞ্জে কবি হাসন রাজা স্মরণে হাসন মেলা, শিলাইদহে রবীন্দ্র মেলা, দরিরামপুরে নজরুল মেলা, চট্রগ্রামের মাইজভান্ডারী মেলা, ভারত বাংলাদেশের মিলন মেলা , পিঠা মেলা, কৃষিপ্রযুক্তি মেলা, সবজি মেলা, পাখি মেলা, পর্যটন মেলা, কম্পিউটার মেলা, বিবাহ মেলা, ইত্যাদি বিচিত্র বিষয় মেলার আয়োজন করা হয়।

সমাপনী

আদিতে মেলার মূল উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় ও বাণিজ্যিক। আধুনিক শহুরে মেলার মূল উদ্দেশ্য বাণিজ্য এবং প্রচার। সরকারি মেলাগুলো সরকারের কর্মসুচির প্রচার, জনসচেতনা বৃদ্ধি, উৎসাহ প্রদান ইত্যাদি উদেশ্যে আয়োজিত হয়। বাকি মেলাগুলোর মূল প্রবনতা বাণিজ্যিক। সাথে থাকে বিনোদন আর খাবারের ব্যবস্থা। গ্রামীন মেলাগুলো ধর্মীয় তিথি আর শীত কালের আরাম দায়ক আবহাওয়ার ভিত্তিতে আয়োজিত হতো। শহুরে মেলাগুলো কিছু নির্দিষ্ট তারিখে হয়। এছাড়া বাকী সব মেলা সারা বছর ধরে আয়োজিত হয়। কিন্তু যখন যেভাবে আয়োজিত হোক না কেন সেগুলোতে নগরবাসী ব্যাপকহারে অংশ নেন। মেলা এখন নাগরিক সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।

তথ্য সূত্রঃ
১.বাংলাদেশের মেলা -সাইমন জাকারিয়া
২.বাংলাদেশের মেলা সংস্কৃতি-ড. মো. হুমায়ুন কবীর।
৩.বাংলাদেশের লোক মেলা- মামুন তরফদার।
৪. বাংলাদেশের মেলা সঞ্জয় সরকার।
৫। বই মেলার ইতিহাস ও নতুন আঙ্গিকে বই মেলা- শামসুজ্জামান খান।
৬। বাংলার মেলা অনন্য চালচিত্র আবুল আহসান চৌধুরী
৭। বাংলাদেশের মেলা –মোকাররম হোসেন
৮। উইকিপিডিয়া
৯। বিভিন্ন দপ্তরের ওয়েব সাইট
১০। বিভিন্ন পত্র পত্রিকার অন লাইন সংস্ককরণ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৯:০২
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×