somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাপ থেকে বেঁচে থাকার আল্লাহ প্রদত্ত ১০০ দিনের কর্মসূচী (ভাগঃ ১)

১৫ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ তায়া'লার যিনি আমাদের নিয়ামত হিসাবে দিয়েছেন সৎকাজের বিভিন্ন মৌসুম। আমরা প্রশংসা করি তাঁর অফুরান নেয়ামতের জন্য। শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি তাঁর অঢেল করুণার জন্য। দরুদ ও সালাম হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি যিনি নামজ ও রোজা আদায়কারীদের মধ্যে ছিলেন সর্বোত্তম। যিনি তাহাজ্জুদ ও কিয়ামুল লাইল সম্পদনকারীদের মধ্যে ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। মহান আল্লাহ তাঁর প্রতি রহমত ও বরকত নাযিল করুন। তাঁর সাহাবাদের প্রতিও রহমত বর্ষণ করুন। তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এবং আগামীতে তথা যতদিন পৃথিবীতে আলো অন্ধকার থাকবে, ততদিন যারাই তাঁর অনুসরণ করবে তাদের সবার প্রতি বর্ষিত হোক মহান আল্লাহর অফুরান রহমত।
আজকের আলোচ্য বিষয় পাপ থেকে বেঁচে থাকার জন্য মহান আল্লাহ প্রদত্ত ১০০ দিনের প্রশিক্ষণ ও অনুশিলন সংক্রান্ত প্যাকেজ কর্মশালা।

ইসলামে রমদান মাসকে বলা হয় প্রশিক্ষণের মাস। অতপর পরবর্তী দুই মাসকে আমি চিহ্নিত করছি প্রশিক্ষণ পরবর্তী অনুশিলনের সময়। অর্থাৎ রমদান মাস প্রায় ৩০ দিন প্রশিক্ষণ এবং পরবর্তী শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ্ব মাসের ১০ দিন এই প্রায় ৭০দিন সর্বমোট প্রায় ১০০ দিন পাপ থেকে বেঁচে থাকার একটি প্যাকেজ কর্মশালা।

আমরা যদি ১লা রমদান থেকে ১০ই জিলহজ্ব পর্যন্ত (প্রায়) ১০০ দিনের প্রতি আমরা লক্ষ্য করি তাহলে আমরা দেখতে পাই বছরের অধিক সংখ্যক নিয়মত এবং মাগফিরা ও নাজাতসহ মুমিনের মুক্তির অছিলা সংক্রান্ত আল্লাহ প্রদত্ত অফারগুলো এই সময়ই বেশী রয়েছে।
রমদানের প্রধান শিক্ষা হলো অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ না করা এবং নারী পুরুষের অবৈধ মেলামেশা অর্থাৎ জেনা থেকে বিরত থাকা। কারণ রোজার প্রধান হক হলো একজন মুমিন ব্যাক্তি রমদানের দিনগুলোতে আহার ও সহবাস থেকে বিরত থাকবে। রমদানের রাত্রিতে রাত জেগে জেগে মুমিন ব্যাক্তি নামাজের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে। যেমন- নামাজ দীর্ঘ কেরাতে পড়া, ধীরস্থিরভাবে আদায় করা, নামাজের মধ্যে একাগ্রতা আনা এবং সর্বপরি নামাজকে সুন্দর করে সাজানোর সার্বিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও আয়ত্ব করা। পাশাপাশি রমদান ব্যাতিত অন্য মাসের রাত্রিতে নামাজ আদায়ের অভ্যাস গড়ার প্রশক্ষণ করা। রমদানের রোজা থাকি, আমাদের কষ্ট হয় কিন্তু আমরা নামাজ আদায় করি। ইফতার করার পর শরীর ক্লান্ত হয়ে যায় তবু আমরা মাগরিবের নামাজ আদায় করি। অতপর আরাম করতে ভাল লাগে এই মূহর্ত শেষ হওয়ার পূর্বেই আবার ইশাসহ তারাবী নামাজ আদায় করতে হয়। এটি আমাদের যা শিক্ষা দেয় তা হলো কষ্ট ও বিপদের সময় নামাজ আদায় করতে হবে, শরীর ক্লান্ত থাকলেও নামাজ আদায় করতে হবে এবং সুখ বা আরামের সময়ও নামাজকে ভুলে থাকার সুযোগ নাই।
রমদানে সেহেরীতে জাগ্রত হওয়ার প্রশিক্ষণ হলো- একজন মুমিন ব্যাক্তি বিশেষ প্রয়োজনগুলো রাত্রির শেষ অংশে জাগ্রত হয়ে সাধ্যমত কিছু নামাজ আদায় করে দোয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহর দরবারে নিবেদন পেশ করবে। কারণ মহান আল্লাহ তা'য়ালা রাত্রির শেষ অংশে প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দার দোয়া পাওয়ার জন্য আহবান করতে থাকেন।
এছাড়াও একজন মুমিন রমদানে দৈনিক ভিত্তিতে আরও যেসকল প্রশিক্ষণ গ্রহণ তা হলো- মিথ্যা কথা না বলা, গিবত না করা, বিভিন্ন পাপ থেকে বিরত থাকা, অন্যায় আচরণ না করা, ঝগড়া-ফেসাদে না জড়ানো ইত্যাদি।
রমদান মাসের রোজা পালনের সাথে সাথে কুরআন তেলাওয়াত, কুরাআনের চর্চা, অর্থ জানা, কুরআনের প্রচার এবং কুরআনের আয়াত নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কারণ রমদান মাসে আল কুরআন নাজিল হয়েছে বিধায় অন্যান্য মাসের তুলনায় রমদান মাসের মর্জাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া এ মাসে হযরত জিবরাইল আঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামও হযরত জিবরাইল আঃ কে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। এভাবে একজন মুমিন ব্যাক্তি পূর্ণ রমদান (প্রায় ৩০দিন) উপরোল্লিখিত বিষয়গুলো দৈনিক ভিত্তিতে প্রশক্ষণ গ্রহণ করবে।

অতপর রামদান পরবর্তী শাওয়াল মাসে ৬টি রোজা আদায়ের জন্য বিশেষ অফার রয়েছে। তা হলো শাওয়াল মাসে ৬টি রোজার মাধ্যমে সারা বৎসর রোজা পালনের সওয়াব অর্জিত হয়। পাশাপাশি জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ অর্থাৎ আরাফার দিবসের রোজার মাধ্যমে ২ বৎসর গুনাহের কাফ্‌ফারাহ ঘোষণা রয়েছে। ২ বৎসর গুনাহের কাফ্‌ফারাহ হলো চলতি বৎসর এবং আগামী বৎসরের গুনাহের কাফ্‌ফারাহ।

প্রিয় পাঠকগণ, আপনাদেরকে বিশেষভাবে অবগত করতে চাই যে, এই ১০০ দিনের কর্মসূচীর মধ্যেই রয়েছে লাইলাতুল কদর অর্থাৎ এক রাত্রির ইবাদত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আরও রয়েছে বছরের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ১০ রাত্রি অর্থাৎ রমদানের শেষ ১০ রাত্রি এবং বছরের শ্রেষ্ঠ ১০ দিন অর্থাৎ জিলহজ্ব মাসের প্রথম ১০ দিন।
এভাবে একজন মুমিন ব্যাক্তি পাপ থেকে বেঁচে থাকার জন্য পূর্ণ রমদান প্রায় ৩০দিন প্রশিক্ষণ এবং শাওয়াল ও জিলকদ দুই মাস এবং জিলহজ্ব মাসের ১০ দিন প্রায় ৭০ দিন প্রশিক্ষণ পরবর্তী অনুশিলনের মাধ্যমে সর্বমোট প্রায় ১০০ দিনের বিশেষ কর্মশালা সম্পন্ন করবে।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:৩২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×