সেই রাত বসন্তের প্রথম রাতে ছিল সেই রাত, সেই রাত পূর্নিমা ছিল সেই রাতেরূপালী চাদ ছিল। সেই রাতে তুমি আর আমি ছিলাম। আমাদের বাসর রাত ছিল। ছেলেমানুষী ছিল- ছিল রহস্য, ছিল তোমার মায়াবী মুখ আর আমাকে ভালবাসার ইচ্ছা। আমি ছিলাম তুমি ছিলাম আর ছিল সেই এক মায়াবী সময়স্হির রাত।
হাসির ব্যাপার হলো আমার আর তোমার ছিলনা কোন মিল তবু আমরা ছিলাম। তুমি হাসতে ভালবাসো, তোমার হাসি পেতে সব কিছুতে, আমাদের বাড়ীর কাজের লোকের মোখলেসের বাজার থেকে ৫ টাকা চুরির প্রয়াসে তোমার পেতো হাসি, বকা দেবার বদলে তুমি হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যেতে মোখলেসে রং মাখা মিথ্যায় আর আমি ছিলাম রাম গরুড়ের ছানা হাসতে তাদের মানা-আমার হাসি হাসতো না কিছুতেই - কাঠ চিমসা ভান্গা মুখে আমি প্রশ্ন করতাম জীবনে আনন্দের এতো কি আছে যে হাসি আসে আমাদের। আমাদের হাসির এ যোজন যোজন পার্থক্য ছিল। তুব আমরা ছিলাম আমাদের ভালোবাসা ছিল- তুমি খিলখিলিয়ে হেসে পুষিয়ে দিতে আমার যত বিষন্নতাকে- সময়কে পুরিয়ে দিতে আনন্দ দিয়ে।
মনে আছে, হিন্দি সিনেমা দেখে তুমি কাটাতে ছুটির দুপুরের অবসন্ন সময়। হাজার বার দেখেছিল- " দিল ওয়ালে দুলহানে লেন্গে যায়কে" সিনেমাটি তারপর হাজার ব্যবহারে জীর্ন ডিভিডি মেশিনে ঢুকিয়ে দেখতে চাইতে। মাঝে মাঝে অনুযোগ করতে দেখার জন্য আমার সাথে। না আমি ব্যস্ত ছিলাম অন্য কিছু নিয়ে- ওয়াল ষ্ট্রীট জার্নালের জাপানী ইয়েনের ক্রমবর্ধমান বাড়ার কারন বোঝার চেষ্টা করছি তখন তোমার সেই রূপালী স্বপ্নে মোড়া বায়স্কোপ দেখার সময় কই? একটা দুপুরও তোমাকে দেইনি- তুমি একলা একলা দেখেছো রূপালী বায়স্কোপ হাজার বার- কেদেছো অনেক বার- সেদিন ভেবেছিলাম বায়স্কোপের বিরহে তোমার অশ্রু, তবেসেই অশ্রু আজ মনে হয় বায়স্কোপের মিলন মেলার জন্য ছিলনা। সেই অশ্রু ছিল দুলহান না হবার জন্য- সে অশ্রু ছিল আমার সাথে না বসে একটা দুপুর না কাটানোর জন্য- অশ্রুর সেই নোনা জল ছিল আমাদের জন্য।
নোনা জলের সমুদ্রের পরেই নাকি কলম্বাস পেয়েছিল সোনার দেশ আমেরিকা। তোমার নোনার জলের পরে এসেছিল নোনা জল। আমাদের ছিল অনেক অমিল। তুমি আনন্দের জন্য বেচে থাকতে আর আমি বাচার জন্য বেচে থাকতাম। আমাদের জীবন দর্শন ছিল ভিন্ন। তুমি সমুদ্র তীরে পুর্নিমা রাতে হাটতে পছন্দ করতে আর আমি পায়ে বালি বাচিয়ে হাটবো কি করে সে চিন্তায় নিজেকে করতাম জেরবার। সমুদ্রের ঢেউ গুনবার অসম্ভব কাজে তুমি নিজেকে ব্যস্ত করতে তারপর একসময় ক্লান্ত হয়ে হাসতে। আর আমি সমুদ্রের নীল জল ভেজা বালি বাচিয়ে মুখ কুচকিয়ে ভাবতাম আর কতবেলা থাকতে হবে এখানে?
জীবন যদি হয় একটি বেলা- আজ আমাদের বিবাহের হলুদ দুপুর। বেগুনির প্রত্যাশার ভোর শেষ হয়েছে অনেক আগে , নীল সকাল গত হয়েছে। আদ্দেক জীবন কেটে গেলো বুড়ী তোর সাথে- কখনো সুখে কখনো দুখে। কখনো আনন্দে কখনো বা বিষন্নতায়। তবে সময় কাটেনি একসাথে আর যা কিছু আক্ষেপ সেখানেই। আজ যদি তুমি রান্না ঘর থেকে মাংসের ঝোল হয়েছে বলে সুরুয়ার চামিচ নিয়ে কাছে আসো তবে সুরুয়ার টুকু লেপে দেবো তোমার ঠোটে - মুখ গম্ভির করে বলবনা লবন কি বাজারে সস্তা যাচ্ছে নাকি? দিলওয়ালে দুলহানে বায়স্কোপ দেখব তোমার সাথে তিন ঘন্টা ধরে মাঝখানে বলব আরে এক কাপ চা খাওয়া তো- সিনেমার রিসেসের মতো কিচেনে গিয়ে তোমার সাথে বানাবো ভাজা পোড়া তারপর সস আর ফানটা দিয়ে খাবো- দেখবে বুড়ী তোর রূপালী বায়স্কোপ।
বুড়ী বেগুনি ভোর গেছে তোর হাত ধরেনি তোকে বলা হয়নি ভালোবাসি। নীল সকালে তোকে উপহার দিয়েছি নীল বিষন্নতা- বুড়ী তোকে বলা হয়নি ভালবাসি। আজ আদ্দেক জীবনের হলুদ দুপুরে আর দেরী নয়- বুড়ী তোকে ভালবাসি- ফর বেটার অর ফর ওয়ার্স; ফর রিচার অর পুওরার আমি ফিরে যেতে চাই সেই বসন্তের প্রথম রাতের রূপালী রাতে- সেই রাত মনে আছ বুড়ি। তুমি আর আমি এক মায়াবী রূপালী রাত। আজ বাকী আদ্দেক জীবনের ভালোবাসা শূরু হোক আরেক পূর্নিমায়- আজকের পুর্নিমার চাদ নাকি সবচেয়ে বড় তাই আমাদের আদ্দেক জীবনের ভালবাসা শুরু হোক সবচয়ে বড় চাদে।
বুড়ি আজ বলা হউক তোকে ভালবাসি- ভালোবাসার এ রূপালী রাত ফিরে আসে যেন বারবার।